বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০০৮

কিছু কথা

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা এমন হয়ে গেছে যে এখন আমরা পড়াশোনা করি শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে। শিক্ষা আমাদের আর বন্ধু নয়। শিক্ষাকে আমরা দাস বানিয়ে ফেলেছি। একটি সার্টিফিকেট পেলেই হল। সেখানে যদি কিছু অতিরিক্ত নম্বর থাকে তাহলে তো সোনায় সোহাগা। ভাল আয়ের চাকুরী অবশ্যম্ভাবী। চাকুরীর পিছনে ঘুরতে হবে না। চাকুরীই পিছনে পিছনে ঘুরবে।

কিন্তু বাস্তব অবস্থা এমন হওয়ার কথা ছিল না। ব্রিটিশ আমলের শিক্ষা কমিশন (১৮৮২ সালের হান্টার কমিশন) দুই রকম শিক্ষাক্রমের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এবং বি তে যারা পড়বে তারা জ্ঞানার্জনের জন্য পড়াশোনা করবে আর যারা (সাহিত্যধর্মী) বি তে পড়বে তারা অর্থউপার্জনের উদ্দেশ্যে পড়বে। বি তে ছিল বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়গুলো (বাণিজ্য ও কারিগরি বিদ্যা সম্পর্কিত)। বর্তমানে আমরা না বুঝে সন্তানকে তে পড়াই কিন্তু আশা করি যে, সে অর্থ উপার্জন করবে। এটা পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সহজলভ্য নয়। ফলে আমাদের সন্তানেরা আটকে যায় বেকারত্বের ফাঁদে। এ অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি।

স্বাধীনতার পূর্বের চাইতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় বই প্রকাশের হার ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই তুলনায় পাঠক সংখ্যা বাড়েনি। অথচ পাঠক সংখ্যা বেড়ে যাওয়া উচিত ছিল। চিত্তরঞ্জন দাস তার মুক্তধারা নিয়ে বাংলা একাডেমির পাশে বই মেলা শুরু করলেন। প্রতি বছর বইমেলার পরিধি বাড়ছে। কিন্তু মোট শিক্ষিতের তুলনায় পাঠক সংখ্যা এখনও অনেক কম। আর বই বিক্রিও হয় শুধুমাত্র বইমেলার আয়োজনকে উপলক্ষ্য করে। বাঙালি মেলাতে বই কেনে। অন্যান্য মেলাতে পুতুল, জিলাপি, চুড়ি, ফিতা কিনতে যেমন আনন্দ পায় ঠিক তেমন বই মেলাতেও বই কিনতে তেমন আনন্দ পায়। তারা যেন আনন্দের জন্যই বই কেনে, জানার জন্য নয়। আর বছরের সারাটা সময় বইয়ের দোকানগুলো অলস বসে থাকে। বই বিক্রির হার কখনো কখনো শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। লেখকরাও এটা জানেন। তাদেরও লক্ষ্য থাকে বই মেলা। আমার কাছে বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে বোধগম্যতার বাইরের বলে মনে হয়। এমনটা কেন হবে? বই পড়া কী শুধু আনন্দের ব্যাপার? বই পড়ে কি কোন জ্ঞানার্জন হয়না? বই পড়ে কি আমরা ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য কিছুই জানতে পারিনা? বোধহয় না। কারণ এ ধরণের বই পড়া হয় শুধুমাত্র একাডেমিক প্রয়োজনে। সমসাময়িক সাধারণ পাঠকেরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে সুখপাঠ্য গ্রন্থাবলি। কালজয়ী উপন্যাস, বা অনবদ্য কবিতার মর্ম বোঝার দায় খুব কম মানুষই বোধ করে।

তা সে যাই হোক। এই ব্লগটি আমার বই পড়া বিষয়ক বিভিন্ন অনুভূতির বহির্প্রকাশ। গ্রন্থপাঠ কখনো আনন্দের, কখনো দু:খের, কখনো আমি অবাক, আবার কখনও বা শিখে ফেলি অনেক কিছু। পাঠপরিক্রমার পাশাপাশি শিক্ষা সম্পর্কিত আমার বিভিন্ন ভাবনাগুলোকেও এখানে প্রকাশিত করব বলে প্রত্যাশা করি। বস্তুত: আমার পাঠঅভিজ্ঞতা ও পাঠ পরামর্শকে খুঁজে পাওয়া যাবে আমার এই পাঠাগার ব্লগে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 

About Me

আমার ফটো
শিক্ষাজীবী। গ্রন্থপাঠ এবং ভ্রমণ আমার প্রিয় বিষয়।

শিশুদের বইয়ের ওয়েব সাইট

বইয়ের খোঁজ

আর্কাইভ