আমরা সবাই যদি প্রচলিত কাগজে প্রিন্ট করা বই পড়া ছেড়ে দিয়ে ইলেকট্রনিক ফরমেটে ই-বই (পিডিএফ ইত্যাদি) পড়া শুরু করি, তাহলে কি হবে? কাগজে প্রিন্ট করা কোটি কোটি বইগুলোর কি গতি হবে? এই লিংকে একটা ছবি দেখলাম। দেখা গেল কাগজের বইগুলো দিয়ে একজন ব্যক্তি টেবিল তৈরি করেছেন। আর সেই টেবিলের উপরে ল্যাপটপ রেখে ই-বুক পড়ছেন। সত্যি সত্যি এমন অবস্থা হবে নাকি? মনে হয় না। নাকি, হলেও হতে পারে?
বিস্তারিত পড়ুন....
বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১০
রবিবার, ১১ জুলাই, ২০১০
৫ম বার্ষিক ই-বই মেলা চলছে
আবারো শুরু হয়েছে ই-বই মেলা। মেইলবক্সে খবরটি আগেই পেয়েছি। কিন্তু অসুস্থতার কারণে জানাতে দেরী হয়ে গেল।
বিস্তারিত পড়ুন....
Project Gutenberg (http://www.gutenberg.org) এর প্রতিষ্ঠাতা Michael S. Hart মেইলে জানিয়েছেন যে,আর হ্যাঁ, এবার পালিত হচ্ছে ই বই উদ্ভাবনের ৪০ তম বার্ষিকী। উল্লেখ্য যে, মূল সাইটে কোন বই রাখা হয়নি। যে সব ই বই প্রকাশক মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের সাইটের লিংক দিয়ে সাজানো 'কালেকশন' বোতামটি চাপলে সবাইকে একসাথে পাওয়া যাবে। এক জায়গা থেকে কোন পছন্দের বই খোঁজা যাবে, কিংবা তাদের সাইটে গিয়েও বই সংগ্রহ করা যাবে। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গবেষণাপত্র, রিপোর্ট নানারকমের বই সংগ্রহে আগ্রহীরা অনলাইন ই-বই মেলাতে একবারের জন্য হলেও ঢু মারবে সেই প্রত্যাশা করি। সেই সাথে অপেক্ষা করছি একটি জমজমাট বাংলা ই বই মেলার।
এবারে ৩.৭ মিলিয়ন বই নিয়ে মেলাটি শুরু হয়েছে। গত এক বছরে প্রায় ১ মিলিয়ন ই বই মেলার জন্য তৈরি করা হয়েছে। মেলা চলবে ৪ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত।
ই বই মেলার ঠিকানা http://www.worldebookfair.org/
বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১০
বইমেলা ২০১০: যে বইগুলো কিনতে চাই-০২
গত ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত এবারে যে বইগুলো কিনতে চাই- ০১ এর পরে আরও কিছু বইয়ের তালিকা করেছি। তালিকাটি নিম্নরূপঃ
বিস্তারিত পড়ুন....
- কত অজানারে- করুণাময় গোস্বামী। চয়ন
- বাংলা ভাষার আধুনিক যুগ- মাহবুবুল হক। মনন
- দ্বৈত পাহাড়ের ক্ষুদে মানুষ- বিপ্রদাস বড়ুয়া। অ্যাডর্ন
- বাঙালির ঐতিহ্য ও ভবিষ্যত- মোনায়েম সরকার। বিউটি
- বজ্রকণ্ঠ থেমে গেল- আসাদ চৌধুরী। পাঞ্জেরী
- বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা- প্রিয় রঞ্জন দত্ত। মিজান
- জেনানা জবান- শাহানা আকতার মহুয়া। কথা প্রকাশ
- নুরনামা- আব্দুল হাকিম। লেখালেখি
- একগুচ্ছ গল্প- নাসরীন জাহান। লেখালেখি
- ভালোবাসার দিনে- সৈয়দ শামসুল হক। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স
- বাড়ি ও বনিতা- আনোয়ারা সৈয়দ হক। "
- আবাস ভূমি- মঞ্জু সরকার। "
- রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ- মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী
- দ্রোহে প্রেমে কবিতার মত- কামাল লোহানী। শোভা প্রকাশ
- সংগঠন ও বাঙালি- আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। মাওলা ব্রাদার্স
- বাংলাদেশে গণতন্ত্র- তারেক শামসুর রেহমান। কথা প্রকাশ
- ঐ যে স্ট্রেচার আসছে- মনিরা কায়েস
- নারীবাদী গল্প- নাসরীন জাহান
- আস্কর আলী পণ্ডিতের দুর্লভ পুঁথি (জ্ঞান চৌতিসা ও পঞ্চসতী প্যায়জান) - শামসুল আরেফীন। বলাকা
- প্রসঙ্গ মৌলবাদ- যতীন সরকার। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী
- কালচিত্র ও বিম্বিত চিন্তা- ফারুক যোশী।"
- সমাজতন্ত্রের সহজ পাঠ- শাহীন রহমান।"
- ফুলবাড়ী কয়লা খনি ও বহুজাতিকের স্বপ্নভঙ্গ- বিপ্লব দাস।"
- অগ্নিযুগের পাঁচ বিপ্লবী- উৎপল সাহা।"
- গণমানুষের নেতা কমরেড বরুণ রায়- প্রণতি চক্রবর্তী।"
- ভূমি ও কুসুম- সেলিনা হোসেন। অনিন্দ্য প্রকাশনী
- তিনটি উপন্যাসিকা- হাসান আজিজুল হক। "
- বধ্যভূমি: বিচ্ছিন্ন স্মৃতি- আর কে চৌধুরী। পারিজাত প্রকাশনী
- প্রেস জোকস- বিপ্লব রহমান। শুদ্ধস্বর
- চিন থেকে ফিরে- রাশেদ খান মেনন
- মুক্তিযুদ্ধ ৭১- মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। মেলা
- অধ্যাপকের ডায়েরি- আ ন ম আবদুস সোবহান। মুক্তচিন্তা
- প্রণীত জীবন- সৈয়দ শামসুল হক। ইত্যাদি
- বিজ্ঞানের ইতিহাস- শ্রী সমরেন্দ্রনাথ সেন। দিব্য প্রকাশ
- সুরমা উপত্যকার চা-শ্রমিক আন্দোলনঃ অতীত ও বর্তমান- ইসহাক কাজল। ইত্যাদি
- বাদুর ও ব্র্যান্ড- শাহনাজ মুন্নি। অ্যাডর্ন
- রাজনীতির তিন অধ্যায়- আবু সাঈদ। রিদম প্রকাশনা
- বিশ্বব্যাংক আইএম এফ এডিবি গণট্রাইবুনাল- (লেখক জানা যায়নি)। সংহতি প্রকাশনী
- নারী-পুরুষ বৈষম্যঃ জীবতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট- মনিরুল ইসলাম। "
- সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে- ফারুক মঈনউদ্দীন। অবসর
- বাংলার ঐতিহ্য- মৃত্যুঞ্জয় রায়। ঐতিহ্য
- বাংলাদেশের ছবি- বিদ্যুত রঞ্জন দেবনাথ। উৎস
- রঙের জাতক- নির্মলেন্দু গুণ। বাংলা প্রকাশ
- কমলকুমার চরিতম- শোয়াইব জিবরান। শুদ্ধস্বর
- সংসদ বিতর্ক- সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আগামী প্রকাশনী
- তাজউদ্দীন আহমদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা- ড. কামাল হোসেন। মাওলা ব্রাদার্স
- গল্পে গল্পে ব্যাকরণ- যতীন সরকার। সাহিত্য প্রকাশনী
- লোকপুরাণের বিনির্মাণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ- জফির সেতু। শুদ্ধস্বর
- মুক্তবাজারের দুর্বৃত্তায়ন- আসজাদুল কিবরিয়া। জাগৃতি
- জন্মেই আমার আজন্ম পাপ- দাউদ হায়দার। নওরোজ
- ঐতিহাসিকের নোটবুক- সিরাজুল ইসলাম। কথাপ্রকাশ
- বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাস ভাববিদ্রোহ- প্রীতি কুমার মিত্র। সাহিত্য প্রকাশ
- বাংলা সাহিত্যে সংস্কারচেতনাঃ মুসলিম সমাজ- স্বরোচিষ সরকার
- শিল্পের শক্তি- আহমাদ মোস্তফা কামাল। অ্যাডর্ন
- অবনাগমন- সাইমন জাকারিয়া
- সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান- আহমেদ আমিন চৌধুরী। ঊৎস প্রকাশন
- অগ্রন্থিত গল্প-১ম খণ্ড- মাহমুদুল হক, সম্পাদনা- আবু হেনা মোস্তফা এনাম। সাহিত্য প্রকাশ
- চৈতন্যের চাষ কথা- ফকির ইলিয়াস। ভাষাচিন্তা
- উপনামের উৎসব- মাদল হাসান। "
- সিলেটে যুদ্ধাপরাধ ও প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র- অপূর্ব শর্মা। ইত্যাদি প্রকাশন
- ভাবনা নিয়ে ভাবনা- স্বরোচিষ সরকার। সাহিত্যবিলাস
- ক্রিটিক্যাল তত্ত্বচিন্তা- সম্পাদনা: মাসউদ রহমান। মাওলা ব্রাদার্স
- গল্পের মতো- বেলাল মোহাম্মদ। "
- বাংলাদেশের আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা- শফিউদ্দিন তালুকদার। কথা প্রকাশ
- গারোদের সমাজ ও সংস্কৃতি- সুভাষ জেং চাম। সূচীপত্র
- বাংলা সাহিত্যের অলিখিত ইতিহাস- সাইমন জাকারিয়া ও নাজমীন মর্তুজা। অ্যাডর্ন পাবলিকেশন
- দুর্বিন শাহ রচনাসমগ্র- সম্পাদনা: সুমন কুমার দাস। উৎস
- সমকামিতা- অভিজিত রায়। শুদ্ধস্বর
- অণূজীবের পৃথিবী- রজিউদ্দিন রতন। "
- ত্রিধা- মাসুদা ভাট্টি। "
- বাংলার পত্রসাহিত্য- সুপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়। দিব্যপ্রকাশ
- ফিল্মমেকারের ভাষ্য-লাতিন পর্ব- সম্পাদনা: রুদ্র আরিফ ও বিজয় আহমেদ। ঐতিহ্য
- ডিসকভারিং আর্কিয়লজি- আইরিস ব্যারি, অনুবাদ: আসাদ ইকবাল। "
- গীন্সবার্গের সঙ্গে- নির্মলেন্দু গুণ। শ্রাবণ
- বাংলাদেশের পরিচিত পাখি- যাযার মিন্টু। টোনাটুনি
- পরের চশমা নিজের আঁখি- দন্ত্যস রওশন। জনান্তিক
- দূরের সবুজ বনভূমি- ধ্রুব এষ। ইত্যাদি
- স্বপ্নের শহর রোম ও ফ্লোরেন্স- রাবেয়া খাতুন। অন্যপ্রকাশ
- পানেছারবানুর নকশীকাঁথা- হাসনাত আবদুল হাই। "
- পিকাসোর রঙ মাইকেলেঞ্জেলোর হাতুড়ি- বরেণ চক্রবর্তী।"
- মহাদেব সাহার প্রথম পাঁচ কাব্যগ্রন্থ- মহাদেব সাহা। বিজয় প্রকাশ
- বিলেতের বাঙালি- মুস্তাফিজ শফি। শুদ্ধস্বর
- সন্ন্যাসের সহচর- প্রশান্ত মৃধা।"
- বিশ্বায়ন ও কৃষি অর্থনীতি- আলতাব হোসেন। সূচীপত্র
- ভাটির দেশের ভাটিয়ালি- মুস্তাফা জামান আব্বাসী। মাওলা ব্রাদার্স
- মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রাম- মুহম্মদ শামসুল হক। সাহিত্য
- গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনী- ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। আগামী
- ভূমিঃ সংগ্রাম ও সংস্কার- আইয়ুব হোসেন। সূচয়নী
- ভদ্রপাড়ায় থাকেনা ঈশ্বর- ড. হারু-অর-রশীদ। শোভা প্রকাশ
- নজরুলের ঢাকায় দাঙ্গা ও মুক্তবুদ্ধির লেখকদের দুষ্প্রাপ্য রচনাবলী- ইসরাইল খান। কাঁশবন
- জাগল বাঙালী জাগল- ফজল এ খোদা। জ্যোতি প্রকাশ
- আদিবাসী কবিতাসংগ্রহ- হাফিজ রশিদ খান। আগামী
- নারীর ক্ষমতায়ন: স্বপ্ন ও বাস্তবতা। নূর কামরুন নাহার
- ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহের কথা- আহমেদ সাফায়েত। অ্যাডর্ন
- এ ভ্রমণ আর কিছু নয়- আসাদ চৌধুরী। উৎস
- সেই সাপ জ্যান্ত- নাসরীন জাহান। অন্যপ্রকাশ
- মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধান- রেজাউর রহমান
- মাহমুদ দারবিশের পাঠ ও বিবেচনা- সম্পাদনা: শরীফ আতিক-উজ-জামান। সংবেদ
- অস্ত্রে মাখিয়ে রাখো মধু- ফিরোজ এহতেশাম
- মুঠোফোনের কাব্য-২- নির্মলেন্দু গুণ। বিভাস
রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১০
এবারে যে বইগুলো কিনতে চাই- ০১
অমর একুশে বইমেলা ২০১০ থেকে যে বইগুলো কিনতে চাই, তার একটা তালিকা তৈরি করছি। এই মুহূর্তে ঢাকায় যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ভবিষ্যতে কবে যাবো তাও জানিনা। তালিকা করে রাখলাম। আগামীতে কখনো সময় ও সুযোগ হলে কেনার চেষ্টা করব।
গত এক সপ্তাহের সবকটা পত্রিকা পড়া হয়নি। পত্রিকাগুলোতেও সব বইয়ের খবর প্রকাশিত হয়নি। দু'একটা বহুল প্রচারিত পত্রিকার কয়েকটা সংখ্যা ঘেঁটে যে কয়টা নাম বের করতে পারলাম, তার মধ্যে যে বইগুলো কেনার ইচ্ছে হয়েছে সেগুলোই লিখে রাখলাম। আমি বিশ্বাস করি এর বাইরে অারও অনেক বই আছে যেগুলো আমার কেনার ইচ্ছে হবে।
প্রত্যেক সপ্তাহে এরকম একটি তালিকা তৈরি করার ইচ্ছে আছে। দেখি মাস শেষে কয়টি বই হয়।
উল্লেখ্য যে, সব বইয়ের প্রকাশকের নাম সংগ্রহ করতে পারিনি। আর এই তালিকা কোন প্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরি নয়। শুধুমাত্র বইয়ের নাম দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হাতে পাওয়ার পর উল্টেপাল্টে দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।
বিস্তারিত পড়ুন....
গত এক সপ্তাহের সবকটা পত্রিকা পড়া হয়নি। পত্রিকাগুলোতেও সব বইয়ের খবর প্রকাশিত হয়নি। দু'একটা বহুল প্রচারিত পত্রিকার কয়েকটা সংখ্যা ঘেঁটে যে কয়টা নাম বের করতে পারলাম, তার মধ্যে যে বইগুলো কেনার ইচ্ছে হয়েছে সেগুলোই লিখে রাখলাম। আমি বিশ্বাস করি এর বাইরে অারও অনেক বই আছে যেগুলো আমার কেনার ইচ্ছে হবে।
প্রত্যেক সপ্তাহে এরকম একটি তালিকা তৈরি করার ইচ্ছে আছে। দেখি মাস শেষে কয়টি বই হয়।
উল্লেখ্য যে, সব বইয়ের প্রকাশকের নাম সংগ্রহ করতে পারিনি। আর এই তালিকা কোন প্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরি নয়। শুধুমাত্র বইয়ের নাম দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হাতে পাওয়ার পর উল্টেপাল্টে দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।
- এই বাঙলায় - সনৎ কুমার সাহা। শোভা প্রকাশন
- প্রাকৃত জনের জীবন দর্শন - যতীন সরকার। শোভা প্রকাশন
- জনপদ ও ইতিহাস কথা - ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) শাখাওয়াত হোসেন
- নন্দিত কান্না নিন্দিত হাসি (ভিক্ষুকদের জীবনযাপন নিয়ে) - মোহাম্মদ আমীন
- জীবনানন্দ দাশ ও ইলা মিত্র - মিলা মাহফুজা
- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার - শাহনাজ মুন্নী
- রমেশ শীল - মহসীন হোসাইন
- বাংলার মুসলিম বুদ্ধিজীবী - ওয়াকিল আহমেদ। শোভা প্রকাশন
- দরবেশ ও দরগার কথা - তিতাস চৌধুরী। শোভা প্রকাশন
- নির্বাচিত অনুসন্ধান - মুস্তাফিজ শফি। শুদ্ধস্বর
- বাঙলা ধ্বনিমূল - চার্লস এ. ফার্গুসন ও মুনীর চৌধুরী, অনুবাদ - কাজি মাহবুব হোসেন। নবযুগ
- ছেলেটি যে মেয়ে মেয়েটি তা জানত না - নাসরীন জাহান
- সময়ের জবানবন্দি - হায়াৎ মামুদ
- চলার পথে নদীর সাথে - এমদাদুল হক
- ভাবনা নিয়ে ভাবনা - স্বরোচিষ সরকার। সাহিত্য বিলাস
- সমাজ সাহিত্য দর্শন - হোসেন উদ্দিন হোসেন। নবরাগ প্রকাশনী
- রাজনীতিতে বিত্তশালীদের আগমন প্রবনতাঃ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত- শহীদুল্লাহ শাহজাহান। শৈলী প্রকাশন
- বাংলাদেশের উপন্যাসে সমাজ চিন্তা ও আবু জাফর শামসুদ্দীন - ড. মমতাজ বেগম। ইত্যাদি প্রকাশনী
- পাহাড়ি ফুল - চৌধুরী আহসান। কাকলী
- ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ক্বাসীদা - শায়লা পারভীন। সুবর্ণ
- বিষয় ইতিহাস - মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। সময়
- বাংলাদেশের কবিগান - যতীন সরকার। বিভাস
- নিরুদ্দেশ হাওয়ার হাওয়ায় - বেলাল চৌধুরী। গ্রন্থপ্রকাশ
- নদীর নাম টে - শাকুর মজিদ। উৎস প্রকাশন
- বহে নিরবধি নদী অববাহিকায় বাংলাদেশ - সমুদ্র গুপ্ত। মুক্তচিন্তা প্রকাশন
- আমার আমি প্রসঙ্গঃ শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন ও সাফল্য - পান্না কায়সার । রয়েল পাবলিশার্স
- ঢাকায় প্রথম - মুনতাসীর মামুন। অনুপম প্রকাশনী
- জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত আধুনিক ছোটগল্পের কবি - সাদ কামালী। অবসর প্রকাশনী
- টিনএজ মন - মোহিত কামাল। তাম্রলিপি
- সাহিত্যিক ও দার্শনিক সক্রেটিস থেকে সাঁত্রে - ড. সফিউদ্দিন আহমদ। মিজান পাবলিসার্স
- ইউ কি চিং বীরবিক্রমঃ আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা - লে. কর্ণেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। স্বরাজ প্রকাশনী
- একাত্তর - আব্দুল মান্নান সৈয়দ। সূচীপত্র
- ছোটদের বাদ্য বাজে - মোকারম হোসেন খান। বিভাস
- হিরন্ময় দুঃখ - রাবেয়া খাতুন। সময়
- জননী সাহসিনীঃ ১৯৭১ - আনিসুল হক। সময়
- শুদ্ধ বলা শুদ্ধ লেখা - রণজিৎ বিশ্বাস। সূচীপত্র
- সেইসব দার্শনিক - সরদার ফজলুল করিম
- কবিতার অন্তর্যামীঃ আধুনিক উত্তরাধুনিক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, রোমান্টিক ও আধুনিক কবিতার অক্ষদ্রাঘিমা - খোন্দকার আশরাফ হোসেন
- মাহমুদুল হকের অগ্রন্থিত গল্প - আবু হেনা মোস্তফা এনাম সম্পাদিত
- আলোছায়ার যুগলবন্দি - আবুল হাসনাত সম্পাদিত
- বনের স্মৃতি - আলী আকবর কোরেশী
- ঢাকা আমার ঢাকা- সাঈদ আহমেদ। সাহিত্য প্রকাশ
- তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, তোমার জন্য - শহীদ কাদরী। অবসর
- সম্পাদের কলমে- আবদুল মান্নান সৈয়দ। সূচীপত্র
- নিঃশঙ্ক পথিক- রণেশ মৈত্র। অংকুর প্রকাশনী
- সত্য যে কঠিন- যতীন সরকার। সাহিত্য প্রকাশ
- ভাষা শিক্ষা ও ভাষাবিজ্ঞান পরিচিতি- হুমায়ুন আজাদ। আগামী
- ১/১১'র একজন বন্দির কথা- মোহাম্মদ এনামুল হক। আগামী
- মুক্তিযুদ্ধ নাটক সমগ্র- ড. ইনামুল হক। আগামী
- সময়ের বয়ান- মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন। আগামী
- সংগ্রামী স্মৃতির মোহনায়- প্রসূতী কুমার রায়। উৎস
- সবার জন্য মর্যাদা- রবার্ট ডব্লিউ ফুলার, পামেলা এগারলফ, অনুবাদ: বায়েজিদদৌলা। সিভিক
- আরো একটুখানি বিজ্ঞান- মুহম্মদ জাফর ইকবাল। কাকলী প্রকাশনী
- বাঙ্গালীর ভাষা ইদানিং- হায়াৎ মামুদ। চারুলিপি
- সাত দিনের আমেরিকা- হাসনাত আবদুল হাই। আগামী
- পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী রাজত্বের সাত বছর- শরদিন্দু শেখর চাকমা। বিভাস
- ছড়াসব করে রব- লুৎফর রহমান রিটন। অনন্যা
বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
শিক্ষা দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী : অর্জনের সম্ভাবনাঃ নুরুল ইসলাম নাহিদ
আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, শিক্ষা দিবস। পূর্ববর্তী বছরগুলোর শিক্ষা দিবসে কোন শিক্ষামন্ত্রী গণসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কোন প্রবন্ধ লিখেছেন বলে আমার জানা নেই। বর্তমান সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এর লেখা একটি প্রবন্ধ আজকের পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধটির শিরোনাম: "শিক্ষা দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী: অর্জনের সম্ভাবনা" আমি সম্পূর্ণ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর লেখাটি আমার ব্লগে প্রকাশ করলাম।
বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের প্রতীক ১৭ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক ‘শিক্ষা দিবস’। শিক্ষার জন্য সংগ্রাম ত্যাগ বিজয় গৌরব ও ঐতিহের প্রতীক এই শিক্ষা দিবসের এবার ৪৭তম বার্ষিকী। আজ থেকে ৪৭ তম বার্ষিকী। আজ থেকে ৪৭ বছর পূর্বে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিভূ সামরিক শাসক জেনারেল আয়ুব খানের চাপিয়ে দেয়া গণবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল তথাকথিত জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল করে সকলের জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠা এবং একটি গণমুখী বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সহজলভ্য আধুনিক শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা অর্জনের লক্ষ্যে ছাত্র সমাজ অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে আয়ুবের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আগস্ট মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বরের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা হয়। ছাত্র সমাজের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র সমাজের আন্দোলনের প্রতি সাধারণ জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানেও প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ ও জনগণেল মধ্যেও বিক্ষোভ এবং আন্দোলন প্রসারিত হতে থাকে।
১৯৫৯ সালে প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক আয়ুব খান তৎকালীন শিক্ষা সচিব এসএম শরিফকে চেয়ারম্যান করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। এই কমিশন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর লক্ষ্য ও স্বার্থের প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। ১৯৬২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আয়ুব সরকার এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এই তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’তে যে সকল বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেঃ শিক্ষাকে ব্যয় বহুল পণ্যের মতো শুধু উচ্চবিত্তের সন্তানদের স্বার্থে উচ্চশিক্ষাকে সীমিত করা এবং সাধারণের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ একেবারেই সংকুচিত করে ফেলা। শিক্ষা ব্যয় পুঁজিবিনিয়োগ হিসেবে দেখে শিক্ষার্থীরা তা বহন করে, যে অভিভাবক বেশি বিনিয়োগ করবেন তিনি বেশি লাভবান হবেন; অবৈতনিক শিক্ষার ধারণাকে ‘অবাস্তব কল্পনা’ বলে উল্লেখ; ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ইংরেজী পাঠ বাধ্যতামূলক; উর্দুকে জনগণের ভাষায় পরিণত করা; সাম্প্রদায়িকতাকে কৌশলে জিইয়ে রাখার চেষ্টা; ডিগ্রি কোর্সকে তিন বছর মেয়াদি করা, ইত্যাদি।
এই সকল বিষয় ছাত্র সমাজ এবং সচেতন মহলকে দারুণভাবে বিক্ষুব্ধ করে তুলে। এরই পরিণতিতে শিক্ষার দাবিতে ছাত্র সমাজের আন্দোলন ব্যাপক রূপলাভ করে এবং ১৭ সেপ্টেম্বরের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন আয়ুব সরকারকে বাধ্য করে ওই শিক্ষানীতি স্থগিত করতে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির পর সকল রাজনৈতিক দল ও কর্মকাণ্ড, ছাত্র সংগঠনসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের তৎপরতা বেআইনি করে সকল ধরনের মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়। চলে চরম দমননীতি। এরই মধ্যে ষাট সালের দিকে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা গোপন সমঝোতা ও যোগাযোগ রেখে নিজ নিজ সংগঠন গোছানোর এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু করেন। এভাবে ছাত্র সংগঠন দুটি ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকে এবং সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গেও যোগাযোগ গড়ে তোলে।
তৎকালীন দুই বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন এবং ডাকসু ও বিভিন্ন হল ও কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাধারণ ছাত্র সমাজের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়ে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। যার ফলে সকল আন্দোলন ও কর্মসূচির প্রতি সাধারণ ছাত্র সমাজের সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
একদিকে সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, অন্যদিকে চাপিয়ে দেয়া গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল এবং গণমুখী শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভে দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই পটভূমিতে বিভিন্ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারাদেশে হরতাল ঘোষণা করে। সামরিক শাসনের বিরম্নদ্ধে শিক্ষার দাবিতে ঐ হরতাল সারা দেশে অভূতপূর্ব সাফল্য এবং ছাত্র-জনতার ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আয়ুবের সামরিক শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। তখন সাধারণভাবে যে কোনো ধরনের আন্দোলন এমনকি ছাত্র সমাজের যে কোনো তৎপরতার ওপর ছিল সামরিক সরকার খগড় হস্ত। ১৯৬২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সূচিত আন্দোলন দমন করার জন্য গ্রেফতার, মামলা, হয়রানি, নির্যাতন, এমনকি বেত্রদণ্ডসহ বর্বরোচিতভাবে নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলন ও হরতাল কর্মসূচি ঠেকানোর জন্য চরম নির্যাতনমূলক পথ গ্রহণ করা হয়। ওই দিন ঢাকাসহ দেশের সকল শহরের রাজপথে বিরাট বিক্ষোভ মিছিল চলতে থাকে। লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস প্রভৃতি তা দমন করতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে ছাত্রদের একটি বিক্ষুব্ধ মিছিল আব্দুল গনি রোড হয়ে অগ্রসর হয়ে পুলিশ পেছনে থেকে অতর্কিতে মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করে। ঐদিন পুলিশের গুলিতে বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ শহীদ হন। বহু ছাত্র-জনতা পুলিশ ও ইপিআর-এর নির্যাতন ও গুলিতে সারাদেশে আহত হন।
১৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ছাত্র আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলে। ছাত্র সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সাধারণ জনগণ ছাত্র সমাজের প্রতি আরো দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। সারাদেশে তিন দিনব্যাপী শোকের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর পল্টন ময়দানে এক ছাত্র জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনগণের সমর্থিত ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়ে আয়ুবের সামরিক সরকার তথাকথিত ‘শিক্ষা শিক্ষানীতি’ স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরম্নদ্ধে এবং একটি গণমুখী সার্বজনীন আধুনিক শিক্ষানীতির দাবিতে ঐতিহাসিক ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র আন্দোলন ও শহীদদের আত্মদান তথা শিক্ষার ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক ১৭ সেপ্টেম্বরকে সেদিন ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বহু উত্থান-পতনের মধ্যেও প্রতি বছর এই দিনটি ছাত্র সমাজ এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলেই শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে। আজো শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে ১৭ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা দিবস’ অম্লান হয়ে আছে। সেই লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম আজো সম্পূর্ণ সফল হয়নি।
পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী তাদের কায়েমী স্বার্থ এবং শাসন শোষণ স্থায়ী করার লক্ষ্যে শিক্ষাকে ব্যবহার করার জন্য ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা চেয়েছিল শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে তাদের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আচ্ছন্ন করে রাখতে। তাই ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র জনতার ব্যাপক প্রতিরোধের যুগে তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ স্থগিত ঘোষণা করলেও আয়ুব খানের সরকার বা শাসকশ্রেণী তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
সরকার ১৯৬৪ সালে বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি কমিশন গঠন করে নতুন মোড়কে তাদের পরিকল্পিত শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থা কায়েমের পথ গ্রহণ করে। বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের নাম দেয়া হয়েছিল 'Commission on Students' Problem and Welfare' বা ‘ছাত্র সমস্যা ও কল্যাণ কমিশন’ এই কমিশন দ্রম্নতই বছরের মাঝামাঝি তাদের রিপোট প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করে। ‘হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নামে পরিচিত এই রিপোর্ট বাস্তবায়নের জন্য বহু চেষ্টা ও কৌশল গ্রহণ করেও প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার তা বাস্তবায়নে সক্ষম হয়নি। এরপরও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী হাল ছাড়েনি। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আয়ুব খানের ক্ষমতা ত্যাগ নিশ্চিত হলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসক জারি করে ক্ষমতায় বসেই সীমিত সময়ে নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা প্রদানের ঘোষণা দিয়ে সর্বাগ্রে আবারও শিক্ষানীতি প্রণয়নে প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই পুরনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য নতুন প্রজন্মের ওপর তাদের চিন্তা-চেতনা চাপিয়ে দেয়া। দেশের সমগ্র সমাজ এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে তা প্রত্যাখান করে। কেবল পাকিস্তানী ভাবধারা ও শাসক শ্রেণীর অনুসারী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির) ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকারের শিক্ষানীতির পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করে।
আমাদের গৌরবময় সকল সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরই প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-কুদার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশন স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি আধুনিক গণমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলেও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর প্রায় অর্ধডজন শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে আজো স্বাধীন দেশে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এবারের শিক্ষা দিবস এক নতুন সম্ভাবনাময় পরিস্থিতিতে উদযাপিত হচ্ছে। বিগত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে জনগণের অভূতপর্ব রায়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার গঠনের ফলে ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবসের মূল লক্ষ্য এবং জাতির আকাঙক্ষা বাস্তবায়নের এক বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে আজ বাস্তবায়িত করেই শিক্ষা দিবস’ এবং শিক্ষার জন্য আন্দোলনের সকল শহীদের স্বপ্ন সফল করে তোলা সম্ভব।
আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য আদর্শ ও চেতনা এবং ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন তথা শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ অর্থাৎ দারিদ্র্য, ক্ষুধা, নিরক্ষরতা, দুর্নীতি, পশ্চাদপদতার অবসান ঘটিয়ে আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে বাষট্টির ঐতিহাসিক শিক্ষানীতির আন্দোলনের ৪৭ বছর পর নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের অতীতের শিক্ষার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এ বছর শেষ হওয়ার পূর্বেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। খসড়া শিক্ষানীতি নিয়ে এই মুহূর্তে আমি এখানে কোন মন্তব্য না করাই সমিচীন মনে করছি। আমরা খসড়া শিক্ষানীতি সকলের মতামত গ্রহণের জন্য ওয়েব সাইটে দিয়েছি। আমরা সকলের মতামত নিয়েই তা চূড়ান্ত করতে চাই। (www.moedu.gov.bd)
শিক্ষা কোন দলীয়, গোষ্ঠীগত, আঞ্চলিক বা সাম্প্রদায়িক বিষয় নয়। শিক্ষা সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের বিষয়। আমরা আশা করব দেশের সকল শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মানুষ এবং দলমত নির্বিশেষে সাধারণ জনগণ তাদের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ দিয়ে প্রস্তাবিত খসড়া শিক্ষানীতিকে চূড়ান্ত করার কাজে এগিয়ে আসবেন।
আসুন আমাদের শিক্ষার জন্য ঐতিহাসিক আন্দোলনের ৪৭তম বার্ষিকীতে শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাবিদ, তথা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল মহল এবং সকল শ্রেণীর মানুষ তাদের মতামত ও পরামর্শ দিয়ে ১৯৬২ সালে একটি গণমুখী শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রামের শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি।
আমাদের শিক্ষার অধিকার এবং গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, যুগোপযোগী প্রগতিশীল একটি শিক্ষানীতির জন্য প্রায় অর্ধশতাধিক ধরে যে সংগ্রাম অব্যাহতভাবে চলমান তারই সফল পরিণতি হলো এবারের শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতির চূড়ান্ত করণ এবং বাস্তবায়ন সকলের কাছে সবিনয় আহ্বান_ আপনাদের সকলের সাহায্য-সহযোগিতা এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠাই হবে এর সাফল্যের আসল শক্তি।
আমাদের সকল শহীদ এবং জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকেই তা করে যেতে হবে।
[লেখক : সংসদ সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী]
(বানানজনিত কিছু যান্ত্রিকত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে। পুনঃপ্রকাশের উপর কোন রকম বিধিনিষেধ থাকলে এই পোস্টটি মুছে ফেলা হবে।)
সংগ্রহ করা হয়েছে ইত্তেফাক পত্রিকা থেকে।
বিস্তারিত পড়ুন....
শিক্ষা দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী : অর্জনের সম্ভাবনা
নুরুল ইসলাম নাহিদ
নুরুল ইসলাম নাহিদ
বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের প্রতীক ১৭ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক ‘শিক্ষা দিবস’। শিক্ষার জন্য সংগ্রাম ত্যাগ বিজয় গৌরব ও ঐতিহের প্রতীক এই শিক্ষা দিবসের এবার ৪৭তম বার্ষিকী। আজ থেকে ৪৭ তম বার্ষিকী। আজ থেকে ৪৭ বছর পূর্বে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিভূ সামরিক শাসক জেনারেল আয়ুব খানের চাপিয়ে দেয়া গণবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল তথাকথিত জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল করে সকলের জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠা এবং একটি গণমুখী বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সহজলভ্য আধুনিক শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা অর্জনের লক্ষ্যে ছাত্র সমাজ অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে আয়ুবের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আগস্ট মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বরের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা হয়। ছাত্র সমাজের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র সমাজের আন্দোলনের প্রতি সাধারণ জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানেও প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ ও জনগণেল মধ্যেও বিক্ষোভ এবং আন্দোলন প্রসারিত হতে থাকে।
১৯৫৯ সালে প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক আয়ুব খান তৎকালীন শিক্ষা সচিব এসএম শরিফকে চেয়ারম্যান করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। এই কমিশন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর লক্ষ্য ও স্বার্থের প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। ১৯৬২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আয়ুব সরকার এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এই তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’তে যে সকল বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেঃ শিক্ষাকে ব্যয় বহুল পণ্যের মতো শুধু উচ্চবিত্তের সন্তানদের স্বার্থে উচ্চশিক্ষাকে সীমিত করা এবং সাধারণের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ একেবারেই সংকুচিত করে ফেলা। শিক্ষা ব্যয় পুঁজিবিনিয়োগ হিসেবে দেখে শিক্ষার্থীরা তা বহন করে, যে অভিভাবক বেশি বিনিয়োগ করবেন তিনি বেশি লাভবান হবেন; অবৈতনিক শিক্ষার ধারণাকে ‘অবাস্তব কল্পনা’ বলে উল্লেখ; ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ইংরেজী পাঠ বাধ্যতামূলক; উর্দুকে জনগণের ভাষায় পরিণত করা; সাম্প্রদায়িকতাকে কৌশলে জিইয়ে রাখার চেষ্টা; ডিগ্রি কোর্সকে তিন বছর মেয়াদি করা, ইত্যাদি।
এই সকল বিষয় ছাত্র সমাজ এবং সচেতন মহলকে দারুণভাবে বিক্ষুব্ধ করে তুলে। এরই পরিণতিতে শিক্ষার দাবিতে ছাত্র সমাজের আন্দোলন ব্যাপক রূপলাভ করে এবং ১৭ সেপ্টেম্বরের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন আয়ুব সরকারকে বাধ্য করে ওই শিক্ষানীতি স্থগিত করতে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির পর সকল রাজনৈতিক দল ও কর্মকাণ্ড, ছাত্র সংগঠনসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের তৎপরতা বেআইনি করে সকল ধরনের মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়। চলে চরম দমননীতি। এরই মধ্যে ষাট সালের দিকে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা গোপন সমঝোতা ও যোগাযোগ রেখে নিজ নিজ সংগঠন গোছানোর এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু করেন। এভাবে ছাত্র সংগঠন দুটি ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকে এবং সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গেও যোগাযোগ গড়ে তোলে।
তৎকালীন দুই বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন এবং ডাকসু ও বিভিন্ন হল ও কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাধারণ ছাত্র সমাজের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়ে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। যার ফলে সকল আন্দোলন ও কর্মসূচির প্রতি সাধারণ ছাত্র সমাজের সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
একদিকে সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, অন্যদিকে চাপিয়ে দেয়া গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল এবং গণমুখী শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভে দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই পটভূমিতে বিভিন্ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারাদেশে হরতাল ঘোষণা করে। সামরিক শাসনের বিরম্নদ্ধে শিক্ষার দাবিতে ঐ হরতাল সারা দেশে অভূতপূর্ব সাফল্য এবং ছাত্র-জনতার ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আয়ুবের সামরিক শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। তখন সাধারণভাবে যে কোনো ধরনের আন্দোলন এমনকি ছাত্র সমাজের যে কোনো তৎপরতার ওপর ছিল সামরিক সরকার খগড় হস্ত। ১৯৬২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সূচিত আন্দোলন দমন করার জন্য গ্রেফতার, মামলা, হয়রানি, নির্যাতন, এমনকি বেত্রদণ্ডসহ বর্বরোচিতভাবে নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলন ও হরতাল কর্মসূচি ঠেকানোর জন্য চরম নির্যাতনমূলক পথ গ্রহণ করা হয়। ওই দিন ঢাকাসহ দেশের সকল শহরের রাজপথে বিরাট বিক্ষোভ মিছিল চলতে থাকে। লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস প্রভৃতি তা দমন করতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে ছাত্রদের একটি বিক্ষুব্ধ মিছিল আব্দুল গনি রোড হয়ে অগ্রসর হয়ে পুলিশ পেছনে থেকে অতর্কিতে মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করে। ঐদিন পুলিশের গুলিতে বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ শহীদ হন। বহু ছাত্র-জনতা পুলিশ ও ইপিআর-এর নির্যাতন ও গুলিতে সারাদেশে আহত হন।
১৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ছাত্র আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলে। ছাত্র সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সাধারণ জনগণ ছাত্র সমাজের প্রতি আরো দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। সারাদেশে তিন দিনব্যাপী শোকের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর পল্টন ময়দানে এক ছাত্র জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনগণের সমর্থিত ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়ে আয়ুবের সামরিক সরকার তথাকথিত ‘শিক্ষা শিক্ষানীতি’ স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরম্নদ্ধে এবং একটি গণমুখী সার্বজনীন আধুনিক শিক্ষানীতির দাবিতে ঐতিহাসিক ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র আন্দোলন ও শহীদদের আত্মদান তথা শিক্ষার ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক ১৭ সেপ্টেম্বরকে সেদিন ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বহু উত্থান-পতনের মধ্যেও প্রতি বছর এই দিনটি ছাত্র সমাজ এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলেই শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে। আজো শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে ১৭ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা দিবস’ অম্লান হয়ে আছে। সেই লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম আজো সম্পূর্ণ সফল হয়নি।
পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী তাদের কায়েমী স্বার্থ এবং শাসন শোষণ স্থায়ী করার লক্ষ্যে শিক্ষাকে ব্যবহার করার জন্য ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা চেয়েছিল শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে তাদের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আচ্ছন্ন করে রাখতে। তাই ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র জনতার ব্যাপক প্রতিরোধের যুগে তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ স্থগিত ঘোষণা করলেও আয়ুব খানের সরকার বা শাসকশ্রেণী তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
সরকার ১৯৬৪ সালে বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি কমিশন গঠন করে নতুন মোড়কে তাদের পরিকল্পিত শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থা কায়েমের পথ গ্রহণ করে। বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের নাম দেয়া হয়েছিল 'Commission on Students' Problem and Welfare' বা ‘ছাত্র সমস্যা ও কল্যাণ কমিশন’ এই কমিশন দ্রম্নতই বছরের মাঝামাঝি তাদের রিপোট প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করে। ‘হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নামে পরিচিত এই রিপোর্ট বাস্তবায়নের জন্য বহু চেষ্টা ও কৌশল গ্রহণ করেও প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার তা বাস্তবায়নে সক্ষম হয়নি। এরপরও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী হাল ছাড়েনি। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আয়ুব খানের ক্ষমতা ত্যাগ নিশ্চিত হলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসক জারি করে ক্ষমতায় বসেই সীমিত সময়ে নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা প্রদানের ঘোষণা দিয়ে সর্বাগ্রে আবারও শিক্ষানীতি প্রণয়নে প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই পুরনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য নতুন প্রজন্মের ওপর তাদের চিন্তা-চেতনা চাপিয়ে দেয়া। দেশের সমগ্র সমাজ এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে তা প্রত্যাখান করে। কেবল পাকিস্তানী ভাবধারা ও শাসক শ্রেণীর অনুসারী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির) ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকারের শিক্ষানীতির পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করে।
আমাদের গৌরবময় সকল সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরই প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-কুদার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশন স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি আধুনিক গণমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলেও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর প্রায় অর্ধডজন শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে আজো স্বাধীন দেশে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এবারের শিক্ষা দিবস এক নতুন সম্ভাবনাময় পরিস্থিতিতে উদযাপিত হচ্ছে। বিগত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে জনগণের অভূতপর্ব রায়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার গঠনের ফলে ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবসের মূল লক্ষ্য এবং জাতির আকাঙক্ষা বাস্তবায়নের এক বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে আজ বাস্তবায়িত করেই শিক্ষা দিবস’ এবং শিক্ষার জন্য আন্দোলনের সকল শহীদের স্বপ্ন সফল করে তোলা সম্ভব।
আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য আদর্শ ও চেতনা এবং ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন তথা শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ অর্থাৎ দারিদ্র্য, ক্ষুধা, নিরক্ষরতা, দুর্নীতি, পশ্চাদপদতার অবসান ঘটিয়ে আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে বাষট্টির ঐতিহাসিক শিক্ষানীতির আন্দোলনের ৪৭ বছর পর নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের অতীতের শিক্ষার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এ বছর শেষ হওয়ার পূর্বেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। খসড়া শিক্ষানীতি নিয়ে এই মুহূর্তে আমি এখানে কোন মন্তব্য না করাই সমিচীন মনে করছি। আমরা খসড়া শিক্ষানীতি সকলের মতামত গ্রহণের জন্য ওয়েব সাইটে দিয়েছি। আমরা সকলের মতামত নিয়েই তা চূড়ান্ত করতে চাই। (www.moedu.gov.bd)
শিক্ষা কোন দলীয়, গোষ্ঠীগত, আঞ্চলিক বা সাম্প্রদায়িক বিষয় নয়। শিক্ষা সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের বিষয়। আমরা আশা করব দেশের সকল শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মানুষ এবং দলমত নির্বিশেষে সাধারণ জনগণ তাদের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ দিয়ে প্রস্তাবিত খসড়া শিক্ষানীতিকে চূড়ান্ত করার কাজে এগিয়ে আসবেন।
আসুন আমাদের শিক্ষার জন্য ঐতিহাসিক আন্দোলনের ৪৭তম বার্ষিকীতে শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাবিদ, তথা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল মহল এবং সকল শ্রেণীর মানুষ তাদের মতামত ও পরামর্শ দিয়ে ১৯৬২ সালে একটি গণমুখী শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রামের শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি।
আমাদের শিক্ষার অধিকার এবং গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, যুগোপযোগী প্রগতিশীল একটি শিক্ষানীতির জন্য প্রায় অর্ধশতাধিক ধরে যে সংগ্রাম অব্যাহতভাবে চলমান তারই সফল পরিণতি হলো এবারের শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতির চূড়ান্ত করণ এবং বাস্তবায়ন সকলের কাছে সবিনয় আহ্বান_ আপনাদের সকলের সাহায্য-সহযোগিতা এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠাই হবে এর সাফল্যের আসল শক্তি।
আমাদের সকল শহীদ এবং জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকেই তা করে যেতে হবে।
[লেখক : সংসদ সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী]
(বানানজনিত কিছু যান্ত্রিকত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে। পুনঃপ্রকাশের উপর কোন রকম বিধিনিষেধ থাকলে এই পোস্টটি মুছে ফেলা হবে।)
সংগ্রহ করা হয়েছে ইত্তেফাক পত্রিকা থেকে।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)