শিক্ষকতা সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য চোখে পড়ল। প্রথম আলো পত্রিকার ১১ এপ্রিল ২০০৮ সংখ্যায় 'পড়াশোনা' বিভাগে একজন শিক্ষক বদলে দিতে পারেন শিক্ষার্থীর জীবন শিরোনামে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের আলোচনা ছাপানো হয়েছে।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষকতা বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে তাঁরা প্রত্যেকেই সংক্ষিপ্ত মতামত দিয়েছেন। আমি এখানে এর আংশিক তুলে ধরছি। আজ তুলে ধরছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কথা।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষকতা পেশা অন্য যে কোন পেশা থেকে আলাদা। শিক্ষকদের অনেক সামাজিক দায়িত্ব থাকে। আর যাঁরা শিক্ষকতাকে বেছে নেন, তাঁরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এ পেশায় আসেন। একজন শিক্ষক হিসেবে চরিতার্থতা শুধু কয়েকজন ভারো ছাত্র তৈরি করাতেই নয়; তাঁর দ্বারা কতজন ভালো মানুষ তৈরি হলো, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষঅর্থীদের নানাভাবে উদ্দীপ্ত-উদ্বুদ্ধ করা তাঁদের দায়িত্ব।
শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষার্থীরা বেশ ভালোভাবে প্রভাবিত হয়। শিক্ষকেরা ছাত্রদের কাছে পথপ্রদর্শক ও বীরের মতো। শিক্ষার্থীরা তাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে চায়, তাঁকে অনুকরণ-অনুসরণ করতে চায়। শিক্ষকের আদর্শ ও কর্তব্যনিষ্ঠা দুটোই শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষক আদর্শবাদী মানুষ হবেন। তিনি যে নিজে শুধু ন্যায়ের পথে থাকবেন তা নয়, যে কোনো অন্যায়ের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন। তিনি অন্যের দু:খে কাতর হবেন, সুখের অংশীদার হবেন। একজন শিক্ষকের মধ্যে এসব গুণ থাকলে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছ থেকে আসা করে তাঁরা মেরুদণ্ডহীন মানুষ হবেন না, তাঁরা ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন।
শিক্ষকদের নিজের কাছেই জবাবদিহিতা থাকা উচিত। নিয়মিতক্লাস নেওয়া, কর্তব্য পালন করা, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করা- শিক্ষককে এসব গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। শিক্ষক চাইবেন ছাত্ররা জ্ঞানের অনুশীলন করুক, তাঁরা স্বার্থপর, আত্মসর্বস্ব না হয়ে মানুষ হিসেবে যেন ভালো হয়, আবার ছাত্র হিসেবেও যেন ভালো হয়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছেই আদর্শ, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা পেয়ে থাকে। তাই তাঁদের উচিত শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা করা। শিক্ষকরা সজীব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তাই তাঁদের নিজেদের মধ্যেও সজীবতা থাকতে হবে। শিক্ষকদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ থাকাটাও জরুরি। তবে বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের তেমন সামাজিক মর্যাদা নেই। এ কারণে তাঁরা অর্থকে সামাজিক মর্যাদা লাভের উপায় হিসেবে মনে করছে। এর ফলে তাঁরা বেশি অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা অর্জনের চেষ্টা করছে। যাই হোক, জ্ঞান বিতরণের যে বিষয়টি তা স্বত:স্ফূর্তভাবে আসা উচিত, এর সঙ্গে কোন ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকা উচিত নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন