বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

শিক্ষা দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী : অর্জনের সম্ভাবনাঃ নুরুল ইসলাম নাহিদ

আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, শিক্ষা দিবস। পূর্ববর্তী বছরগুলোর শিক্ষা দিবসে কোন শিক্ষামন্ত্রী গণসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কোন প্রবন্ধ লিখেছেন বলে আমার জানা নেই। বর্তমান সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এর লেখা একটি প্রবন্ধ আজকের পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধটির শিরোনাম: "শিক্ষা দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী: অর্জনের সম্ভাবনা" আমি সম্পূর্ণ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর লেখাটি আমার ব্লগে প্রকাশ করলাম।


শিক্ষা দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী : অর্জনের সম্ভাবনা

নুরুল ইসলাম নাহিদ

বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের প্রতীক ১৭ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক ‘শিক্ষা দিবস’। শিক্ষার জন্য সংগ্রাম ত্যাগ বিজয় গৌরব ও ঐতিহের প্রতীক এই শিক্ষা দিবসের এবার ৪৭তম বার্ষিকী। আজ থেকে ৪৭ তম বার্ষিকী। আজ থেকে ৪৭ বছর পূর্বে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিভূ সামরিক শাসক জেনারেল আয়ুব খানের চাপিয়ে দেয়া গণবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল তথাকথিত জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল করে সকলের জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠা এবং একটি গণমুখী বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সহজলভ্য আধুনিক শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা অর্জনের লক্ষ্যে ছাত্র সমাজ অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে আয়ুবের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আগস্ট মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বরের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা হয়। ছাত্র সমাজের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র সমাজের আন্দোলনের প্রতি সাধারণ জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানেও প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ ও জনগণেল মধ্যেও বিক্ষোভ এবং আন্দোলন প্রসারিত হতে থাকে।

১৯৫৯ সালে প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক আয়ুব খান তৎকালীন শিক্ষা সচিব এসএম শরিফকে চেয়ারম্যান করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। এই কমিশন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর লক্ষ্য ও স্বার্থের প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। ১৯৬২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আয়ুব সরকার এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

এই তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’তে যে সকল বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেঃ শিক্ষাকে ব্যয় বহুল পণ্যের মতো শুধু উচ্চবিত্তের সন্তানদের স্বার্থে উচ্চশিক্ষাকে সীমিত করা এবং সাধারণের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ একেবারেই সংকুচিত করে ফেলা। শিক্ষা ব্যয় পুঁজিবিনিয়োগ হিসেবে দেখে শিক্ষার্থীরা তা বহন করে, যে অভিভাবক বেশি বিনিয়োগ করবেন তিনি বেশি লাভবান হবেন; অবৈতনিক শিক্ষার ধারণাকে ‘অবাস্তব কল্পনা’ বলে উল্লেখ; ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ইংরেজী পাঠ বাধ্যতামূলক; উর্দুকে জনগণের ভাষায় পরিণত করা; সাম্প্রদায়িকতাকে কৌশলে জিইয়ে রাখার চেষ্টা; ডিগ্রি কোর্সকে তিন বছর মেয়াদি করা, ইত্যাদি।

এই সকল বিষয় ছাত্র সমাজ এবং সচেতন মহলকে দারুণভাবে বিক্ষুব্ধ করে তুলে। এরই পরিণতিতে শিক্ষার দাবিতে ছাত্র সমাজের আন্দোলন ব্যাপক রূপলাভ করে এবং ১৭ সেপ্টেম্বরের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন আয়ুব সরকারকে বাধ্য করে ওই শিক্ষানীতি স্থগিত করতে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির পর সকল রাজনৈতিক দল ও কর্মকাণ্ড, ছাত্র সংগঠনসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের তৎপরতা বেআইনি করে সকল ধরনের মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়। চলে চরম দমননীতি। এরই মধ্যে ষাট সালের দিকে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা গোপন সমঝোতা ও যোগাযোগ রেখে নিজ নিজ সংগঠন গোছানোর এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু করেন। এভাবে ছাত্র সংগঠন দুটি ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকে এবং সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গেও যোগাযোগ গড়ে তোলে।

তৎকালীন দুই বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন এবং ডাকসু ও বিভিন্ন হল ও কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাধারণ ছাত্র সমাজের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়ে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। যার ফলে সকল আন্দোলন ও কর্মসূচির প্রতি সাধারণ ছাত্র সমাজের সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।

একদিকে সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, অন্যদিকে চাপিয়ে দেয়া গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল এবং গণমুখী শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভে দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই পটভূমিতে বিভিন্ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারাদেশে হরতাল ঘোষণা করে। সামরিক শাসনের বিরম্নদ্ধে শিক্ষার দাবিতে ঐ হরতাল সারা দেশে অভূতপূর্ব সাফল্য এবং ছাত্র-জনতার ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আয়ুবের সামরিক শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। তখন সাধারণভাবে যে কোনো ধরনের আন্দোলন এমনকি ছাত্র সমাজের যে কোনো তৎপরতার ওপর ছিল সামরিক সরকার খগড় হস্ত। ১৯৬২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সূচিত আন্দোলন দমন করার জন্য গ্রেফতার, মামলা, হয়রানি, নির্যাতন, এমনকি বেত্রদণ্ডসহ বর্বরোচিতভাবে নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলন ও হরতাল কর্মসূচি ঠেকানোর জন্য চরম নির্যাতনমূলক পথ গ্রহণ করা হয়। ওই দিন ঢাকাসহ দেশের সকল শহরের রাজপথে বিরাট বিক্ষোভ মিছিল চলতে থাকে। লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস প্রভৃতি তা দমন করতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে ছাত্রদের একটি বিক্ষুব্ধ মিছিল আব্দুল গনি রোড হয়ে অগ্রসর হয়ে পুলিশ পেছনে থেকে অতর্কিতে মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করে। ঐদিন পুলিশের গুলিতে বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ শহীদ হন। বহু ছাত্র-জনতা পুলিশ ও ইপিআর-এর নির্যাতন ও গুলিতে সারাদেশে আহত হন।

১৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ছাত্র আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলে। ছাত্র সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সাধারণ জনগণ ছাত্র সমাজের প্রতি আরো দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। সারাদেশে তিন দিনব্যাপী শোকের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর পল্টন ময়দানে এক ছাত্র জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনগণের সমর্থিত ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়ে আয়ুবের সামরিক সরকার তথাকথিত ‘শিক্ষা শিক্ষানীতি’ স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরম্নদ্ধে এবং একটি গণমুখী সার্বজনীন আধুনিক শিক্ষানীতির দাবিতে ঐতিহাসিক ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র আন্দোলন ও শহীদদের আত্মদান তথা শিক্ষার ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক ১৭ সেপ্টেম্বরকে সেদিন ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বহু উত্থান-পতনের মধ্যেও প্রতি বছর এই দিনটি ছাত্র সমাজ এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলেই শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে। আজো শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে ১৭ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা দিবস’ অম্লান হয়ে আছে। সেই লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম আজো সম্পূর্ণ সফল হয়নি।

পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী তাদের কায়েমী স্বার্থ এবং শাসন শোষণ স্থায়ী করার লক্ষ্যে শিক্ষাকে ব্যবহার করার জন্য ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা চেয়েছিল শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে তাদের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আচ্ছন্ন করে রাখতে। তাই ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র জনতার ব্যাপক প্রতিরোধের যুগে তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ স্থগিত ঘোষণা করলেও আয়ুব খানের সরকার বা শাসকশ্রেণী তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।

সরকার ১৯৬৪ সালে বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি কমিশন গঠন করে নতুন মোড়কে তাদের পরিকল্পিত শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থা কায়েমের পথ গ্রহণ করে। বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের নাম দেয়া হয়েছিল 'Commission on Students' Problem and Welfare' বা ‘ছাত্র সমস্যা ও কল্যাণ কমিশন’ এই কমিশন দ্রম্নতই বছরের মাঝামাঝি তাদের রিপোট প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করে। ‘হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নামে পরিচিত এই রিপোর্ট বাস্তবায়নের জন্য বহু চেষ্টা ও কৌশল গ্রহণ করেও প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার তা বাস্তবায়নে সক্ষম হয়নি। এরপরও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী হাল ছাড়েনি। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আয়ুব খানের ক্ষমতা ত্যাগ নিশ্চিত হলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসক জারি করে ক্ষমতায় বসেই সীমিত সময়ে নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা প্রদানের ঘোষণা দিয়ে সর্বাগ্রে আবারও শিক্ষানীতি প্রণয়নে প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই পুরনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য নতুন প্রজন্মের ওপর তাদের চিন্তা-চেতনা চাপিয়ে দেয়া। দেশের সমগ্র সমাজ এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে তা প্রত্যাখান করে। কেবল পাকিস্তানী ভাবধারা ও শাসক শ্রেণীর অনুসারী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির) ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকারের শিক্ষানীতির পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করে।

আমাদের গৌরবময় সকল সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরই প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-কুদার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশন স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি আধুনিক গণমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলেও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর প্রায় অর্ধডজন শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে আজো স্বাধীন দেশে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

এবারের শিক্ষা দিবস এক নতুন সম্ভাবনাময় পরিস্থিতিতে উদযাপিত হচ্ছে। বিগত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে জনগণের অভূতপর্ব রায়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার গঠনের ফলে ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবসের মূল লক্ষ্য এবং জাতির আকাঙক্ষা বাস্তবায়নের এক বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে আজ বাস্তবায়িত করেই শিক্ষা দিবস’ এবং শিক্ষার জন্য আন্দোলনের সকল শহীদের স্বপ্ন সফল করে তোলা সম্ভব।

আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য আদর্শ ও চেতনা এবং ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন তথা শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ অর্থাৎ দারিদ্র্য, ক্ষুধা, নিরক্ষরতা, দুর্নীতি, পশ্চাদপদতার অবসান ঘটিয়ে আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে বাষট্টির ঐতিহাসিক শিক্ষানীতির আন্দোলনের ৪৭ বছর পর নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের অতীতের শিক্ষার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এ বছর শেষ হওয়ার পূর্বেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। খসড়া শিক্ষানীতি নিয়ে এই মুহূর্তে আমি এখানে কোন মন্তব্য না করাই সমিচীন মনে করছি। আমরা খসড়া শিক্ষানীতি সকলের মতামত গ্রহণের জন্য ওয়েব সাইটে দিয়েছি। আমরা সকলের মতামত নিয়েই তা চূড়ান্ত করতে চাই। (www.moedu.gov.bd)

শিক্ষা কোন দলীয়, গোষ্ঠীগত, আঞ্চলিক বা সাম্প্রদায়িক বিষয় নয়। শিক্ষা সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের বিষয়। আমরা আশা করব দেশের সকল শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মানুষ এবং দলমত নির্বিশেষে সাধারণ জনগণ তাদের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ দিয়ে প্রস্তাবিত খসড়া শিক্ষানীতিকে চূড়ান্ত করার কাজে এগিয়ে আসবেন।

আসুন আমাদের শিক্ষার জন্য ঐতিহাসিক আন্দোলনের ৪৭তম বার্ষিকীতে শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাবিদ, তথা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল মহল এবং সকল শ্রেণীর মানুষ তাদের মতামত ও পরামর্শ দিয়ে ১৯৬২ সালে একটি গণমুখী শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রামের শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি।

আমাদের শিক্ষার অধিকার এবং গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, যুগোপযোগী প্রগতিশীল একটি শিক্ষানীতির জন্য প্রায় অর্ধশতাধিক ধরে যে সংগ্রাম অব্যাহতভাবে চলমান তারই সফল পরিণতি হলো এবারের শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতির চূড়ান্ত করণ এবং বাস্তবায়ন সকলের কাছে সবিনয় আহ্বান_ আপনাদের সকলের সাহায্য-সহযোগিতা এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠাই হবে এর সাফল্যের আসল শক্তি।

আমাদের সকল শহীদ এবং জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকেই তা করে যেতে হবে।

[লেখক : সংসদ সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী]

(বানানজনিত কিছু যান্ত্রিকত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে। পুনঃপ্রকাশের উপর কোন রকম বিধিনিষেধ থাকলে এই পোস্টটি মুছে ফেলা হবে।)
সংগ্রহ করা হয়েছে ইত্তেফাক পত্রিকা থেকে।

৩টি মন্তব্য:

Md. Khalid Umar বলেছেন...

সেদিন স্মৃতিকণায় গিয়ে কিছু স্মৃতি ফেলে এসেছেন দেখে খুশি হলাম। আমি ভাই ভবঘুরে বাউন্ডুল মানুষ, কোন চাল চুলো নেই, যেখানেই রাত সেখানেই কাত। নিজে কানাচন্ডি বলে যার হাতে মশাল আছে তার পিছনেই ছুটতে চাই, কখনো পারি কখনো পারি না। জীবনের ৩২টি বাঙ্গালি বছর কোথা দিয়ে হারিয়ে গেছে বলে এক পাতা লিখতে গিয়ে ৩৪ হাজার বানান ভুল করি তাই আপনাদের মত গুনি জনের কাছে ঘেষতে সাহস পাই না কিন্তু কি করবো, দূরেও থাকতে পারি না, মনটা ছটফট করে।

আপনার রাজকুমারী চন্দ্রাবতির কি নাম রাখলেন? সুন্দর একটা বাঙ্গালি নাম যেন হয়।
আবার দেখা হবে এই আশায় আপনার কৌতুহল আজও তিমিরেই রেখে গেলাম।

সুশান্ত কর বলেছেন...

একজন শিক্ষামন্ত্রী এমন ভাবেন দেখে ভাল্লাগল। কিন্তু কাজ কদ্দূর এগুলো? এগুলো কি? সবচাইতে আনন্দের কথা যে আপনাদের দেশে ছাত্র আন্দোলনে উজ্জ্বল একটি দিনকে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আমাদের দেশে তেমন কিছু নেই। রাধাকৃষ্ণান বলে এক বেদান্তবাদী দার্শনিকের জন্মদিনকে শিক্ষক দিবস করে রেখেছে। রবীন্দ্রনাথকে ধুলোয় লুটিয়েছে। সে দিন কিছু শিক্ষককে পুরস্কার দেয়। বেশির ভাগকেই পুলিশ পেটায় ধরে ধরে !!!

সুশান্ত বর্মন বলেছেন...

হ্যাঁ, আমাদের আনন্দ এই যে, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর মধ্যে শিক্ষার প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা আছে। প্রস্তাবিত নতুন শিক্ষানীতি দেখেছেন কি? দেশের প্রতি কতটা মমত্ববোধ থাকলে এরকম শিক্ষানীতি তৈরি করা সম্ভব তা একবার পড়লেই বুঝতে পারবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 

About Me

আমার ফটো
শিক্ষাজীবী। গ্রন্থপাঠ এবং ভ্রমণ আমার প্রিয় বিষয়।

শিশুদের বইয়ের ওয়েব সাইট

বইয়ের খোঁজ

আর্কাইভ