আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। সভাপতি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
কাকে আমরা অনুসরণ করি যাঁর কাছে আমরা পরাজিত হই। তাঁর মূল্যবোধ, কথা, আদর্শ, সাবলীলতা, স্বস্ফুর্ততা এগুলো যখন আমার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রতি আমার মাথা নত হয়ে আসে। সে আমার ওপর প্রভাবিত করতে শুরু করে। এক ধরনের মানুষ থাকে, যাঁদের মধ্যে কারিশমা থাকে। কারিশমার জন্যই অনেক মানুষের প্রতিকৃতিতে জ্যোতির বলয় আঁকা থাকে। আসলে কী বলয় ছিল? ছিল না। কিন্তু তাদেঁর ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটা জ্যোতির্ময় কিছু ছিল। তাঁর সামনে পড়লেই মানুষের মন একটা আলোতে ভরে যেত। সেই রকম যদি কোনো মানুষের মধ্যে আমি অসাধারণত্ব অনুভব করি, সঙ্গে সঙ্গে আমি সেই মানুষ দ্বারা সম্মোহিত হওয়ার চেষ্টা করি। এটা যদি শিক্ষকের ক্ষেত্রে হয়, তাহলে তিনি ভালো শিক্ষক হবেন। তাঁর দ্বারা শিক্ষার্থীরা উজ্জীবিত হবে, প্রভাবিত হবে। তিনি শিক্ষার্থীর জীবনকে বদলে দিতে পারবেন। তাঁর প্রতিটি কথা ছাত্রদের কাছে অসাধারণ মনে হবে। সে যুক্তিগুলোও তিনি দিতে পারবেন, কেন এটা করা উচিত, কেন এই পথে চলা উচিত।
আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখন অন্তত ২০ জন অধ্যাপক ছিলেন, যাঁদের নাম সারা জাতি জানত। তাঁরা ক্লাশরুমের বাইরে সব জাতিকে তাঁদের কথা-বার্তা চিন্তা-চেতনা দ্বারা প্রভাবিত করেছিলেন তখন। পাঠ্যবই তাঁদের পড়াতে হবে। পাঠ্যবইয়ের মধ্যে যে আনন্দ, বিস্ময়, শিহরণগুলো, সেগুলো যদি তিনি একবার ছাত্রদের সামনে তুলে ধরতে পারেন, তাহলে ছাত্রদের মনটা জেগে যাবে। তো একবার মানুষের মন জেগে গেলে সে হিমালয় পার হয়ে চলে যায়। একজন ভালো শিক্ষকের দায়িত্ব হচ্ছে এটা। যিনি গড়বেন, সেই আদর্শ, মূল্যবোধ, সততা তাঁর মধ্যে থাকতে হবে। তাহলেই একটা ছাত্র প্রভাবিত হবে। আপনি আচরি ধর্ম, পরেরে শেখাও। নিজে ভালো হওয়াই হচ্ছে অন্যকে ভালো করার উপায়। এটা বক্তৃতা দিয়ে, দীক্ষা দিয়ে, শিক্ষা দিয়ে, পাঠ্যবইয়ে লিখে কোনো কিছুতেই কিছু করা যায় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন