বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০০৮

অনুঘটক: এক যথার্থ সামাজিক অনুঘটক

অনুঘটক পত্রিকাটি পাঠ করলাম। ১ম বর্ষ ১ম সংখ্যা আগস্ট ২০০৮ শ্রাবণ ১৪১৫ সংখ্যা। বর্ণনা হিসেবে 'শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা' বিশেষণ প্রয়োগ যে একেবারে যথার্থ হয়েছে, তা পত্রিকার আগাগোড়া পাঠ শেষে অনুভব করলাম।

বৈশ্বিক সংকটকে বিশ্লেষণ এবং তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সমস্যাগুলির স্বরূপ উপলব্ধি যে ভিন্নমাত্রার আলোচনার বিষয় নয়, তা বুঝতে পত্রিকাটি সত্যিই অনুঘটকের কাজ করেছে। বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্যক্ষুধা গ্রাস করতে চলেছে সারা পৃথিবীর শক্তিহীন জনগোষ্ঠীকে। বাংলাদেশও এদের সর্বব্যাপী থাবার নিচে বসে আছে। আমাদের দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা, সংকীর্ণতার সুযোগ তারা ব্যবহার করছে পুরোমাত্রায়। ফলে মানুষ থেকে যাচ্ছে নিরন্ন, হচ্ছে শোষিত। সম্পাদকীয়তে বিষয়টাকে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। প্রকাশক ও সম্পাদক সাবিনা আফজা হক কিছুটা দ্বীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছেন -
গভীর এক সংকট চলছে বিশ্বজুড়ে। চেষ্টা চলছে গোটা পৃথিবীতে বহুজাতিক কোম্পানি ও তাদের দোসর শাসক সম্প্রদায়ের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার। গ্লোবালাইজেসন বা বিশ্বায়নের নামে দেশে দেশে আধিপত্যবাদী সম্প্রদায়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আবার এর বিপরীতে নানা দেশে সচেতন মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশও পরিচালিত হচ্ছে। আবার এর বিপরীতে নানা দেশে সচেতন মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গড়ে উঠছে প্রতিরোধ। সংগ্রামী জনগণই পারে বর্তমান বিশ্ব-ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে। আর জনগণের এই সংকটে, সংগ্রামে পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়েই জন্ম অনুঘটকের।

মুনাফালোভী কোম্পানীগুলো বংলাদেশেও মুখোমুখি হয়েছে প্রতিবাদের। জনগণের প্রতিক্রিয়া দেশের বিভিন্ন জায়গাতে তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছে। তেল-গ্যাস, কয়লাসহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদের উপর আপামর জনগণের অধিকারের দাবী দীর্ঘদিনের। এদেশেও এটা গণবাদী। "অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের লেখায় জানা যায় কিভাবে অসম চুক্তির মাধ্যমে জনগণের সম্পদ বহুজাতিক কোম্পানীর কাছে ইজারা দেয়া হচ্ছে।" ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল অঞ্চলে অবস্থিত গারো পাহাড় ও তার পরিপার্শ্বের বনাঞ্চল দেশের মোট বনাঞ্চলের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশে পরিণত হয়েছে। এই অবশেষটুকুর উপরেও নজর পড়েছে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানীর। "লাউয়াছড়া বনে কর্পোরেট তেল-গ্যাস কোম্পানির ধ্বংসযজ্ঞে গ্যাস অনুসন্ধানের নামে কেবলমাত্র বনের প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্রেরই যে ক্ষতি হয়েছে তা নয়, লাউয়াছড়া বননির্ভর স্থানীয় খাসিয়া, ত্রিপুরী, চা-বাগানী ও প্রান্তিক বাঙালি জনগণের অস্থিত্বও হুমকির সম্মুখীন। পাভেল পার্থর লেখায় উঠে এসেছে সেই ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র।" সম্পাদক প্রতিবাদ করে বলেছেন:-
ঘোষিত হয়েছে "জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮।" সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিভাবে পশ্চাদপদ নারী সমাজের উন্নয়নের কোন দিক নির্দেশনাই নেই এ নীতিমালায়। তারপরেও ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর লাঠি প্রদর্শনের কারণে এ নীতিমালাও এখন অন্ধকারে।
অনুঘটক পত্রিকার সম্পাদনা পর্ষদে আছেন-
  • শারমিন মৃধা
  • ডা. সারোয়ার জাহান
  • সারোয়ারী কামাল
  • সাহানা আজুবা হক
এঁদের সুচিন্তিত বিবেচনায় সূচিপত্রের যে রূপ তার সম্পূর্ণটুকু নিচে তুলে দিলাম।

প্রবন্ধ
* সমুদ্রসীমা, তেল-গ্যাস চুক্তি ও জনগণের স্বার্থ: আনু মুহাম্মাদ
* কর্পোরেট খুনখারাবি ও রক্তাক্ত লাউয়াছড়া: পাভেল পার্থ
* বাংলাদেশে পোস্ট মডার্ণ' বিপ্লবের উদাহরণ: শনির আখড়া: এম. এম. আকাশ
* হবিগঞ্জ জেলার চা শ্রমিকদের সরল জীবনচিত্র- ৭ হাত বাই ১৪ হাত ঘরে তিন পুরুষের বসবাস: জিয়াউল হক বাবলু
* পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি সমস্যা ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন: মঙ্গল কুমার চাকমা
* সংস্কৃতি আমাদের হারানো প্রত্যয়: আবুল কাশেম ফজলুল হক
* বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্প: গজ্‌নফর কবীর

গল্প
* শিবলী পাত্রিসিয়া: ফারুক হাসান

কবিতা
* মৈত্রী ট্রেন: রহমান হেনরী, রাজশ্রীরা হারিয়ে যাচ্ছে- বিশ্বায়নের ঝাঁঝালো বসন্তে: সরওয়ার জাহান
* এসো আজিকে এসো: প্রত্যয় জসীম, দৃশ্যের দৃশ্য: আশিক আকবর
* বর্ষা আকাশ নামায়: ইয়াসির আজিজ, আমি থাকি ঘোরে: শিহাব বাহাদুর
* আমার এ মৃত্যুকূপের: হিজল জোবায়ের, নিবেদিত কবিতা: নাজমা সুলতানা বেবী
* ভিন্ন ভাষার কবিতা- আমির বারাকা: ভাষান্তর তুহিন তৌহিদ

বিজ্ঞান
* বুদ্ধির উদবর্তন মূল্য ও প্রজাতির অস্তিত্ব: রুশো তাহের

চিন্তা
* অবসাদের অধ্যাস: শাহজাহান চাকলাদার
* সাম্প্রতিক কবিতা- পরিপ্রেক্ষেত বিবেচনা: আহমেদ ফিরোজ

স্মরণ
* গুরু আমার অমর গুরু: মতলুব আলী
* ভাবনায় সেলিম আল দীন:পীযূষ শিকদার

নারী
* রাষ্ট্র পরিচালনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য: সাবিনা আফজা হক

পত্রিকাটিকে সম্পূর্ণ করে তুলতে সম্পাদক ও সম্পাদনা পর্ষদের সদস্যরা নিয়ত ক্লান্তিহীন চেষ্টা চালিয়েছেন একথা অকুন্ঠচিত্তে স্বীকার করছি। এই ধরণের বিষয়সমৃদ্ধ পত্রিকা বিক্রি হয় কম। সেকথা তাঁরা বিলক্ষণ জানতেন। সেকথা স্বীকার করেছেন সম্পাদকীয়তেও:- "নতুন বছরের বাজেট পাশ হয়ে গেছে আরেক দফা বেড়েছে তেল-গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম, নাভিশ্বাস অবস্থা সাধারণ মানুষের।" সামাজিক দায়বদ্ধতাকে সম্পাদকগণ এড়িয়ে যেতে চাননি। তাদের এই চেতনাকে সম্মান করি।

# সম্পাদকীয়তে আলোকচিত্রী চলমান এর ছবির কথা বলা হয়েছিল। মনে হয়েছিল একাধিক ছবি থাকবে। কিন্তু রয়েছে মাত্র একটি। খাদ্যসঙ্কটের কথা বলা সেই ছবিটি সবশেষ পাতায় (পৃ-৩২) এমনভাবে দেয়া হয়েছে যে চোখে পড়েনা। কোন হেডিং নেই। পরবর্তী সংখ্যায় এটা সংশোধন করা হবে বলে প্রত্যাশা করি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 

About Me

আমার ফটো
শিক্ষাজীবী। গ্রন্থপাঠ এবং ভ্রমণ আমার প্রিয় বিষয়।

শিশুদের বইয়ের ওয়েব সাইট

বইয়ের খোঁজ

আর্কাইভ