শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০০৮

নার্গিস আছর খানমের সাথে কিছুক্ষণ

মে ২০০৮ সংখ্যার ফুলকুঁড়ি পত্রিকায় বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী সম্পর্কে নিম্নোক্ত লেখাগুলো পড়লাম। লেখক মাহবুবুল হক। প্রবন্ধের নাম নার্গিস আছর খানমের সাথে কিছুক্ষণ। ১৯৮২ সালের লেখক ইংল্যান্ডে গিয়ে নার্গিস আছর খানমের সাথে দেখা করেছিলেন। লেখাটি ছোটদের জন্য হলেও লেখক কিছু নতুন কথা বলেছেন। আমি এই তথ্যগুলো জানতাম না। এজন্য আমার কাছে বিষয়টা অন্যরকম মনে হয়েছে। বাংলাবাজারে নার্গিস আছর খানমের একটি জায়গা ছিল। সেটা 'খোশরোজ কিতাব মহল' এর মালিক মহীউদ্দিনকে তিনি দান করেছিলেন। ৬০ বৎসর থেকে জায়গাটি দলিল ছাড়াই তিনি ভোগদখল করছিলেন। সেটার দলিল করার জন্য লেখকের ইংল্যান্ডে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েছিল। সেই প্রসঙ্গে নার্গিস খানমের সাথে লেখক দেখা করেছিলেন। তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক কিছু মন্তব্য করেছিলেন। এই মন্তব্যগুলোর মধ্যে আমার সংশয়ের জায়গাগুলো উল্লেখ করছি।

ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে বসবাস করতেন আমাদের সকলের প্রিয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী নার্গিস আছর খানম। তাঁর সম্পর্কে অনেক কথা আছে, বড় হলে তোমরা জানতে পারবে। আপাতত: এইটুকু জেনে রাখ স্ত্রী হলেও কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাথে সংসার করতে পারেননি। তাঁরা একত্রে বসবাস করতে পারেননি। এসব অনেক বড় ষড়যন্ত্র! অনেক বড় করুণ কাহিনী! যে কাহিনীর জন্য শুধু নজরুল বা নার্গিস ক্ষতিগ্রস্থ হননি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা সবাই। বাংলার মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো।... আমরা কথা বলছিলাম আর ভাবছিলাম কত ভাল হতো যদি কবি নজরুল নার্গিসের সাথে সংসার করতে পারতেন। কী অদম্য স্মৃতিশক্তি নার্গিসের! নার্গিসের চোখে স্মৃতির সাগর যেন ভেসে উঠছে! নীল নীল অতলান্ত সে সাগর! কতো গান! কতো কবিতা! কতো স্মৃতি! নজরুল এমন করলেন কেন? কেন এই মেধাবী, গুণবতি ও মমতাময়ী নারীকে তিনি উপেক্ষা করলেন? কেন এই স্ফটিকসুন্দর হিরা-জহরতকে ফেলে তিনি অন্য সম্প্রদায়ের আর এক নারীকে গ্রহণ করেছিলেন। নার্গিসের ঐশ্বর্য ও বৈভবে যদি নজরুল ভাগিদার হতে পারতেন, তাহলেও তো নজরুল বেঁচে যেতেন। অভাব ও দারিদ্রের মধ্যে তাঁকে জীবন কাটাতে হতো না! অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এবং সন্তান সন্ততির ভরণ-পোষণের জন্য বাধ্য হয়ে বিজাতীয় সঙ্গীত তাঁকে রচনা করতে হতো না। নার্গিস যা যা বলেছেন, সব কথা এখানে বলা যাবে না, তার আধো আধো কথায় আমরা যা বুঝেছি, তাতে কবিনজরুল নিশ্চিতভাবেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন।

এই ষড়যন্ত্র কে করেছিল? কি সেই ষড়যন্ত্র এই সব বিবিধ প্রশ্নের উত্তর লেখাটিতে নেই। সম্ভবত শিশুদের পত্রিকা বলেই তিনি আলোচনার গভীরে যাননি। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উদঘাটিত হওয়া দরকার। না হলে আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামকে বরং অবমাননাই করা হবে। তাঁর জীবন সম্পর্কে প্রতিটি সত্যি ঘটনা প্রকাশ্যে আলোচিত হওয়া উচিত। নজরুল নিজে যেমন কোন কিছুর চোখ রাঙানোতে ভয় পেতেন না। কোন নিষেধাজ্ঞাকে প্রশ্রয় দেন নি, ঠিক তেমনি তার জীবনের অজানা অংশগুলোর উন্মুক্ত আলোচনাতেও কোন সংশয় থাকা উচিত নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 

About Me

আমার ফটো
শিক্ষাজীবী। গ্রন্থপাঠ এবং ভ্রমণ আমার প্রিয় বিষয়।

শিশুদের বইয়ের ওয়েব সাইট

বইয়ের খোঁজ

আর্কাইভ