সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০০৮

কার্লসাগান: এক মহাজাগতিক পথিক

নারায়ণগঞ্জের 'ডিসকাশন প্রজেক্ট' বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত নাম। পেশাদার বিজ্ঞান বক্তা হিসেবে এই সংগঠনের উদ্যোক্ত (প্রতিষ্ঠাতা) আসিফ বেশ নাম করেছেন। আমি নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে তার বাসায় গিয়েছিলাম। তাকে দেখতে ও ডিসকাশন প্রজেক্টকে জানতে। আসিফ এর সংগ্রহ দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। তার সংগ্রহে অনেক পুরনো বই আছে যেগুলো দুর্লভ। আসিফ এর প্রধান আগ্রহ মহাকাশ নিয়ে। মহাকাশ বিজ্ঞানে তাকে একজন অপ্রাতিষ্ঠানিক পণ্ডিত বলা যায়। তার বিজ্ঞানবক্তৃতাগুলোও মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে। ফেব্রুয়ারি ২০০১ সালে সাহিত্য প্রকাশ থেকে তার একটি বই বের হয়েছে। নাম কার্লসাগান: এক মহাজাগতিক পথিক। বইটার নামকরণেই বোঝা যায় বিষয়বস্তুর কথা। কার্লসাগান তার মহাকাশ বিষয়ক বক্তৃতা দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন ব্যক্তিত্ব। তার একাধিক ভিডিও আমি দেখেছি। এই মুহূর্তে নামগুলো মনে পড়ছেনা। একটি নাম বোধ হয় কসমস

প্রাণের উৎপত্তি, প্রাকৃতিক নির্বাচন, মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে আলোচনা, ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা ইত্যাদি আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে বইটি সাজানো। আসিফ সুবক্তা তো আছেনই, তিনি সুলেখকও বটে। বইটির ভূমিকার একটি প্যারা উদ্ধৃত করার লোভ সামলানো গেল না।
কতটুকু জানলে আমাদের লাভ হবে আর কতটুকু না জানলে চলবে এই ভেবে কখনো জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হতে পারে না। খুব কম ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে এধরনের মনোভাব আমাদের জ্ঞানের বিকাশকে পুরোপুরি রুদ্ধ করে দেবে। প্রত্যেকে জ্ঞানচর্চা করেছে কৌতুহল থেকে, মনের অভাববোধ তেকে, তার অসংখ্য প্রমাণ আছে। পরে দেখা গেছে এগুলো দ্বারা সমাজ ভালোভাবে উপকৃত হয়েছে। একবার ইউক্লিডের কাছে শিক্ষারত জনৈক ছাত্র জ্যামিতির প্রথম পাঠ নেয়ার পর জিগ্যেস করেছিলেন, "এইগুলো শিখে আমার কী লাভ হবে?" এই কথা শুনে ইউক্লিড তাঁর দাসকে ডাকলেন এবং বললেন, "একে একটি মুদ্রা দান কর, কারণ সে যা শেখে তার দ্বারা সব সময় লাভ করতে চায়।" আজকালও এরকম অসংখ্য নির্বোধ আছেন যাঁরা জ্ঞানার্জনকে হাতেনাতে লাভজনক হিসেবে দেখতে চান। তাঁরা এতে সফল হলে জ্ঞান অর্জন বিষয়টা সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হবে। আমাদের দেশে এমনি চিন্তার চরম বিকাশ ঘটেছে। আমরা নাম্বারবাজ জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছি যার সমর্থন যোগাচ্ছে দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পদ্ধতি। এটা এখন এমন অবস্থায় পৌছে গেছে যে জ্ঞান অর্জন বিষয়টা পুরোপুরি অন্তর্ধানের পথে। একবার ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭)-কে বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় আবেশ আবিষ্কার সম্পর্কে রাণী ভিক্টোরিয়া জিগ্যেস করেছিলেন, "এর ব্যবহার কি?" তখন ফ্যারাডে উত্তর দিয়েছিলেন, "ম্যাডাম সদ্যোজাত শিশুর উপযোগিতা কি?" আজ ১৫০ বছর পরে আমরা জানি বিদ্যূতের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুললে মানুষ হাসবে।
আসিফ নিজে কার্ল সাগানের প্রতি প্রবলভাবে আসক্ত এটা তার একাধিক বক্তৃতাতেও বোঝা যায়। তিনি এই বইটা লিখে তার ভাললাগা ব্যক্তিত্ব ও লেখাগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলেছেন। সহজ ভাষায়, বিজ্ঞানের জটিল পরিভাষাকে এড়িয়ে বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করা মোটেও সহজ নয়। সেই সহজ কাজটি আসিফ দারুণভাবে করতে পেরেছেন এই জন্য তিনি ধন্যবাদার্হ হয়ে রইলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 

About Me

আমার ফটো
শিক্ষাজীবী। গ্রন্থপাঠ এবং ভ্রমণ আমার প্রিয় বিষয়।

শিশুদের বইয়ের ওয়েব সাইট

বইয়ের খোঁজ

আর্কাইভ