tag:blogger.com,1999:blog-80546117986030501332024-02-20T22:41:24.942+06:00পাঠাগারপাঠ অনুভূতি, পাঠ অভিজ্ঞতা, পাঠ অনুধাবন, পাঠ সূত্রসুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.comBlogger40125tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-56932659328779615232010-09-16T09:51:00.000+06:002020-04-04T09:53:08.067+06:00যদি সবাই ই-বই পড়তে শুরু করি তাহলে?<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjHj4xE9J0l50pfkuIwKq0Pmro7dxpcZomV0kZSVTO4OGLc2iPlWhyphenhyphentBEz9RVOgZPjI_YefI-KMIxSYMvVJRXuUX0KWot65KxhPzd8uXLK0U98ys6UTlL5Evmui1WDo82TMpsKkIytcAS8/s1600/500x_bookdesk.jpg" onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}"><img alt="কাগজের তৈরি টেবিল" border="0" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5517431584186207890" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjHj4xE9J0l50pfkuIwKq0Pmro7dxpcZomV0kZSVTO4OGLc2iPlWhyphenhyphentBEz9RVOgZPjI_YefI-KMIxSYMvVJRXuUX0KWot65KxhPzd8uXLK0U98ys6UTlL5Evmui1WDo82TMpsKkIytcAS8/s320/500x_bookdesk.jpg" style="cursor: pointer; display: block; height: 194px; margin: 0px auto 10px; text-align: center; width: 320px;" /></a>আমরা সবাই যদি প্রচলিত কাগজে প্রিন্ট করা বই পড়া ছেড়ে দিয়ে ইলেকট্রনিক ফরমেটে ই-বই (পিডিএফ ইত্যাদি) পড়া শুরু করি, তাহলে কি হবে? কাগজে প্রিন্ট করা কোটি কোটি বইগুলোর কি গতি হবে? <a href="http://gizmodo.com/5639265/this-is-whatll-happen-if-we-all-start-reading-ebooks">এই লিংকে</a> একটা ছবি দেখলাম। দেখা গেল কাগজের বইগুলো দিয়ে একজন ব্যক্তি টেবিল তৈরি করেছেন। আর সেই টেবিলের উপরে ল্যাপটপ রেখে ই-বুক পড়ছেন। সত্যি সত্যি এমন অবস্থা হবে নাকি? মনে হয় না। নাকি, হলেও হতে পারে?সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-43765816176870088332010-07-11T09:53:00.000+06:002020-04-04T09:54:21.281+06:00৫ম বার্ষিক ই-বই মেলা চলছে<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiIZm824qulO08-qUPz-JqZO6Q6rnpnivMhM9vMzpk2oe4A3sJFE6WjQ0IFRjFqyuty2vQmxKeipYVmHpE1Lx_iWncn2ipqKhTPhB-mBnx_qjslBxUO_hSJC992gMv3U5OMz3_vXNdX_pg/s1600/worldebookfair2010.jpeg" onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}"><img alt="বিশ্ব ই বই মেলা" border="0" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5492657247172714418" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiIZm824qulO08-qUPz-JqZO6Q6rnpnivMhM9vMzpk2oe4A3sJFE6WjQ0IFRjFqyuty2vQmxKeipYVmHpE1Lx_iWncn2ipqKhTPhB-mBnx_qjslBxUO_hSJC992gMv3U5OMz3_vXNdX_pg/s200/worldebookfair2010.jpeg" style="cursor: pointer; display: block; height: 200px; margin: 0px auto 10px; text-align: center; width: 106px;" /></a>আবারো শুরু হয়েছে ই-বই মেলা। মেইলবক্সে খবরটি আগেই পেয়েছি। কিন্তু অসুস্থতার কারণে জানাতে দেরী হয়ে গেল। <br />
<blockquote>
Project Gutenberg (http://www.gutenberg.org) এর প্রতিষ্ঠাতা Michael S. Hart মেইলে জানিয়েছেন যে,<br />
এবারে ৩.৭ মিলিয়ন বই নিয়ে মেলাটি শুরু হয়েছে। গত এক বছরে প্রায় ১ মিলিয়ন ই বই মেলার জন্য তৈরি করা হয়েছে। মেলা চলবে ৪ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত।</blockquote>
আর হ্যাঁ, এবার পালিত হচ্ছে ই বই উদ্ভাবনের ৪০ তম বার্ষিকী। উল্লেখ্য যে, মূল সাইটে কোন বই রাখা হয়নি। যে সব ই বই প্রকাশক মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের সাইটের লিংক দিয়ে সাজানো 'কালেকশন' বোতামটি চাপলে সবাইকে একসাথে পাওয়া যাবে। এক জায়গা থেকে কোন পছন্দের বই খোঁজা যাবে, কিংবা তাদের সাইটে গিয়েও বই সংগ্রহ করা যাবে। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গবেষণাপত্র, রিপোর্ট নানারকমের বই সংগ্রহে আগ্রহীরা অনলাইন ই-বই মেলাতে একবারের জন্য হলেও ঢু মারবে সেই প্রত্যাশা করি। সেই সাথে অপেক্ষা করছি একটি জমজমাট বাংলা ই বই মেলার।<br />
<div style="text-align: center;">
ই বই মেলার ঠিকানা<a href="http://www.worldebookfair.org/"> http://www.worldebookfair.org/</a></div>
সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-62165883536625066332010-02-25T20:03:00.009+06:002010-02-25T22:19:53.743+06:00বইমেলা ২০১০: যে বইগুলো কিনতে চাই-০২গত ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত <a href="http://pathagar.blogspot.com/2010/02/blog-post.html">এবারে যে বইগুলো কিনতে চাই- ০১</a> এর পরে আরও কিছু বইয়ের তালিকা করেছি। তালিকাটি নিম্নরূপঃ<br /><ol><li>কত অজানারে- করুণাময় গোস্বামী। চয়ন</li><li>বাংলা ভাষার আধুনিক যুগ- মাহবুবুল হক। মনন</li><li>দ্বৈত পাহাড়ের ক্ষুদে মানুষ- বিপ্রদাস বড়ুয়া। অ্যাডর্ন</li><li>বাঙালির ঐতিহ্য ও ভবিষ্যত- মোনায়েম সরকার। বিউটি</li><li>বজ্রকণ্ঠ থেমে গেল- আসাদ চৌধুরী। পাঞ্জেরী</li><li>বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা- প্রিয় রঞ্জন দত্ত। মিজান</li><li>জেনানা জবান- শাহানা আকতার মহুয়া। কথা প্রকাশ</li><li>নুরনামা- আব্দুল হাকিম। লেখালেখি</li><li>একগুচ্ছ গল্প- নাসরীন জাহান। লেখালেখি</li><li>ভালোবাসার দিনে- সৈয়দ শামসুল হক। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স</li><li>বাড়ি ও বনিতা- আনোয়ারা সৈয়দ হক। "</li><li>আবাস ভূমি- মঞ্জু সরকার। "</li><li>রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ- মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী</li><li>দ্রোহে প্রেমে কবিতার মত- কামাল লোহানী। শোভা প্রকাশ</li><li>সংগঠন ও বাঙালি- আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। মাওলা ব্রাদার্স</li><li>বাংলাদেশে গণতন্ত্র- তারেক শামসুর রেহমান। কথা প্রকাশ</li><li>ঐ যে স্ট্রেচার আসছে- মনিরা কায়েস</li><li>নারীবাদী গল্প- নাসরীন জাহান</li><li>আস্কর আলী পণ্ডিতের দুর্লভ পুঁথি (জ্ঞান চৌতিসা ও পঞ্চসতী প্যায়জান) - শামসুল আরেফীন। বলাকা</li><li>প্রসঙ্গ মৌলবাদ- যতীন সরকার। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী</li><li>কালচিত্র ও বিম্বিত চিন্তা- ফারুক যোশী।"</li><li>সমাজতন্ত্রের সহজ পাঠ- শাহীন রহমান।"</li><li>ফুলবাড়ী কয়লা খনি ও বহুজাতিকের স্বপ্নভঙ্গ- বিপ্লব দাস।"</li><li>অগ্নিযুগের পাঁচ বিপ্লবী- উৎপল সাহা।"</li><li>গণমানুষের নেতা কমরেড বরুণ রায়- প্রণতি চক্রবর্তী।"</li><li>ভূমি ও কুসুম- সেলিনা হোসেন। অনিন্দ্য প্রকাশনী</li><li>তিনটি উপন্যাসিকা- হাসান আজিজুল হক। "</li><li>বধ্যভূমি: বিচ্ছিন্ন স্মৃতি- আর কে চৌধুরী। পারিজাত প্রকাশনী</li><li>প্রেস জোকস- বিপ্লব রহমান। শুদ্ধস্বর</li><li>চিন থেকে ফিরে- রাশেদ খান মেনন</li><li>মুক্তিযুদ্ধ ৭১- মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। মেলা</li><li>অধ্যাপকের ডায়েরি- আ ন ম আবদুস সোবহান। মুক্তচিন্তা</li><li>প্রণীত জীবন- সৈয়দ শামসুল হক। ইত্যাদি</li><li>বিজ্ঞানের ইতিহাস- শ্রী সমরেন্দ্রনাথ সেন। দিব্য প্রকাশ</li><li>সুরমা উপত্যকার চা-শ্রমিক আন্দোলনঃ অতীত ও বর্তমান- ইসহাক কাজল। ইত্যাদি</li><li>বাদুর ও ব্র্যান্ড- শাহনাজ মুন্নি। অ্যাডর্ন</li><li>রাজনীতির তিন অধ্যায়- আবু সাঈদ। রিদম প্রকাশনা</li><li>বিশ্বব্যাংক আইএম এফ এডিবি গণট্রাইবুনাল- (লেখক জানা যায়নি)। সংহতি প্রকাশনী</li><li>নারী-পুরুষ বৈষম্যঃ জীবতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট- মনিরুল ইসলাম। "</li><li>সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে- ফারুক মঈনউদ্দীন। অবসর</li><li>বাংলার ঐতিহ্য- মৃত্যুঞ্জয় রায়। ঐতিহ্য</li><li>বাংলাদেশের ছবি- বিদ্যুত রঞ্জন দেবনাথ। উৎস</li><li>রঙের জাতক- নির্মলেন্দু গুণ। বাংলা প্রকাশ</li><li>কমলকুমার চরিতম- শোয়াইব জিবরান। শুদ্ধস্বর</li><li>সংসদ বিতর্ক- সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আগামী প্রকাশনী</li><li>তাজউদ্দীন আহমদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা- ড. কামাল হোসেন। মাওলা ব্রাদার্স</li><li>গল্পে গল্পে ব্যাকরণ- যতীন সরকার। সাহিত্য প্রকাশনী</li><li>লোকপুরাণের বিনির্মাণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ- জফির সেতু। শুদ্ধস্বর</li><li>মুক্তবাজারের দুর্বৃত্তায়ন- আসজাদুল কিবরিয়া। জাগৃতি</li><li>জন্মেই আমার আজন্ম পাপ- দাউদ হায়দার। নওরোজ</li><li>ঐতিহাসিকের নোটবুক- সিরাজুল ইসলাম। কথাপ্রকাশ</li><li>বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাস ভাববিদ্রোহ- প্রীতি কুমার মিত্র। সাহিত্য প্রকাশ</li><li>বাংলা সাহিত্যে সংস্কারচেতনাঃ মুসলিম সমাজ- স্বরোচিষ সরকার</li><li>শিল্পের শক্তি- আহমাদ মোস্তফা কামাল। অ্যাডর্ন</li><li>অবনাগমন- সাইমন জাকারিয়া</li><li>সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান- আহমেদ আমিন চৌধুরী। ঊৎস প্রকাশন</li><li>অগ্রন্থিত গল্প-১ম খণ্ড- মাহমুদুল হক, সম্পাদনা- আবু হেনা মোস্তফা এনাম। সাহিত্য প্রকাশ</li><li>চৈতন্যের চাষ কথা- ফকির ইলিয়াস। ভাষাচিন্তা</li><li>উপনামের উৎসব- মাদল হাসান। "</li><li>সিলেটে যুদ্ধাপরাধ ও প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র- অপূর্ব শর্মা। ইত্যাদি প্রকাশন</li><li>ভাবনা নিয়ে ভাবনা- স্বরোচিষ সরকার। সাহিত্যবিলাস</li><li>ক্রিটিক্যাল তত্ত্বচিন্তা- সম্পাদনা: মাসউদ রহমান। মাওলা ব্রাদার্স</li><li>গল্পের মতো- বেলাল মোহাম্মদ। "<br /></li><li>বাংলাদেশের আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা- শফিউদ্দিন তালুকদার। কথা প্রকাশ</li><li>গারোদের সমাজ ও সংস্কৃতি- সুভাষ জেং চাম। সূচীপত্র</li><li>বাংলা সাহিত্যের অলিখিত ইতিহাস- সাইমন জাকারিয়া ও নাজমীন মর্তুজা। অ্যাডর্ন পাবলিকেশন</li><li>দুর্বিন শাহ রচনাসমগ্র- সম্পাদনা: সুমন কুমার দাস। উৎস</li><li>সমকামিতা- অভিজিত রায়। শুদ্ধস্বর</li><li>অণূজীবের পৃথিবী- রজিউদ্দিন রতন। "</li><li>ত্রিধা- মাসুদা ভাট্টি। "</li><li>বাংলার পত্রসাহিত্য- সুপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়। দিব্যপ্রকাশ</li><li>ফিল্মমেকারের ভাষ্য-লাতিন পর্ব- সম্পাদনা: রুদ্র আরিফ ও বিজয় আহমেদ। ঐতিহ্য</li><li>ডিসকভারিং আর্কিয়লজি- আইরিস ব্যারি, অনুবাদ: আসাদ ইকবাল। "</li><li>গীন্সবার্গের সঙ্গে- নির্মলেন্দু গুণ। শ্রাবণ</li><li>বাংলাদেশের পরিচিত পাখি- যাযার মিন্টু। টোনাটুনি</li><li>পরের চশমা নিজের আঁখি- দন্ত্যস রওশন। জনান্তিক</li><li>দূরের সবুজ বনভূমি- ধ্রুব এষ। ইত্যাদি</li><li>স্বপ্নের শহর রোম ও ফ্লোরেন্স- রাবেয়া খাতুন। অন্যপ্রকাশ</li><li>পানেছারবানুর নকশীকাঁথা- হাসনাত আবদুল হাই। "</li><li>পিকাসোর রঙ মাইকেলেঞ্জেলোর হাতুড়ি- বরেণ চক্রবর্তী।"</li><li>মহাদেব সাহার প্রথম পাঁচ কাব্যগ্রন্থ- মহাদেব সাহা। বিজয় প্রকাশ</li><li>বিলেতের বাঙালি- মুস্তাফিজ শফি। শুদ্ধস্বর</li><li>সন্ন্যাসের সহচর- প্রশান্ত মৃধা।"</li><li>বিশ্বায়ন ও কৃষি অর্থনীতি- আলতাব হোসেন। সূচীপত্র</li><li>ভাটির দেশের ভাটিয়ালি- মুস্তাফা জামান আব্বাসী। মাওলা ব্রাদার্স</li><li>মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রাম- মুহম্মদ শামসুল হক। সাহিত্য</li><li>গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনী- ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। আগামী</li><li>ভূমিঃ সংগ্রাম ও সংস্কার- আইয়ুব হোসেন। সূচয়নী</li><li>ভদ্রপাড়ায় থাকেনা ঈশ্বর- ড. হারু-অর-রশীদ। শোভা প্রকাশ</li><li>নজরুলের ঢাকায় দাঙ্গা ও মুক্তবুদ্ধির লেখকদের দুষ্প্রাপ্য রচনাবলী- ইসরাইল খান। কাঁশবন</li><li>জাগল বাঙালী জাগল- ফজল এ খোদা। জ্যোতি প্রকাশ</li><li>আদিবাসী কবিতাসংগ্রহ- হাফিজ রশিদ খান। আগামী</li><li>নারীর ক্ষমতায়ন: স্বপ্ন ও বাস্তবতা। নূর কামরুন নাহার</li><li>ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহের কথা- আহমেদ সাফায়েত। অ্যাডর্ন</li><li>এ ভ্রমণ আর কিছু নয়- আসাদ চৌধুরী। উৎস</li><li>সেই সাপ জ্যান্ত- নাসরীন জাহান। অন্যপ্রকাশ</li><li>মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধান- রেজাউর রহমান</li><li>মাহমুদ দারবিশের পাঠ ও বিবেচনা- সম্পাদনা: শরীফ আতিক-উজ-জামান। সংবেদ</li><li>অস্ত্রে মাখিয়ে রাখো মধু- ফিরোজ এহতেশাম</li><li>মুঠোফোনের কাব্য-২- নির্মলেন্দু গুণ। বিভাস</li></ol>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-13238136707358689152010-02-07T22:53:00.004+06:002010-02-08T23:19:22.858+06:00এবারে যে বইগুলো কিনতে চাই- ০১অমর একুশে বইমেলা ২০১০ থেকে যে বইগুলো কিনতে চাই, তার একটা তালিকা তৈরি করছি। এই মুহূর্তে ঢাকায় যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ভবিষ্যতে কবে যাবো তাও জানিনা। তালিকা করে রাখলাম। আগামীতে কখনো সময় ও সুযোগ হলে কেনার চেষ্টা করব।<br /><br />গত এক সপ্তাহের সবকটা পত্রিকা পড়া হয়নি। পত্রিকাগুলোতেও সব বইয়ের খবর প্রকাশিত হয়নি। দু'একটা বহুল প্রচারিত পত্রিকার কয়েকটা সংখ্যা ঘেঁটে যে কয়টা নাম বের করতে পারলাম, তার মধ্যে যে বইগুলো কেনার ইচ্ছে হয়েছে সেগুলোই লিখে রাখলাম। আমি বিশ্বাস করি এর বাইরে অারও অনেক বই আছে যেগুলো আমার কেনার ইচ্ছে হবে।<br /><br />প্রত্যেক সপ্তাহে এরকম একটি তালিকা তৈরি করার ইচ্ছে আছে। দেখি মাস শেষে কয়টি বই হয়।<br />উল্লেখ্য যে, সব বইয়ের প্রকাশকের নাম সংগ্রহ করতে পারিনি। আর এই তালিকা কোন প্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরি নয়। শুধুমাত্র বইয়ের নাম দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হাতে পাওয়ার পর উল্টেপাল্টে দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।<br /><ol><li>এই বাঙলায় - সনৎ কুমার সাহা। শোভা প্রকাশন</li><li>প্রাকৃত জনের জীবন দর্শন - যতীন সরকার। শোভা প্রকাশন</li><li>জনপদ ও ইতিহাস কথা - ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) শাখাওয়াত হোসেন</li><li>নন্দিত কান্না নিন্দিত হাসি (ভিক্ষুকদের জীবনযাপন নিয়ে) - মোহাম্মদ আমীন</li><li>জীবনানন্দ দাশ ও ইলা মিত্র - মিলা মাহফুজা</li><li>প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার - শাহনাজ মুন্নী</li><li>রমেশ শীল - মহসীন হোসাইন</li><li>বাংলার মুসলিম বুদ্ধিজীবী - ওয়াকিল আহমেদ। শোভা প্রকাশন</li><li>দরবেশ ও দরগার কথা - তিতাস চৌধুরী। শোভা প্রকাশন</li><li>নির্বাচিত অনুসন্ধান - মুস্তাফিজ শফি। শুদ্ধস্বর</li><li>বাঙলা ধ্বনিমূল - চার্লস এ. ফার্গুসন ও মুনীর চৌধুরী, অনুবাদ - কাজি মাহবুব হোসেন। নবযুগ</li><li>ছেলেটি যে মেয়ে মেয়েটি তা জানত না - নাসরীন জাহান</li><li>সময়ের জবানবন্দি - হায়াৎ মামুদ</li><li>চলার পথে নদীর সাথে - এমদাদুল হক</li><li>ভাবনা নিয়ে ভাবনা - স্বরোচিষ সরকার। সাহিত্য বিলাস</li><li>সমাজ সাহিত্য দর্শন - হোসেন উদ্দিন হোসেন। নবরাগ প্রকাশনী</li><li>রাজনীতিতে বিত্তশালীদের আগমন প্রবনতাঃ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত- শহীদুল্লাহ শাহজাহান। শৈলী প্রকাশন</li><li>বাংলাদেশের উপন্যাসে সমাজ চিন্তা ও আবু জাফর শামসুদ্দীন - ড. মমতাজ বেগম। ইত্যাদি প্রকাশনী</li><li>পাহাড়ি ফুল - চৌধুরী আহসান। কাকলী</li><li>ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ক্বাসীদা - শায়লা পারভীন। সুবর্ণ</li><li>বিষয় ইতিহাস - মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। সময়</li><li>বাংলাদেশের কবিগান - যতীন সরকার। বিভাস</li><li>নিরুদ্দেশ হাওয়ার হাওয়ায় - বেলাল চৌধুরী। গ্রন্থপ্রকাশ</li><li>নদীর নাম টে - শাকুর মজিদ। উৎস প্রকাশন</li><li>বহে নিরবধি নদী অববাহিকায় বাংলাদেশ - সমুদ্র গুপ্ত। মুক্তচিন্তা প্রকাশন</li><li>আমার আমি প্রসঙ্গঃ শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন ও সাফল্য - পান্না কায়সার । রয়েল পাবলিশার্স</li><li>ঢাকায় প্রথম - মুনতাসীর মামুন। অনুপম প্রকাশনী</li><li>জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত আধুনিক ছোটগল্পের কবি - সাদ কামালী। অবসর প্রকাশনী</li><li>টিনএজ মন - মোহিত কামাল। তাম্রলিপি</li><li>সাহিত্যিক ও দার্শনিক সক্রেটিস থেকে সাঁত্রে - ড. সফিউদ্দিন আহমদ। মিজান পাবলিসার্স</li><li>ইউ কি চিং বীরবিক্রমঃ আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা - লে. কর্ণেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। স্বরাজ প্রকাশনী</li><li>একাত্তর - আব্দুল মান্নান সৈয়দ। সূচীপত্র</li><li>ছোটদের বাদ্য বাজে - মোকারম হোসেন খান। বিভাস</li><li>হিরন্ময় দুঃখ - রাবেয়া খাতুন। সময়</li><li>জননী সাহসিনীঃ ১৯৭১ - আনিসুল হক। সময়</li><li>শুদ্ধ বলা শুদ্ধ লেখা - রণজিৎ বিশ্বাস। সূচীপত্র</li><li>সেইসব দার্শনিক - সরদার ফজলুল করিম</li><li>কবিতার অন্তর্যামীঃ আধুনিক উত্তরাধুনিক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, রোমান্টিক ও আধুনিক কবিতার অক্ষদ্রাঘিমা - খোন্দকার আশরাফ হোসেন</li><li>মাহমুদুল হকের অগ্রন্থিত গল্প - আবু হেনা মোস্তফা এনাম সম্পাদিত</li><li>আলোছায়ার যুগলবন্দি - আবুল হাসনাত সম্পাদিত</li><li>বনের স্মৃতি - আলী আকবর কোরেশী</li><li>ঢাকা আমার ঢাকা- সাঈদ আহমেদ। সাহিত্য প্রকাশ</li><li>তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, তোমার জন্য - শহীদ কাদরী। অবসর</li><li>সম্পাদের কলমে- আবদুল মান্নান সৈয়দ। সূচীপত্র</li><li>নিঃশঙ্ক পথিক- রণেশ মৈত্র। অংকুর প্রকাশনী</li><li>সত্য যে কঠিন- যতীন সরকার। সাহিত্য প্রকাশ</li><li>ভাষা শিক্ষা ও ভাষাবিজ্ঞান পরিচিতি- হুমায়ুন আজাদ। আগামী</li><li>১/১১'র একজন বন্দির কথা- মোহাম্মদ এনামুল হক। আগামী</li><li>মুক্তিযুদ্ধ নাটক সমগ্র- ড. ইনামুল হক। আগামী</li><li>সময়ের বয়ান- মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন। আগামী</li><li>সংগ্রামী স্মৃতির মোহনায়- প্রসূতী কুমার রায়। উৎস</li><li>সবার জন্য মর্যাদা- রবার্ট ডব্লিউ ফুলার, পামেলা এগারলফ, অনুবাদ: বায়েজিদদৌলা। সিভিক</li><li>আরো একটুখানি বিজ্ঞান- মুহম্মদ জাফর ইকবাল। কাকলী প্রকাশনী</li><li>বাঙ্গালীর ভাষা ইদানিং- হায়াৎ মামুদ। চারুলিপি</li><li>সাত দিনের আমেরিকা- হাসনাত আবদুল হাই। আগামী</li><li>পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী রাজত্বের সাত বছর- শরদিন্দু শেখর চাকমা। বিভাস</li><li>ছড়াসব করে রব- লুৎফর রহমান রিটন। অনন্যা</li></ol>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com2tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-78698115013349729662009-09-17T17:15:00.002+07:002009-09-21T22:45:41.658+07:00শিক্ষা দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী : অর্জনের সম্ভাবনাঃ নুরুল ইসলাম নাহিদআজ ১৭ সেপ্টেম্বর, শিক্ষা দিবস। পূর্ববর্তী বছরগুলোর শিক্ষা দিবসে কোন শিক্ষামন্ত্রী গণসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কোন প্রবন্ধ লিখেছেন বলে আমার জানা নেই। বর্তমান সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এর লেখা একটি প্রবন্ধ আজকের পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধটির শিরোনাম: "শিক্ষা দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী: অর্জনের সম্ভাবনা" আমি সম্পূর্ণ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর লেখাটি আমার ব্লগে প্রকাশ করলাম।<br />
<br />
<br />
<div style="text-align: center;"><b>শিক্ষা দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী : অর্জনের সম্ভাবনা</b><br />
<br />
<b>নুরুল ইসলাম নাহিদ</b><br />
</div><br />
বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের প্রতীক ১৭ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক ‘শিক্ষা দিবস’। শিক্ষার জন্য সংগ্রাম ত্যাগ বিজয় গৌরব ও ঐতিহের প্রতীক এই শিক্ষা দিবসের এবার ৪৭তম বার্ষিকী। আজ থেকে ৪৭ তম বার্ষিকী। আজ থেকে ৪৭ বছর পূর্বে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিভূ সামরিক শাসক জেনারেল আয়ুব খানের চাপিয়ে দেয়া গণবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল তথাকথিত জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল করে সকলের জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠা এবং একটি গণমুখী বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সহজলভ্য আধুনিক শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা অর্জনের লক্ষ্যে ছাত্র সমাজ অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে আয়ুবের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আগস্ট মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বরের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা হয়। ছাত্র সমাজের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র সমাজের আন্দোলনের প্রতি সাধারণ জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানেও প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ ও জনগণেল মধ্যেও বিক্ষোভ এবং আন্দোলন প্রসারিত হতে থাকে।<br />
<br />
১৯৫৯ সালে প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক আয়ুব খান তৎকালীন শিক্ষা সচিব এসএম শরিফকে চেয়ারম্যান করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। এই কমিশন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর লক্ষ্য ও স্বার্থের প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। ১৯৬২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আয়ুব সরকার এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে।<br />
<br />
এই তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’তে যে সকল বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেঃ শিক্ষাকে ব্যয় বহুল পণ্যের মতো শুধু উচ্চবিত্তের সন্তানদের স্বার্থে উচ্চশিক্ষাকে সীমিত করা এবং সাধারণের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ একেবারেই সংকুচিত করে ফেলা। শিক্ষা ব্যয় পুঁজিবিনিয়োগ হিসেবে দেখে শিক্ষার্থীরা তা বহন করে, যে অভিভাবক বেশি বিনিয়োগ করবেন তিনি বেশি লাভবান হবেন; অবৈতনিক শিক্ষার ধারণাকে ‘অবাস্তব কল্পনা’ বলে উল্লেখ; ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ইংরেজী পাঠ বাধ্যতামূলক; উর্দুকে জনগণের ভাষায় পরিণত করা; সাম্প্রদায়িকতাকে কৌশলে জিইয়ে রাখার চেষ্টা; ডিগ্রি কোর্সকে তিন বছর মেয়াদি করা, ইত্যাদি।<br />
<br />
এই সকল বিষয় ছাত্র সমাজ এবং সচেতন মহলকে দারুণভাবে বিক্ষুব্ধ করে তুলে। এরই পরিণতিতে শিক্ষার দাবিতে ছাত্র সমাজের আন্দোলন ব্যাপক রূপলাভ করে এবং ১৭ সেপ্টেম্বরের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন আয়ুব সরকারকে বাধ্য করে ওই শিক্ষানীতি স্থগিত করতে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির পর সকল রাজনৈতিক দল ও কর্মকাণ্ড, ছাত্র সংগঠনসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের তৎপরতা বেআইনি করে সকল ধরনের মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়। চলে চরম দমননীতি। এরই মধ্যে ষাট সালের দিকে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা গোপন সমঝোতা ও যোগাযোগ রেখে নিজ নিজ সংগঠন গোছানোর এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু করেন। এভাবে ছাত্র সংগঠন দুটি ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকে এবং সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গেও যোগাযোগ গড়ে তোলে।<br />
<br />
তৎকালীন দুই বৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন এবং ডাকসু ও বিভিন্ন হল ও কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাধারণ ছাত্র সমাজের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়ে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। যার ফলে সকল আন্দোলন ও কর্মসূচির প্রতি সাধারণ ছাত্র সমাজের সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।<br />
<br />
একদিকে সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, অন্যদিকে চাপিয়ে দেয়া গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল এবং গণমুখী শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভে দেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই পটভূমিতে বিভিন্ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারাদেশে হরতাল ঘোষণা করে। সামরিক শাসনের বিরম্নদ্ধে শিক্ষার দাবিতে ঐ হরতাল সারা দেশে অভূতপূর্ব সাফল্য এবং ছাত্র-জনতার ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আয়ুবের সামরিক শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। তখন সাধারণভাবে যে কোনো ধরনের আন্দোলন এমনকি ছাত্র সমাজের যে কোনো তৎপরতার ওপর ছিল সামরিক সরকার খগড় হস্ত। ১৯৬২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সূচিত আন্দোলন দমন করার জন্য গ্রেফতার, মামলা, হয়রানি, নির্যাতন, এমনকি বেত্রদণ্ডসহ বর্বরোচিতভাবে নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলন ও হরতাল কর্মসূচি ঠেকানোর জন্য চরম নির্যাতনমূলক পথ গ্রহণ করা হয়। ওই দিন ঢাকাসহ দেশের সকল শহরের রাজপথে বিরাট বিক্ষোভ মিছিল চলতে থাকে। লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস প্রভৃতি তা দমন করতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে ছাত্রদের একটি বিক্ষুব্ধ মিছিল আব্দুল গনি রোড হয়ে অগ্রসর হয়ে পুলিশ পেছনে থেকে অতর্কিতে মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করে। ঐদিন পুলিশের গুলিতে বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ শহীদ হন। বহু ছাত্র-জনতা পুলিশ ও ইপিআর-এর নির্যাতন ও গুলিতে সারাদেশে আহত হন।<br />
<br />
১৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা ছাত্র আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তোলে। ছাত্র সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সাধারণ জনগণ ছাত্র সমাজের প্রতি আরো দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। সারাদেশে তিন দিনব্যাপী শোকের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর পল্টন ময়দানে এক ছাত্র জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনগণের সমর্থিত ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়ে আয়ুবের সামরিক সরকার তথাকথিত ‘শিক্ষা শিক্ষানীতি’ স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।<br />
<br />
গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরম্নদ্ধে এবং একটি গণমুখী সার্বজনীন আধুনিক শিক্ষানীতির দাবিতে ঐতিহাসিক ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র আন্দোলন ও শহীদদের আত্মদান তথা শিক্ষার ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক ১৭ সেপ্টেম্বরকে সেদিন ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বহু উত্থান-পতনের মধ্যেও প্রতি বছর এই দিনটি ছাত্র সমাজ এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলেই শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে। আজো শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে ১৭ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা দিবস’ অম্লান হয়ে আছে। সেই লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম আজো সম্পূর্ণ সফল হয়নি।<br />
<br />
পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী তাদের কায়েমী স্বার্থ এবং শাসন শোষণ স্থায়ী করার লক্ষ্যে শিক্ষাকে ব্যবহার করার জন্য ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা চেয়েছিল শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে তাদের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আচ্ছন্ন করে রাখতে। তাই ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র জনতার ব্যাপক প্রতিরোধের যুগে তথাকথিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ স্থগিত ঘোষণা করলেও আয়ুব খানের সরকার বা শাসকশ্রেণী তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।<br />
<br />
সরকার ১৯৬৪ সালে বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি কমিশন গঠন করে নতুন মোড়কে তাদের পরিকল্পিত শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থা কায়েমের পথ গ্রহণ করে। বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের নাম দেয়া হয়েছিল 'Commission on Students' Problem and Welfare' বা ‘ছাত্র সমস্যা ও কল্যাণ কমিশন’ এই কমিশন দ্রম্নতই বছরের মাঝামাঝি তাদের রিপোট প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করে। ‘হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নামে পরিচিত এই রিপোর্ট বাস্তবায়নের জন্য বহু চেষ্টা ও কৌশল গ্রহণ করেও প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার তা বাস্তবায়নে সক্ষম হয়নি। এরপরও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী হাল ছাড়েনি। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আয়ুব খানের ক্ষমতা ত্যাগ নিশ্চিত হলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসক জারি করে ক্ষমতায় বসেই সীমিত সময়ে নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা প্রদানের ঘোষণা দিয়ে সর্বাগ্রে আবারও শিক্ষানীতি প্রণয়নে প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই পুরনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য নতুন প্রজন্মের ওপর তাদের চিন্তা-চেতনা চাপিয়ে দেয়া। দেশের সমগ্র সমাজ এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে তা প্রত্যাখান করে। কেবল পাকিস্তানী ভাবধারা ও শাসক শ্রেণীর অনুসারী জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির) ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকারের শিক্ষানীতির পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করে।<br />
<br />
আমাদের গৌরবময় সকল সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরই প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-কুদার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশন স্বাধীন দেশের উপযোগী একটি আধুনিক গণমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলেও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর প্রায় অর্ধডজন শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও দুর্ভাগ্যক্রমে আজো স্বাধীন দেশে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।<br />
<br />
এবারের শিক্ষা দিবস এক নতুন সম্ভাবনাময় পরিস্থিতিতে উদযাপিত হচ্ছে। বিগত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে জনগণের অভূতপর্ব রায়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার গঠনের ফলে ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবসের মূল লক্ষ্য এবং জাতির আকাঙক্ষা বাস্তবায়নের এক বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে আজ বাস্তবায়িত করেই শিক্ষা দিবস’ এবং শিক্ষার জন্য আন্দোলনের সকল শহীদের স্বপ্ন সফল করে তোলা সম্ভব।<br />
<br />
আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য আদর্শ ও চেতনা এবং ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন তথা শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ অর্থাৎ দারিদ্র্য, ক্ষুধা, নিরক্ষরতা, দুর্নীতি, পশ্চাদপদতার অবসান ঘটিয়ে আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে বাষট্টির ঐতিহাসিক শিক্ষানীতির আন্দোলনের ৪৭ বছর পর নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের অতীতের শিক্ষার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এ বছর শেষ হওয়ার পূর্বেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। খসড়া শিক্ষানীতি নিয়ে এই মুহূর্তে আমি এখানে কোন মন্তব্য না করাই সমিচীন মনে করছি। আমরা খসড়া শিক্ষানীতি সকলের মতামত গ্রহণের জন্য ওয়েব সাইটে দিয়েছি। আমরা সকলের মতামত নিয়েই তা চূড়ান্ত করতে চাই। (www.moedu.gov.bd)<br />
<br />
শিক্ষা কোন দলীয়, গোষ্ঠীগত, আঞ্চলিক বা সাম্প্রদায়িক বিষয় নয়। শিক্ষা সমগ্র জাতির ভবিষ্যৎ এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের বিষয়। আমরা আশা করব দেশের সকল শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মানুষ এবং দলমত নির্বিশেষে সাধারণ জনগণ তাদের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ দিয়ে প্রস্তাবিত খসড়া শিক্ষানীতিকে চূড়ান্ত করার কাজে এগিয়ে আসবেন।<br />
<br />
আসুন আমাদের শিক্ষার জন্য ঐতিহাসিক আন্দোলনের ৪৭তম বার্ষিকীতে শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাবিদ, তথা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল মহল এবং সকল শ্রেণীর মানুষ তাদের মতামত ও পরামর্শ দিয়ে ১৯৬২ সালে একটি গণমুখী শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রামের শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি।<br />
<br />
আমাদের শিক্ষার অধিকার এবং গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, যুগোপযোগী প্রগতিশীল একটি শিক্ষানীতির জন্য প্রায় অর্ধশতাধিক ধরে যে সংগ্রাম অব্যাহতভাবে চলমান তারই সফল পরিণতি হলো এবারের শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতির চূড়ান্ত করণ এবং বাস্তবায়ন সকলের কাছে সবিনয় আহ্বান_ আপনাদের সকলের সাহায্য-সহযোগিতা এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠাই হবে এর সাফল্যের আসল শক্তি।<br />
<br />
আমাদের সকল শহীদ এবং জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকেই তা করে যেতে হবে।<br />
<br />
[লেখক : সংসদ সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী]<br />
<br />
(<span style="font-size: x-small;"><span style="color: red;">বানানজনিত কিছু যান্ত্রিকত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে। পুনঃপ্রকাশের উপর কোন রকম বিধিনিষেধ থাকলে এই পোস্টটি মুছে ফেলা হবে।</span></span>)<br />
সংগ্রহ করা হয়েছে <a href="http://www.ittefaq.com/content/20http://174.120.99.127/%7Ethedaily/details.php?news=23&action=main&option=single&news_id=11696&pub_no=12409/09/17/news0447.htm" target="_blank">ইত্তেফাক</a> পত্রিকা থেকে।সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com3tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-18025586541075574722008-12-04T22:03:00.006+06:002008-12-16T20:57:29.960+06:00নিউইয়র্ক টাইমস এর মতে ২০০৮ সালের সেরা ১০ গ্রন্থ<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiLGxHQkPBr9pJ5E-eCxskpTnxTjcFpsDWAW69NEKDQppXeW5Mjc1s5IYGI3sm_LXNx5UppMLMhlCRorG91Swx0xm75oF9mcq0PHjAIUfYtQ_odUhVqmoXA5VLgg21IvVr6c5hSC6bawoE/s1600-h/best-covers-600.jpg"><img style="margin: 0px auto 10px; display: block; text-align: center; cursor: pointer; width: 450px; height: 166px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiLGxHQkPBr9pJ5E-eCxskpTnxTjcFpsDWAW69NEKDQppXeW5Mjc1s5IYGI3sm_LXNx5UppMLMhlCRorG91Swx0xm75oF9mcq0PHjAIUfYtQ_odUhVqmoXA5VLgg21IvVr6c5hSC6bawoE/s320/best-covers-600.jpg" alt="" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5275966338031235394" border="0" /></a><br />নিউইয়র্ক টাইমস তাদের দৃষ্টিতে সেরা ১০টি গ্রন্থের <a href="http://www.nytimes.com/2008/12/14/books/review/10Best-t.html?_r=2&partner=rss&emc=rss">একটি তালিকা</a> প্রকাশ করেছে। তালিকায় ফিকশন ও ননফিকশন দুইটি ক্যাটাগরিতে ৫টি করে গ্রন্থ রাখা হয়েছে। তালিকাটি নিম্নরূপঃ-<br /><span id="fullpost"><br /><span style="font-weight: bold;">FICTION</span><br /><br />DANGEROUS LAUGHTER<br />Thirteen Stories<br />By Steven Millhauser.<br /><br />A MERCY<br />By Toni Morrison.<br /><br />NETHERLAND<br />By Joseph O’Neill.<br /><br />2666<br />By Roberto Bolaño. Translated by Natasha Wimmer.<br /><br />UNACCUSTOMED EARTH<br />By Jhumpa Lahiri.<br /><br /><br /><span style="font-weight: bold;">NONFICTION</span><br /><br />THE DARK SIDE<br />The Inside Story of How the War on Terror Turned Into a War on American Ideals<br />By Jane Mayer.<br /><br />THE FOREVER WAR<br />By Dexter Filkins.<br /><br />NOTHING TO BE FRIGHTENED OF<br />By Julian Barnes.<br /><br />THIS REPUBLIC OF SUFFERING<br />Death and the American Civil War<br />By Drew Gilpin Faust.<br /><br />THE WORLD IS WHAT IT IS<br />The Authorized Biography of V. S. Naipaul<br />By Patrick French.<br /><br />গ্রন্থগুলো ২০০৮ সালের উল্লেখযোগ্য ১০০টি গ্রন্থের এক <a href="http://www.nytimes.com/2008/12/07/books/review/100Notable-t.html">তালিকা</a> থেকে বাছাই করা হয়েছে। তালিকার দুই একটা গ্রন্থ পড়তে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু পড়া আর হয়ে উঠবে কি? ঢাকা ছাড়া কি আর এসব গ্রন্থ পাওয়া যাবে? আর মূল্য নিশ্চয় সামর্থ্যের চাইতে অনেক অনেক বেশি হবে।<br /></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-6312292512749138712008-11-23T23:05:00.013+06:002009-02-20T23:37:18.015+06:00সংস্কৃতি প্রত্যয়টি আমরা কি করে পেলাম<a href="http://pathagar.blogspot.com/2008/11/blog-post_13.html">অনুঘটক</a> পত্রিকার আর একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ হলো <span style="font-weight: bold;">আবুল কাসেম ফজলুল হক</span> এর লেখা <span style="font-weight: bold;">'সংস্কৃতি আমাদের হারানো প্রত্যয়'</span>। সংস্কৃতি কি, সংস্কৃতি বলতে কি বোঝায়, বাংলা ভাষায় সংস্কৃতি বিষয়ক অনুধাবন কবে থেকে কিভাবে শুরু হলো, সংস্কৃতি বলতে আমরা বর্তমানে কি বুঝছি, আর সংস্কৃতি বলতে সত্যিকারের কোন বিষয়টাকে বোঝায় ইত্যাদি বিষয়গুলোর আলোচনা রয়েছে এই প্রবন্ধটিতে।<br /><br />জানা যায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে বাংলাভাষায় সংস্কৃতি বিষয়ক ধারণার প্রথম প্রবর্তন ঘটে। ম্যাথু আর্নল্ডের (১৮২২-১৮৮৮) Culture and Anarchy বইটি পড়ে তিনি ইউরোপিয় কালচারের ধারণার সাথে পরিচিত হন। নতুন উপলব্ধিবোধে অনুপ্রাণিত বঙ্কিমচন্দ্র নিজেদের সংস্কৃতিবোধকে পুনর্গঠনের প্রেরণা অনুভব করেন। তাঁর আগে বাংলাভাষায় রচিত কোনকিছুতে সংস্কৃতি নিয়ে কারও ভাবনাচিন্তার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। বঙ্কিমচন্দ্র ম্যাথু আর্নল্ডের পাশাপাশি বেন্থাম, স্টুয়ার্ট মিল, ডারউইন, স্পেন্সার, কোঁৎসহ বিভিন্ন ইউরোপিয় মনীষীর কাছ থেকে সাংস্কৃতিক চেতনার সাথে পরিচিত হয়েছিলেন। আবুল কাসেম বলেছেন:<br /><blockquote>তবে কালচার বিষয়ক ধারণার কোনো উপাদানই যে আগে বাংলা ভাষায় ছিল না, তা নয়। রামপ্রসাদের গানে আছে: 'এমন মানবজমিন রইল পতিত/ আবাদ করলে ফলত সোনা'। এখানে জীবনের যে আবাদের কথা বলা হয়ে তাকে কালচার বলা যায়। ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস, সংযম, চিত্তশুদ্ধি, চিৎপ্রকর্ষ, সভ্যতা, সম্প্রীতি প্রেমধর্ম ইত্যাদি কথার মধ্যেও কালচারের ধারণা আছে।</blockquote><br /><span id="fullpost"><br />উনিশ শতকের বাংলায় ইউরোপিয় দার্শনিকদের মধ্যে স্টুয়ার্ট মিল, অগাস্ট কোঁৎ ও চার্লস ডারউইনের প্রভাব সবচাইতে বেশি ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র ম্যাথু আর্নল্ডের সুরে সুর মিলিয়ে বলেছেন: '"যে শিশু দেখিতেছে, ইহা মনুষ্যের অঙ্কুর। বিহিত কর্ষণে অর্থাৎ অনুশীলনে উহা প্রকৃত মনুষত্ব প্রাপ্ত হইবে।" বঙ্কিমচন্দ্র যখন সংস্কৃতি বিষয়টিকে অনুধাবন করার চেষ্টা করছিলেন, সে সময়ে বাংলাভাষায় আর কারও মধ্যে এ সম্পর্কিত কোনরূপ সচেতনতা লক্ষ্য করা যায় না। তাই বলা যায়, বাঙালিদের মধ্যে উনিশ শতকের শেষাংশর বঙ্কিমচন্দ্র থেকে সংস্কৃতি সম্পর্কে চিন্তার সূত্রপাত।<blockquote>বঙ্কিম অনুভব করেছিলেন যে, কালচার ধর্মের মতোই একটি গুরুতর ব্যাপার, তবে ধর্ম থেকে ভিন্ন। ম্যাথু আর্নল্ড লিখেছেন: The substance of religion is culture. বঙ্কিমচন্দ্র এর অনুসরণে লিখেছেন : 'মানববৃত্তির উৎকর্ষণেই ধর্ম।' এর ষাট বছর পরে মোতাহার হোসেন চৌধুরী লিখেছেন: "ধর্ম সাধারণ লোকের কালচার, আর কালচার শিক্ষিত, মার্জিত লোকের ধর্ম।"........ অনুশীলন (রচনাবলীতে ধর্মতত্ত্ব) গ্রন্থে বঙ্কিচন্দ্র মানুষের মনুষ্যত্ব অর্জনের সমস্যা, সম্ভাবনা ও উপায় আলোচনা করেছেন। তবে তাঁর চিন্তা কেবল ব্যক্তিকে নিয়ে নয়, ব্যক্তির সঙ্গে সমাজকে নিয়েও। ব্যক্তি তাঁর দৃষ্টিতে সমাজের অংশ। মানুষের সৃষ্টি সামর্থ্য ও তার সদ্ব্যবহার নিয়েও তিনি চিন্তা করেছেন। নীতিবিজ্ঞানের বিচারে বঙ্কিম উপযোগবাদী বা পরিতৃপ্তিবাদী (Utilitarianist), আত্মনিগ্রহবাদী (Austerist) নন।</blockquote>প্রথমদিকে ১৮৮৮ সালে ধর্মের ধারণার সঙ্গে কালচারের ধারণার মিশ্রণ ঘটিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র অনুশীলন নামে একটি বই লিখেছিলেন। পরে বঙ্কিম রচনাবলীতে এই বইটি 'ধর্মতত্ত্ব' নামে সঙ্কলিত হয়। আবুল কাশেম মনে করেন:<br /><blockquote>অনুশীলন বাংলা ভাষার এক অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী গ্রন্থ। বাংলা ভাষার দেশে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এতে কেবল যে ব্যক্তিগত জীবনের কালচারের কথাই বলা হয়েছে, তা নয়; সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কালচারের কথাও এতে আছে। কালচার বা অনুশীলন ব্যাটারটা যে সৃষ্টিশীল, তাও বলা হয়েছে। এ গ্রন্থ আজকের দিনে বাংলাদেশের বাঙালিদের জন্য যেমন, পশ্চিম বাংলার বাঙালিদের জন্যও তেমনি- গুরুত্বপূর্ণ ও প্রেরণাদায়ক। আজো এ গ্রন্থ আমাদেরকে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে জীবনজগত সম্পর্কে নতুন করে চিন্তা করতে প্রাণিত করে।</blockquote>উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের প্রথমদিকে অনুশীলন শব্দটাকে 'কালচার' শব্দের সমার্থশব্দ হিসেবে বহুলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি 'কৃষ্টি' শব্দকে কালচারের সমার্থক হিসেবে প্রবর্তনের চেষ্টা চালান। ১৯২০ এর দশকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সহায়তায় সংস্কৃতি শব্দটিকে প্রচার করেন। প্রমথনাথ বিশীও এই প্রচেষ্টার অন্যতম অংশীদার ছিলেন। সে সময়ে এই 'কালচার' শব্দের যথাযথ বাংলা শব্দ কি হতে পারে সে নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। 'কর্ষণ', 'চর্চা', 'শিক্ষা', 'বৈদগ্ধ্য', 'চরিত্র', ইত্যাদি শব্দকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই শব্দগুলোর মধ্যে বিভিন্ন অর্থবোধক পার্থক্যর পাশাপাশি পরস্পরের মধ্যে মর্মগত ধারণারও বেশ পার্থক্য ছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে তমদ্দুন মজলিশ 'সংস্কৃতি' শব্দের পরিবর্তে 'তমদ্দুন' বা 'তাহজিব' শব্দদ্বয় প্রচলনের একটি প্রচেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে গেছে সংস্কৃতি শব্দটি। তাহলেও কি হবে। প্রথমদিকে বঙ্কিচন্দ্র কালচার শব্দের মধ্যে যে বিশাল ধারণার সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন কালক্রমে সে ধারণার বিলুপ্তি ঘটেছে। এখন সংস্কৃতি শব্দের ভাবার্থ আর ব্যাপক কোন ধারণাকে বহন করে না, বরং </span><span id="fullpost"> অনেকাংশে সংকুচিত/ সঙ্কীর্ণ </span><span id="fullpost">হয়ে গেছে।<br /><blockquote>ব্রিটেনে বেকন (১৫৬১-১৬২৬) থেকে, আমেরিকায় ইমার্সন (১৮০৩-১৮৮৩) থেকে এবং ইউরোপের অন্যান্য ভাষায় বেকনের কাছাকাছি সময় থেকে কালচারের ধারণার ধারাবাহিক বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। বঙ্কিমের পরে ক্রমে ধারণাটি পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তৃত হয়। বঙ্কিম থেকে পরবর্তী কালের বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ চিন্তকেরা প্রত্যেকেই কালচার বা সংস্কৃতি সম্পর্কে চিন্তা করেছেন। তবে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ চিন্তকেরা কালচার বা সংস্কৃতির ধারণাকে যেভাবে বিকশিত করেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রচারমাধ্যম ধারণাটিকে তা থেকে বিচ্যুত করে অর্থের দিক দিয়ে একেবারে সঙ্কীর্ণ করে ফেলেছে। আজকের প্রচারমাধ্যম সংস্কৃতি বলতে বোঝায় নাচগান, আবৃত্তি, নাটক ইত্যাদি বিনোদনমূলক বিষয়কে। সংস্কৃতি ও বিনোদন এখন সমার্থক হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বিদ্বৎসমাজও আজ ঔৎসুক্যহীন।</blockquote>আমাদের দেশে সংস্কৃতি বিষয়ে যা হয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসের বিপরীত পথে হেঁটেছে। পৃথিবীর অন্যান্য ভাষায় সংস্কৃতির ধারণাটি ক্রমশ বিকাশমান, কিন্তু আমাদের দেশে এই ধারণাটি ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে চলেছে। বাংলা ভাষায় সংস্কৃতি নিয়ে বেশ কিছু অসাধারণ চিন্তাপ্রদায়ী গ্রন্থ রচনা হয়েছে। যেমন: 'অনুশীলন: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়', 'সংস্কৃতির রূপান্তর: গোপাল হালদার', 'কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি: নীহাররঞ্জন রায়' ইত্যাদি। সংস্কৃতি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ, যোগেশচন্দ্র প্রমুখের ভাবনাগুলো রয়েছে তাদের বিভিন্ন প্রবন্ধে। এছাড়াও গত পঞ্চাশ বৎসরে আবুল মনসুর আহমদ, আবুল ফজল, আহমদ শরীফ, বদরুদ্দীন উমর, আব্দুল মতীন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, যতীন সরকার এবং আরও অনেক প্রাজ্ঞ চিন্তক সংস্কৃতি নিয়ে তাদের ধারণা ও উপলব্ধি প্রকাশ করেছেন। পশ্চিম বাংলায় অন্নদাশঙ্কর রায়, নারায়ণ চৌধুরী, শিবনারায়ণ রায়, অম্লান দত্ত ও আরো অনেকে সংস্কৃতির স্বরূপ অন্বেষণে নিজস্ব মতামত প্রচার করেছেন। বস্তুত: গত সোয়াশো বৎসর ধরে বাংলাভাষার পণ্ডিতেরা সংস্কৃতিকে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করার নিরন্তর প্রয়াস পেয়েছেন। আজকের দিনে সংস্কৃতিকে বুঝতে হবে এদের দেখিয়ে দেয়া পথ ধরেই। তাদের চিন্তার ধারাবাহিকতায় সংস্কৃতিকে অনুভব করতে হবে। এ প্রসঙ্গে লেখক বলেন:<br /><blockquote>সংস্কৃতির ধারণা সংস্কার এর ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত। সংস্কার বলতে বোঝায় শুদ্ধিকরণ, পরিশোধন, সংশোধন, উৎকর্ষসাধন, উন্নতিবিধান, সৌন্দর্যবিধান ইত্যাদি। সংস্কৃতি মানে জীবন ও সমাজের শুদ্ধিকরণ, পরিশোধান, উৎকর্ষসাধন, উনইতবিধান, সৌন্দর্যবিধান। ইংরেজি Culture এর সম্পর্ক আছে Cultivation এর সঙ্গে। এই দুটি শব্দের অর্থও সংস্কৃতি আর সংস্কার এর অর্থের মত। জার্মান Culture শব্দও একই ধরণের অর্থ বহন করে। কৃষ্টি শব্দটিও একই অর্থের বাহক। কৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক আছে কৃষির বা চাষাবাদের।</blockquote>এজন্য বলা হয় মানুষই সংস্কৃতির বাহক ও সাধক। শুধুমাত্র মানুষই পারে নিজের ও নিজের চারপাশের সংস্কার সাধন করতে। মানুষ ক্রমাগত তার পরিবেশের পরিবর্তন ঘটাতে চায়। চায় বিনির্মাণ করতে, পরিশীলিত করতে। তাই সাংস্কৃতিক অধিকার একমাত্র মানুষের রয়েছে, অন্য প্রাণীর নেই। মানুষ যতদিন পর্যন্ত বিবর্তনপ্রক্রিয়ার এক পর্যায়ে এসে নিজস্ব সাস্কৃতিক পরিচয় তৈরি করতে পারেনি, ততদিন পর্যন্ত অন্যপ্রাণীর সাথে তার পার্থক্য </span><span id="fullpost"> ততোটা </span><span id="fullpost">পরিলক্ষিত হত না। ব্যক্তিগত ও যৌথ প্রয়াস মানুষের জীবন ও পরিবেশের যে উৎকর্ষ সাধন করেছে, তার গতি নির্ধারিত হয়েছে মানুষের নিজের ইচ্ছায়। মানুষ যেভাবে নিজের জীবনকে তথা তার পরিবেশকে সমৃদ্ধ করতে চায় তাই তার সংস্কৃতি। ব্যক্তিগত আচরণ, জীবনযাত্রা, মনোভঙ্গি, আদর্শবোধ ইত্যাদির মধ্যে তার সাংস্কৃতিক উপলব্ধি ও প্রচেষ্টা নিহিত থাকে। শুধুমাত্র ব্যক্তিজীবন নয়, সাংস্কৃতিক চেতনা রয়েছে সামাজিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় জীবনেও।<br /><blockquote>দর্শন, বিজ্ঞান ও শিল্পকলা সৃষ্টি মধ্য দিয়ে আর উন্নতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা ও জীবনপদ্ধতি প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষ তার সাংস্কৃতিক সামর্থ্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে।.... সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কে সম্পর্ক আছে রুচি, পছন্দ, দৃষ্টি, শ্রুতি, চিন্তাশক্তি, শ্রমশক্তি, সমাজবোধ, বিবেক-বুদ্ধি, আহার্য, ব্যবহার্য, পরিপার্শ্ব, আশা-আকাঙ্ক্ষা, বিচারক্ষমতা, গ্রহণ-বর্জন ও প্রয়াস-প্রচেষ্টার। সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে ব্যক্তির ও যূথের কর্মেন্দ্রিয়, জ্ঞানেন্দ্রিয়, আন্তরিন্দ্রিয় ও পরিবেশের সংস্কার, রূপান্তর ও নবজন্ম ঘটে। কোনো ব্যক্তির কিংবা জনগোষ্ঠীর উৎপাদনসামর্থ্য, সৃষ্টির সামর্থ্য, ন্যায়নিষ্ঠা, কল্যাণচেতনা, সত্যপ্রিয়তা, সৌন্দর্যবুদ্ধি এবং উন্নত ভবিষ্যত সৃষ্টির চিন্তা ও চেষ্টা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সেই ব্যক্তির কিংবা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে।</blockquote>কিন্তু আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের একটি সহজ প্রবণতা হল সংস্কৃতির সংজ্ঞার সংকোচন ঘটানো। আমরা ব্যক্তিজীবনের চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, রুচি, দর্শনগত কোন পরিশীলন না করেই শুধুমাত্র গান-বাজনা অর্থাৎ বিনোদনচর্চাকে সংস্কৃতির </span><span id="fullpost">পরাকাষ্ঠা</span><span id="fullpost"> বলে গণ্য করি। আমরা মনে করি দুলাইন সঙ্গীত পরিবেশন করতে পারা বা নাটকে অভিনয় অর্থাৎ মঞ্চে নিজেকে প্রদর্শন করতে পারলেই সংস্কৃতির পরাকাষ্ঠা প্রকাশ করা হলো। এ সম্পর্কে স্পষ্ট ভাষায় আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন:<br /><blockquote>কেবল নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, বিনোদন ইত্যাদিকেই সংস্কৃতি মনে করা ভুল। মানুষের সকল চিন্তা ও কর্ম এবং উৎপাদন ও সৃষ্টিই তার সংস্কৃতির বাহন। নাচ, গান, আবৃত্তি ও নাটকও সংস্কৃতির অন্যতম বাহন মাত্র, সংস্কৃতি নয়। সঙ্গীতানুষ্ঠান, নাট্যানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক উৎসব (Cultural festival), সাংস্কৃতিক দল (Cultural troop) ইত্যাদি কথার মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির যে রূপ পকাশ পায় তা অনুভূতি-নির্ভর ভাসাভাসা আংশিক রূপ মাত্র- সমগ্র রূপ নয়। নাচ-গান ও শিল্প সাহিত্যের মধ্য দিয়ে যেমন, তেমনি দর্শন-বিজ্ঞান-ইতিহাস, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চিন্তা ও চেষ্টা এবং ব্যক্তিগত-পারিবারিক-সামাজিক জীবনের সকল চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় ব্যক্তির ও সমষ্টির সংস্কৃতি। আত্মশক্তিকে সংগঠিত কর, বিদেশের ও অতীতের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন করে ইতিহাসের গতি নির্ধারণের চিন্তা ও চেষ্টা আর ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, কর্তব্য-অকর্তব্য ও সুন্দর-কুৎসিত ইত্যাদি বিচার করে ন্যায়, কল্যাণ, কর্তব্য ও সুন্দরকে অবলম্বন করে জীবন-যাপনের চিন্তা ও চেষ্টা ইত্যাদির মধ্যেই ব্যক্তির ও সমষ্টির সংস্কৃতিমানতা নিহিত থাকে। বলাই বাহুল্য, কোনো জাতির সংস্কৃতির অভিব্যক্তি ঘটে সেই জাতির কৃতি ও কীর্তির মধ্যেই।</blockquote>একটি মাত্র প্রবন্ধে সংস্কৃতির সম্পূর্ণকে প্রকাশ করা সত্যিই কঠিন। সংস্কৃতির যথার্থ সংজ্ঞাকে কোন বর্ণনা দিয়ে নয়, অনুভূতি দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। কোন ব্যক্তিবিশেষের সংস্কৃতি যেমন তার সত্যিকার পরিচয়কে উদঘাটন করে, তেমনি জাতীয় সংস্কৃতি প্রকাশ করে জাতিগত মূল্যমানকে। আমরা জাতি হিসেবে কেমন তার পরিচয় লুকায়িত থাকে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে। বিদেশী সংস্কৃতি, দেশীয় সংস্কৃতি ইত্যাদি ধুয়া তুলে এর সমাধান সম্ভব নয়। নিজের পরিচয় কোথায় লুকিয়ে আছে, তা বুঝতে হবে নিজেকেই। আর সেই মাপে পরিশীলিত করতে হবে নিজেকে। এই আত্মপোলব্ধির অভাবে তৈরি হয় অন্তঃসারশূন্যতা। আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক আবুল কাশেম ফজলুল হক সংস্কৃতির এই সামগ্রিক ধারণাটিকে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করেছেন। দিগন্তের এক বিন্দুবৎ প্রতিবিম্ব ফুটিয়ে তুলেছেন।<br /></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-51000776529807844132008-11-19T19:26:00.007+06:002008-11-23T23:14:07.470+06:00জয়নুল আবেদিনের শিল্পাচার্য হয়ে ওঠাআগের পোস্টটিতে আমরা অনুঘটক পত্রিকার সাথে আংশিক পরিচিত হয়েছিলাম। আজ এই পত্রিকার একটি ভালোলাগা প্রবন্ধের কথা বলতে চাই। বলছিলাম <span style="font-weight: bold;">গুরু আমার অমর গুরু</span> প্রবন্ধের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক মতলুব আলী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন কিভাবে শিল্পাচার্য হয়ে উঠলেন সে সম্পর্কে লিখেছেন। বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে জয়নুল আবেদীন ছিলেন একজন পথপ্রদর্শক। কিন্তু শুধুমাত্র পথপ্রদর্শন করেই তিনি দায়িত্বমুক্ত হননি। নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন চিত্রকলা শিক্ষার ভার। দেশভাগের কিছুদিন পর জয়নুল আবেদীন তাঁর মাতৃভূমি বাংলাদেশে চলে আসেন। তিনি চিত্রকলার প্রতি সম্পূর্ণভাবে আত্মনিমগ্ন ছিলেন। তাই এই জগৎ ছেড়ে অন্য কিছু করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না। ঢাকায় এসে তিনি কয়েকদিনের মধ্যে একটি আর্টকলেজ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেন। মাত্র ১৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা সেই আর্ট কলেজ আজ মহীরূহতে পরিণত হয়েছে। তিনি কমনওয়েলথ বৃত্তি পেয়ে পঞ্চাশের দশকের শুরুতে ইংল্যাণ্ডে গিয়ে তিনি লন্ডনের স্লেড স্কুল অব আর্ট এর ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন। ছাপা ছবি ও চিত্রশিল্পে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। অবশ্য তার আগেই তিনি তার শিল্পসামর্থ্যের যথেষ্ঠ প্রমাণ রাখতে পেরেছিলেন। মতলুব আলী'র ভাষায়- <blockquote>"পাশ্চাত্যে অবস্থানকালে এবং তৎপরবর্তীকলেও যখন তিনি স্বদেশে অবস্থান করছেন, এঁকেছেন এমন অনেক চিত্র যা একদিকে বিষয়-উপজীব্য ও রূপ-বৈশিষ্ট্যে স্বদেশানুগ হয়েও গড়ন-গঠন ও প্রকাশশৈলীতে পাশ্চাত্যের শিল্পাদর্শের অনুকূল অতি উন্নত মানসম্পন্ন সৃজনশিল্পের প্রমাণ। সেদিক থেকে এদেশের নিরীক্ষাধর্মী আধুনিক চিত্রশিল্প শাখারও তিনি পথ-প্রদর্শক; কারণ শুরুটা গুরু-আবেদিনের মাধ্যমে শুধু সম্পাদিত হয়েছিলো বললে ভুলই হবে, আসলে তাঁর ওই সমস্ত ছবি (যেমন 'পাইন্যার মা'), 'গুণটানা', 'রমণী-১', 'চিন্তা', 'স্নানশেষে', 'কলসী কাঁখে' ও 'কৃষক' প্রভৃতি একটা শক্তিসম্পন্ন শিল্পকর্মের স্ট্যান্ডার্ড উপস্থাপিত করেছিলো পরবর্তী প্রজন্মের চারুশিল্পকর্মীদের জন্য।....... জয়নুল আবেদীন চেয়েছিলেন মাতৃভূমিতে চারুশিল্পীদের অংশগ্রহণ ও কর্মশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে একটি উন্নত শিল্পীসমাজ গড়ে উঠুক। শিল্পীরা ছবি আঁকবে, শিল্পচর্চা করবে আর তার মাধ্যমেই এমন সুন্দর এক পরিবেশ তারা সৃষ্টি করবে যা এদেশের শিল্পকলা ও সংস্কৃতির বিকাশ-অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।"</blockquote><br /><span id="fullpost"><br />আর্ট কলেজের শিক্ষক জয়নুল আবেদীন কিভাবে শিল্পাচার্য হয়ে উঠলেন তার কাহিনী মতলুব আলী স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করেছেন তাঁর 'আমাদের জয়নুল' (১৯৮৫) গ্রন্থভুক্ত 'শিল্পী থেকে শিল্পাচার্য' অধ্যায়ে। একথা তিনি নিজেই প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখ করেছেন। বিস্তারিত উদ্ধৃত করছি:-<br /><blockquote>'একদিন আর্ট কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিক করলো যে, তারা তাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষক প্রতিষ্ঠাতা-অধ্যক্ষ জয়নুল আবেদিনের নামের মাধ্যমে সে বছরের বার্ষিক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবে। তাই করাও হলো- তার সম্মানে কয়েকটি ছত্র কবিতার মতো লিখে, তার শেষে "জয়নুল আবেদিনকে আমরা স্মরণ করছি এই শুভ উদ্বোধনে" এই কথাগুলি প্রদর্শনী উপলক্ষে প্রকাশিত ছোট্ট পুস্তিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে দর্শকদের বিতরণ করে তারা প্রদর্শনীর দরজা খুলে দিলো। আর ওই লেখাটায় তাঁর নামের সামনে ছাত্ররা বুদ্ধি করে জুড়ে দিয়েছে নতুন একটি সম্মানজনক শব্দ: "শিল্পাচার্য"। তা অতিথি-দর্শকদের উদ্দেশে মাইকেও ঘোষণা করা হলো। 'আচার্য' অর্থ হচ্ছে শিক্ষক বা শিক্ষার গুরু, 'শিল্প' শব্দের সাথে আচার্য যোগ করে হলো 'শিল্পাচার্য'। আর জয়নুলতো শিল্প-শিক্ষা বা ছবি আঁকা শিক্ষার গুরুই। এখন 'শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন' এই নাম ছড়িয়ে পড়লো মুখে মুখে, ছাপানো হলো পত্র-পত্রিকায়। শেষটায় এমন হলো যে, শিল্পাচার্য বলতেই আমরা বুঝলাম জয়নুলের নাম।'</blockquote>কিন্তু জয়নুল আবেদীনকে এত শুধুমাত্র ছাতদের দ্বারা সম্মানিত করার প্রয়োজন পড়লো কেন? স্বাভাবিক চিন্তায় এরূপ ভাবনা আসতেই পারে। তার উত্তরও রয়েছে আলোচ্য প্রবন্ধটিতে। মতলুব আলীর ভাষায়:-<br /><blockquote>বর্তমান নিবন্ধকারের জয়নুল-জীবনী বিষয়ক 'আমাদের জয়নুল' (১৯৮৫) গ্রন্থভুক্ত 'শিল্পী থেকে শিল্পাচার্য' অধ্যায়ের উদ্ধৃত কথাগুলি আমার এ-রচনার শিরোনামের সাথে ঘনিষ্ঠ- সে কারণে হুবহু উপস্থাপন করা গেলো। জয়নুল আবেদিনের শিল্পী ও ব্যক্তি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অথচ মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার ওই ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৯৬৭ সালে ঠিক যে-সময় ঢাকার আর্ট কলেজ পরিচয়ে সুবিদিত সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৮/১৯ বছর শিক্ষকতায় নিবেদিত থেকে ও প্রতিষ্ঠাতা-অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অনিবার্য পরিস্থিতিতে ক্ষোভ-অভিমানের বশবর্তী হয়ে তিনি তাঁর পিতার মতোই স্বেচ্ছায় সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। নানাভাবে নানাদিক থেকে শত চেষ্টা ও অনুরোধ-আবেদন করেও তাঁকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি তাঁরই নেতৃত্বে ১৯৪৮-এ প্রতিষ্ঠিত ওই চারুশিল্প শিক্ষায়তনে। শেষে উপায়ান্তর না দেখে মহান গুরুর প্রতি যথাযথ মর্যাদা প্রদানের পরিকল্পনা নিয়ে চারুকলার তৎকালীন শিক্ষার্থীরা তাঁকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই 'শিল্পাচার্য' উপাধিতে ভূষিত করেছিলো।</blockquote><br />জয়নুল আবেদিনের শিল্পাচার্য হওয়ার ঘটনাটি অনুঘটক পত্রিকার প্রবন্ধের স্বল্প পরিসরে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয় নাই। তবে আন্দাজ করা যায়, কর্তৃপক্ষের সাথে নীতিগত বিষয়ে হয়তো কোন মতদ্বৈধতা হয়েছিলো। ঠিক কত তারিখে ছাত্ররা সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলো সেটা উল্লেখ থাকলে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলীর স্বরূপ বোঝা যেত।<br /></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-14978260316354049112008-11-13T19:49:00.013+06:002020-04-19T11:09:17.009+06:00অনুঘটক: এক যথার্থ সামাজিক অনুঘটক<a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEizcLpqA3q9jqi8hHmW8mKx5Rj9cOBRmRZpj9RG9ZBkzukuwC5aEA156JDc0DchI3_WDn55185aeRaOlY5TUJsqGriovc5Ask8C3dVHZcmMeKZlrEphHlHYNxRYGDB5bz3g7RkKWMLwj4k/s1600-h/anughatak.jpg" onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}"><img alt="" border="0" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5268140984001564050" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEizcLpqA3q9jqi8hHmW8mKx5Rj9cOBRmRZpj9RG9ZBkzukuwC5aEA156JDc0DchI3_WDn55185aeRaOlY5TUJsqGriovc5Ask8C3dVHZcmMeKZlrEphHlHYNxRYGDB5bz3g7RkKWMLwj4k/s200/anughatak.jpg" style="cursor: pointer; float: left; height: 200px; margin: 0pt 10px 10px 0pt; width: 142px;" /></a><span style="font-weight: bold;">অনুঘটক</span> পত্রিকাটি পাঠ করলাম। ১ম বর্ষ ১ম সংখ্যা আগস্ট ২০০৮ শ্রাবণ ১৪১৫ সংখ্যা। বর্ণনা হিসেবে 'শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা' বিশেষণ প্রয়োগ যে একেবারে যথার্থ হয়েছে, তা পত্রিকার আগাগোড়া পাঠ শেষে অনুভব করলাম।<br />
<br />
বৈশ্বিক সংকটকে বিশ্লেষণ এবং তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সমস্যাগুলির স্বরূপ উপলব্ধি যে ভিন্নমাত্রার আলোচনার বিষয় নয়, তা বুঝতে পত্রিকাটি সত্যিই অনুঘটকের কাজ করেছে। বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্যক্ষুধা গ্রাস করতে চলেছে সারা পৃথিবীর শক্তিহীন জনগোষ্ঠীকে। বাংলাদেশও এদের সর্বব্যাপী থাবার নিচে বসে আছে। আমাদের দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা, সংকীর্ণতার সুযোগ তারা ব্যবহার করছে পুরোমাত্রায়। ফলে মানুষ থেকে যাচ্ছে নিরন্ন, হচ্ছে শোষিত। সম্পাদকীয়তে বিষয়টাকে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। প্রকাশক ও সম্পাদক সাবিনা আফজা হক কিছুটা দ্বীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছেন -<br />
<blockquote>
গভীর এক সংকট চলছে বিশ্বজুড়ে। চেষ্টা চলছে গোটা পৃথিবীতে বহুজাতিক কোম্পানি ও তাদের দোসর শাসক সম্প্রদায়ের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার। গ্লোবালাইজেসন বা বিশ্বায়নের নামে দেশে দেশে আধিপত্যবাদী সম্প্রদায়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আবার এর বিপরীতে নানা দেশে সচেতন মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশও পরিচালিত হচ্ছে। আবার এর বিপরীতে নানা দেশে সচেতন মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গড়ে উঠছে প্রতিরোধ। সংগ্রামী জনগণই পারে বর্তমান বিশ্ব-ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে। আর জনগণের এই সংকটে, সংগ্রামে পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়েই জন্ম অনুঘটকের।</blockquote>
<br />
<span id="fullpost">মুনাফালোভী কোম্পানীগুলো বংলাদেশেও মুখোমুখি হয়েছে প্রতিবাদের। জনগণের প্রতিক্রিয়া দেশের বিভিন্ন জায়গাতে তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছে। তেল-গ্যাস, কয়লাসহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদের উপর আপামর জনগণের অধিকারের দাবী দীর্ঘদিনের। এদেশেও এটা গণবাদী। "অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের লেখায় জানা যায় কিভাবে অসম চুক্তির মাধ্যমে জনগণের সম্পদ বহুজাতিক কোম্পানীর কাছে ইজারা দেয়া হচ্ছে।" ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল অঞ্চলে অবস্থিত গারো পাহাড় ও তার পরিপার্শ্বের বনাঞ্চল দেশের মোট বনাঞ্চলের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশে পরিণত হয়েছে। এই অবশেষটুকুর উপরেও নজর পড়েছে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানীর। "লাউয়াছড়া বনে কর্পোরেট তেল-গ্যাস কোম্পানির ধ্বংসযজ্ঞে গ্যাস অনুসন্ধানের নামে কেবলমাত্র বনের প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্রেরই যে ক্ষতি হয়েছে তা নয়, লাউয়াছড়া বননির্ভর স্থানীয় খাসিয়া, ত্রিপুরী, চা-বাগানী ও প্রান্তিক বাঙালি জনগণের অস্থিত্বও হুমকির সম্মুখীন। পাভেল পার্থর লেখায় উঠে এসেছে সেই ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র।" সম্পাদক প্রতিবাদ করে বলেছেন:-</span><br />
<blockquote>
<span id="fullpost">ঘোষিত হয়েছে "জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮।" সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিভাবে পশ্চাদপদ নারী সমাজের উন্নয়নের কোন দিক নির্দেশনাই নেই এ নীতিমালায়। তারপরেও ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর লাঠি প্রদর্শনের কারণে এ নীতিমালাও এখন অন্ধকারে।</span></blockquote>
<span id="fullpost">অনুঘটক পত্রিকার সম্পাদনা পর্ষদে আছেন-</span><br />
<ul><span id="fullpost">
<li>শারমিন মৃধা</li>
<li>ডা. সারোয়ার জাহান</li>
<li>সারোয়ারী কামাল</li>
<li>সাহানা আজুবা হক</li>
</span></ul>
<span id="fullpost">
এঁদের সুচিন্তিত বিবেচনায় সূচিপত্রের যে রূপ তার সম্পূর্ণটুকু নিচে তুলে দিলাম।<br /><br /><span style="font-weight: bold;">প্রবন্ধ</span><br />* সমুদ্রসীমা, তেল-গ্যাস চুক্তি ও জনগণের স্বার্থ: আনু মুহাম্মাদ<br />* কর্পোরেট খুনখারাবি ও রক্তাক্ত লাউয়াছড়া: পাভেল পার্থ<br />* বাংলাদেশে পোস্ট মডার্ণ' বিপ্লবের উদাহরণ: শনির আখড়া: এম. এম. আকাশ<br />* হবিগঞ্জ জেলার চা শ্রমিকদের সরল জীবনচিত্র- ৭ হাত বাই ১৪ হাত ঘরে তিন পুরুষের বসবাস: জিয়াউল হক বাবলু<br />* পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি সমস্যা ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন: মঙ্গল কুমার চাকমা<br />* সংস্কৃতি আমাদের হারানো প্রত্যয়: আবুল কাশেম ফজলুল হক<br />* বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্প: গজ্নফর কবীর<br /><br /><span style="font-weight: bold;">গল্প</span><br />* শিবলী পাত্রিসিয়া: ফারুক হাসান<br /><br /><span style="font-weight: bold;">কবিতা</span><br />* মৈত্রী ট্রেন: রহমান হেনরী, রাজশ্রীরা হারিয়ে যাচ্ছে- বিশ্বায়নের ঝাঁঝালো বসন্তে: সরওয়ার জাহান<br />* এসো আজিকে এসো: প্রত্যয় জসীম, দৃশ্যের দৃশ্য: আশিক আকবর<br />* বর্ষা আকাশ নামায়: ইয়াসির আজিজ, আমি থাকি ঘোরে: শিহাব বাহাদুর<br />* আমার এ মৃত্যুকূপের: হিজল জোবায়ের, নিবেদিত কবিতা: নাজমা সুলতানা বেবী<br />* ভিন্ন ভাষার কবিতা- আমির বারাকা: ভাষান্তর তুহিন তৌহিদ<br /><br /><span style="font-weight: bold;">বিজ্ঞান</span><br />* বুদ্ধির উদবর্তন মূল্য ও প্রজাতির অস্তিত্ব: রুশো তাহের<br /><br /><span style="font-weight: bold;">চিন্তা</span><br />* অবসাদের অধ্যাস: শাহজাহান চাকলাদার<br />* সাম্প্রতিক কবিতা- পরিপ্রেক্ষেত বিবেচনা: আহমেদ ফিরোজ<br /><br /><span style="font-weight: bold;">স্মরণ</span><br />* গুরু আমার অমর গুরু: মতলুব আলী<br />* ভাবনায় সেলিম আল দীন:পীযূষ শিকদার<br /><br /><span style="font-weight: bold;">নারী</span><br />* রাষ্ট্র পরিচালনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য: সাবিনা আফজা হক<br /><br />পত্রিকাটিকে সম্পূর্ণ করে তুলতে সম্পাদক ও সম্পাদনা পর্ষদের সদস্যরা নিয়ত ক্লান্তিহীন চেষ্টা চালিয়েছেন একথা অকুন্ঠচিত্তে স্বীকার করছি। এই ধরণের বিষয়সমৃদ্ধ পত্রিকা বিক্রি হয় কম। সেকথা তাঁরা বিলক্ষণ জানতেন। সেকথা স্বীকার করেছেন সম্পাদকীয়তেও:- "নতুন বছরের বাজেট পাশ হয়ে গেছে আরেক দফা বেড়েছে তেল-গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম, নাভিশ্বাস অবস্থা সাধারণ মানুষের।" সামাজিক দায়বদ্ধতাকে সম্পাদকগণ এড়িয়ে যেতে চাননি। তাদের এই চেতনাকে সম্মান করি।</span><div>
<br /># <span style="font-style: italic;">সম্পাদকীয়তে আলোকচিত্রী <span style="font-weight: bold;">চলমান</span> এর ছবির কথা বলা হয়েছিল। মনে হয়েছিল একাধিক ছবি থাকবে। কিন্তু রয়েছে মাত্র একটি। খাদ্যসঙ্কটের কথা বলা সেই ছবিটি সবশেষ পাতায় (পৃ-৩২) এমনভাবে দেয়া হয়েছে যে চোখে পড়েনা। কোন হেডিং নেই। পরবর্তী সংখ্যায় এটা সংশোধন করা হবে বলে প্রত্যাশা করি।</span></div>
সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-48284931835266271902008-11-01T14:38:00.003+06:002008-11-01T15:19:43.316+06:00মেসেদিনীমুজতবা আলীর 'পঞ্চতন্ত্র' বই থেকে কিছু মজার ঘটনা পূর্বের দুটি পোস্টে (<a href="http://pathagar.blogspot.com/2008/10/blog-post.html">পোস্ট এক</a> এবং <a href="http://pathagar.blogspot.com/2008/10/blog-post_12.html">পোস্ট দুই</a>) লিখেছিলাম। আজ একই বই থেকে আরেকটি কাহিনী পড়বো।<span style="font-weight: bold;"> মেসেদিনী</span> শীর্ষক রচনাটিতে লেখক সংক্ষেপে দেশপ্রেম, মাতৃভাষার প্রতি ভক্তি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্পর্কে অনুকরণীয় উদাহরণ প্রকাশ করেছেন।<br /><br />মুজতবা আলী একবার ভারতবর্ষে ফিরছিলেন। জাহাজে অনেক যাত্রীর মধ্যে একজন মহিলা যিনি বোম্বেতে (অধুনা মুম্বাই) আসছিলেন। লন্ডনে তার স্বামী ব্যবসা জমিয়ে বসেছে। ভারতে মেয়ের বাড়িতে আসছেন। ইংল্যান্ডে বাড়ি বানাবার পূর্বে তারা ইরানে থাকতেন। ইরানের মেসেদে তাদের ব্যবসা ছিল। লন্ডনে আটবছর বাস করেও মহিলা একবর্ণ ইংরেজি শেখেননি। যে সময়ের কাহিনী (৩০ এর দশক) সে সময়ে ইরানে ইহুদীরাও যে বাস করতো তার একটি চিত্র এই <span style="font-weight: bold;">মেসেদিনী</span> রচনাটি থেকে জানতে পারলাম।<br /><br />মহিলা ইংরেজি না জানার কারণে কারও সাথে কথা বলতেন না। মুজতবা আলী ফার্সী ভাষায় তার সঙ্গে কথা বলতেন। তাকে পেয়ে মহিলা হাঁফ ছেড়েছিলেন। জাহাজ ছেড়ে আসার পর থেকে কারও সাথে কথা বলতে না পেরে তিনি হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। ইংরেজি শেখেননি কেন এ কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন:-<br /><blockquote>লণ্ডনে তো আমি ইচ্ছে করে যাই নি। আমার স্বামী মেশেদে সর্বস্বান্ত হয়ে লণ্ডন গেলেন তাঁর কাকার কাছে। আমরা ইহুদি, জানেন তো, আমরা ব্যবসা করি দুনিয়ার সর্বত্র। সেখানে ওঁর দু'পয়সা হয়েছে, কিন্তু আমাদ্বারা আর ইংরিজি শেখা হল না। ইরানী ইহুদিরা যে দু'চারজন লণ্ডনে আছেন, তাঁদের সঙ্গেই মেলামেশা করি, কথাবার্তা কই। তবে হাট করতে গিয়ে "গ্রীন পীজ, কলি-ফ্লাওয়ার, ট্যাপেল, ত্রাপেন্স-হে পেনি" বলতে পারি, ব্যস।</blockquote>স্বামী লণ্ডনে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দিনে দিনে তার ব্যবসার প্রসার বাড়ছে। তার আর লণ্ডন ছাড়ার ইচ্ছে নেই। মহিলা কিন্তু লণ্ডন শহরটাকে মোটেও ভালবাসতে পারছেন না। মেসেদ শহরের স্মৃতি তাকে প্রায়ই কাতর করে তোলে। জন্মভূমির জন্য তার আকুলতা তার বক্তব্যের প্রত্যেক লাইনে স্পষ্ট।<br /><span id="fullpost"><br /><blockquote>লণ্ডন সাফসুৎরো জায়গা, বিজলি বাতি, জলের কল, খাওয়া-দাওয়া, থিয়েটার সিনেমা সবই ভালো- কোথায় লাগে তার কাছে বুড়ো গরীব মেশেদ? তবু যদি জানতুম একদিন সেই মেশেদে ফিরে যেতে পারবো, তাহলেও না হয় লণ্ডনটার সঙ্গে পরিচয় করার চেষ্টা করতুম, কিন্তু যখনই ভাবি ঐ শহরে আমাকে একদিন মরতে হবে, আমার হাড় ক'খানা বাপ-পিতামোর হাড়ের কাছে জায়গা পাবে না, তখন যেন সমস্ত শহরটা আমার দুশমন, আমার জল্লাদ বলে মনে হয়।</blockquote>জাহাজে কয়েকদিন সঙ্গ পেয়ে (আসলে একমাত্র তার সাথেই মাতৃভাষায় কথা বলতে পেরেছেন বলে) মহিলা মুজতবা আলীর উপর খুব কৃতজ্ঞ বোধ করছিলেন। বোম্বে পৌছে লেখককে আর হোটেলে উঠতে দেননি। মেয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন। জাহাজ ঘাটে পৌছলে, কাস্টমস এর আনুষ্ঠানিকতা শেষে মহিলা মুজতবা আলীকে ধরে নিয়ে গিয়ে মেয়ে ও জামাই এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন:<br /><blockquote>এই আমার বন্ধু দিল-জানের দোস্ত, আমার সঙ্গে ফার্সী কথা কয়েছে, ফুর্তি-ফার্তি হৈ-হল্লা ছেড়ে দিয়ে। মেয়ে যতই জিজ্ঞেস করে, জাহাজে ছিলে কি রকম, খেলে কি, বাবা কি রকম আছেন, কে বা শোনে কার কথা, সত্য-সত্যই জাহাজে যেন 'সমুদ্রে রোদন।' তিনি বারবার বলেন, 'বুঝলি, নয়মি, এঁকে আচ্ছাসে খাইয়ে দিতে হবে। পোলাওর সব মালমশলা আছে তো বাড়িতে?'</blockquote>লেখক তাদের সাথে তিন দিন ছিলেন। এই তিন দিন কেমন ছিলেন, তা লেখকের জবানীতে শোনা যাক:<br /><blockquote>সে তিন দিন কি রকম ছিলুম? মাছ যে রকম জলে থাকে। ভুল বলা হল: মাছকে যদি শুধান, 'কি রকম আছে?' তবে সে বলবে, 'সৈয়দের ব্যাটা যে রকম ইহুদী পরিবারে ছিল'।</blockquote><br /></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-8560045241963552092008-10-12T21:48:00.008+06:002008-10-13T17:22:59.167+06:00মুজতবা আলীর 'পঞ্চতন্ত্র' থেকে ০১সৈয়দ মুজতবা আলী'র 'পঞ্চতন্ত্র' বইটি থেকে আরও কয়েকটি মজার ঘটনা উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি না।<br /><span style="font-weight: bold;">বর্ষা</span> নামক নিবন্ধটি থেকে আমরা জানতে পারি, মিসরের কায়রোতে বৃষ্টি খুব কম হয়। লেখকের ভাষ্যে 'কাইরোতে বছরে ক'ইঞ্চি বৃষ্টি পড়ে এতদিন বাদে সে কথা আমার স্মরণ নেই। আধা হতে পারে সিকিও হতে পারে।' এটুকু পাঠ করেই বোঝা যাচ্ছে কায়রোতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কেমন। তো, কায়রোতে লেখকের চোখের সামনেই একদিন বৃষ্টি এল। এই বৃষ্টি নিয়েই সুদানের এক ছেলে একটি গল্প বলল। গল্পটি এরকম:-<br /><blockquote>সুদানের একটি ছেলের সঙ্গে আলাপ হ'ল। সে বললে, তার দেশে নাকি ষাট বছরের পর একদিন হঠাৎ কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি নেবেছিল। মেয়েরা কাচ্চা-বাচ্চারা, এমন কি গোটা কয়েক জোয়ান মদ্দরা পর্যন্ত হাউমাউ করে কান্নাকাটি জুড়েছিল, 'আকাশ টুকরো টুকরো হয়ে আমাদের ঘাড়ে ভেঙ্গে পড়লো গো। আমরা যাব কোথায়? কিয়ামতের (মহাপ্রলয়ের) দিন এসে গেছে। সব পাপের তওবা (ক্ষমা-ভিক্ষা) মাঙবার সময় পেলুম না, সবাইকে যেতে হবে নরকে।' গাঁও-বুড়োরা নাকি তখনো সান্তনা দিয়ে বলেছিলেন, 'এতে ভয় পাবার কিছু নেই। আকাশটুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ছে না। এ যা নাবছে সে জিনিস জল। এর নাম মৎর্ (অর্থাৎ বৃষ্টি)।' সুদানী ছেলেটি আমায় বুঝিয়ে বললে,'আরবী ভাষায় মৎর্ (বৃষ্টি) শব্দ আছে; কারণ আরব দেশে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়, কিন্তু সুদানে যে আরবী ভাষা প্রচলিত সে-ভাষায় মৎর্ শব্দ কখনো ব্যবহৃত হয়নি বলে সে শব্দটি সুদানী মেয়েছেলেদের সম্পূর্ণ অজানা।'</blockquote><span id="fullpost"><span style="font-weight: bold;">বেদে</span> নামক নিবন্ধে লেখক প্রথমেই একটু ভূমিকা টেনেছেন। সেখানে 'রাসল পাশা'র একটি বইয়ের কথা বলেছেন। এই বইয়ে রাসল পাশা মন্তব্য করেছেন, পৃথিবীর সকল বেদের (জিপসী) ভাষা আদতে ভারতীয়। মুজতবা আলী এটা বিশ্বাস করতে চাননি। সন্দেহ পোষণ করেছেন এভাবে:<br /><blockquote>পণ্ডিত নই, তাই চট করে বিশ্বাস করতে প্রবৃত্তি হয় না। ইউরোপীয় বেদেরা ফর্সায় প্রায় ইংরেজের সামিল, সিংহলের বেদে ঘনশ্যাম। আচার-ব্যবহারেও বিস্তর পার্থক্য, বৃহৎ ফারাক। আরবিস্থানের বেদেরা কথায় কথায় ছোরা বের করে, জর্মনীর বেদেরা ঘুষি ওঁচায় বটে, কিন্তু শেষটায় বখেড়ার ফৈসালা হয় বিয়ারের বোতল টেনে। চীন দেশের বেদেরা নাকি রূপালি ঝরণাতলায় সোনালি চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চুকুস চুকুস করে সবুজ চা চাখে।</blockquote>কিন্তু নিজের জীবনের একটি ঘটনার শেষে তিনি বিশ্বাস না করে পারলেন না। তখন তিনি জার্মানীর রাজধানীতে। বয়স ২৫/২৬। একদিন কলেজের পাশের কাফেতে বসে কফি খাচ্ছিলেন। তখন এক বেদেনী তাকে 'যবনিকা' ভাষায় কি জানি বলতে লাগল। "সে ভাষা আমার চেনা-অচেনা কোন ভাষারই চৌহদ্দি মাড়ায় না, কিন্তু শোনালো - তারই মুখের মত-মিষ্টি।" পরে কাফে মালিক মুজতবা আলীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে যখন বললেন যে তিনি ভারতীয়, তখন মেয়েটা হুঙ্কার দিয়ে কাফেওয়ালাকে বলল, "সেই কথাইতো হচ্ছে। আমরা বেদে, ভারতবর্ষ আমাদের আদিম ভূমি। এও ভারতীয়। আমার জাতভাই। ভদ্রলোক সেজেছে, তাই আমার সঙ্গে কথা কইতে চায় না।" পরে মুজতবা আলীর সাথে আলাপচারিতায় জানা গেল। এরা বেদে, কিন্তু পড়াশোনা করে না। তারা ভাবতেও পারে না, কোন বেদে কখনও পড়াশোনার চৌহদ্দি মাড়িয়েছে।<br /><blockquote>" বুঝতে পেরেছি বাপু, বুঝতে পেরেছি; বাপ তোমার দু'পয়সা রেখে গিয়েছে- হঠাৎ নবাব হয়েছ। এখন আর বেদে পরিচয় দিতে চাও না! হাতে আবার খাতাপত্র- কলেজ যাও বুঝি? ভদ্রলোক সাজার শখ চেপেছে, না?"<br />আমি বললুম, 'ফ্রালাইন, তুমি ভুল বুঝেছ। আমার সাতপুরুষ লেখাপড়া করেছে। আমিও তাই করছি। ভদ্রলোক সাজা না সাজার কোনো কথাই উঠছে না।'<br />মেয়েটি এমনভাবে তাকালো যার সোজা অর্থ 'গাঁজা গুল'। জিজ্ঞেস করল, 'তুমি ভারতীয় নও?<br />'আমি বললুম, 'আলবৎ'!<br />আনন্দের হাসি হেসে বলল, 'ভারতীয়েরা সব বেদে।'<br />আমি বললুম, 'সুন্দরী, তোমরা ভারতবর্ষ ছেড়েছ, দু-হাজার বছর কিংবা তারও পূর্বে। বাদবাকী ভারতীয়রা এখন গেরস্থালী করে।'</blockquote>মুজতবা আলীর বক্তব্য মেয়েটা কিছুতেই বিশ্বাস করে নি। পরে জানাল শহরের বাইরে রাখা তাদের সার্কাসের গাড়ি রাখা আছে। তার বাবা-মার সাথে তর্ক করার আমন্ত্রণ জানাল। বলল -"বাবা সব জানে। কাচের গোলার দিকে তাকিয়ে সব বাৎলে দেবে।"<br /><br /><span style="font-weight: bold;">ভাষাতত্ত্ব</span> নিবন্ধের একটি রসিকতা।<br /><blockquote>'ফরাসী ভাষাটা সব সময় ঠিক বুঝতে পারি কি না বলা একটু কঠিন। এই মনে করুন, কোনো সুন্দরী যখন প্রেমের আভাস দিয়ে কিছু বলেন, তখন ঠিক বুঝতে পারি আবার যখন ল্যান্ডলেডি ভাড়ার জন্য তাগাদা দেন তখন হঠাৎ আমার তাবৎ ফরাসী ভাষাজ্ঞান বিলকুল লোপ পায়।'</blockquote><br /><span style="font-weight: bold;">দাম্পত্য জীবন</span> নামক নিবন্ধে তিনটি সংস্কৃতির দাম্পত্য জীবন নিয়ে কাহিনী আছে। মুজতবা আলীর একজন চীনা বন্ধু ছিল। তারা দুজনে অফিস ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই ক্লাবে এসে আড্ডা দিতেন। ক্লাবের এক কোনে নিমগাছের তলায় বসে তারা গল্পগুজবে মজে যেতেন। সাথে একজন ইংরেজ ছিলেন। কথায় কথায় তাদের মধ্যে একটি বিবাহিত জীবন নিয়ে আলোচনা শুরু হল। প্রথমে ইংরেজের গল্প। তাঁর গল্পটি এরকম। লন্ডনে একবার স্বামীদের বিরাট প্রতিবাদ সভা হচ্ছিল। মিছিল মিটিং চলছে।<br />প্রসেশনের মাথায় ছিল এক পাঁচ ফুট টিঙটিঙে হাড্ডি-সার ছোকরা। হঠাৎ বলা নেই, কওয়া নেই ছ'ফুট লম্বা ইয়া লাশ এক ঔরৎ দুমদুম করে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার হাত ধরে এক হ্যাঁচকা টান দিয়ে বললে, 'তুমি এখানে কেন, তুমি তো আমাকে ডরাও না। চলো বাড়ি।' সুড়সুড় করে ছোকরা চলে গেল সেই খাণ্ডার বউয়ের পিছনে পিছনে।'<br />এবার চীনা বন্ধুর গল্প। চীনা গুণী আচার্য সূ রচিত শাস্ত্রে এই ঘটনার উল্লেখ আছে। একবার পেপিং শহরে অত্যাচার-জর্জরিত স্বামীরা এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল। কিভাবে স্বামীদেরকে খান্ডার গৃহিনীদের হাত থেকে উদ্ধার করা যায় সেই বিষয়ের আলোচনা সভার প্রধান উদ্দেশ্য। সভাপতি ছিলেন ষাট বছর ধরে দজ্জাল গিন্নীর হাতে নিপীড়িত এক দাড়িওয়ালা অধ্যাপক। সভায় বক্তারা নিজ নিজ অভিজ্ঞতা বলে গেলেন। -"স্ত্রীলোকের অত্যাচারে দেশ গেল, ঐতিহ্য গেল, ধর্ম গেল, সব গেল, চীন দেশ হটেনটটের মুল্লুকে পরিণত হতে চলল, এর একটা প্রতিকার করতেই হবে। ধন-প্রাণ, সর্ব দিয়ে এ অত্যাচার ঠেকাতে হবে' ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন সময় দারোয়ান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে জানালো এ সভার খবর পেয়ে গিন্নীরা 'ঝাঁটা, ছেড়া জুতো, ভাঙা ছাতা' ইত্যাদি নিয়ে তেড়ে আসছে। এ কথা শুনে তো সবাই পড়িমড়ি করে পালিয়ে গেল। শুধুমাত্র সভাপতি তার আসনে শান্ত গম্ভীর মুখ নিয়ে বসে আছেন। দারোয়ান কাছে গিয়ে বলল-<br />হুজুর যে সাহস দেখাচ্ছেন তাঁর সামনে চেঙ্গিস খান তসলীম ঠুকতেন, কিন্তু এ তো সাহস নয়, এ হচ্ছে আত্মহত্যার শামিল। গৃহিনীদের প্রসেশনে সক্কলের পয়লা রয়েছেন আপনারই স্ত্রী। এখনো সময় আছে। আমি আপনাকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।। সভাপতি তবু চুপ। তখন দারোয়ান তাঁকে তুলে ধরতে গিয়ে দেখে তাঁর সর্বাঙ্গ ঠাণ্ডা। হার্টফেল করে মারা গিয়েছেন।<br />এবার মুজতবা আলীর পালা। গল্পটি অবশ্য পরিচিত। রাজা নিজ বৌয়ের (রাণীর) অত্যাচারে মন খারাপ করে বসে আছেন। মন্ত্রী কারণ জানতে চাইলে বললেন- "ঐ রাণীটা- ওঃ কি দজ্জাল, কি খাণ্ডার। বাপরে বাপ! দেখলেই বুকের রক্ত হিম হয়ে আসে।"<br />মন্ত্রী বললেন এ আর কি ব্যাপার, বউকে তো সবাই ডরায়। এজন্য মন খারাপ করে বসে থাকতে হবে নাকি? রাজা বিশ্বাস না করলে মন্ত্রী জনসমাবেশের ব্যবস্থা করলেন। সেখানে বলা হলো, যারা বউকে ভয় পায়না তারা একদিকে আর যারা ভয় পায় তারা পাহাড়ের দিকে যেন যায়। মুহূর্তের মধ্যে পাহাড়ের দিকটা ভর্তি হয়ে গেল। একজন শুধু ফাকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তখন মন্ত্রী তাকে ডেকে বললেন-"তুমি যে বড় ওদিকে দাঁড়িয়ে? বউকে ডরাও না বুঝি?"<br /><blockquote>লোকটা কাঁপতে কাঁপতে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললে, 'অত শত বুঝি নে, হুজুর। এখানে আসবার সময় বউ আমাকে ধমক দিয়ে বলেছিল, "যেদিকে ভিড় সেখানে যেয়ো না।" তাই আমি ওদিকে যাই নি।'</blockquote></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-9278340424610560072008-10-08T19:33:00.015+06:002008-10-31T01:10:28.277+06:00সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiVQX5xaLzXB_O5RVNxc_hFPAUFR5pLVH45KoCUOEcUMxvuplbFtGCGHGjVwQjTGSMAvXvbgDnmUm0ST7cGWyFp3xGB5Ys9Ul5nRBIH8Mvivb6-aJNj5vWxU2fHvgeMglr57h4MLvoanUw/s1600-h/mu.pancha.JPG"><img style="margin: 0pt 10px 10px 0pt; float: left; cursor: pointer;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiVQX5xaLzXB_O5RVNxc_hFPAUFR5pLVH45KoCUOEcUMxvuplbFtGCGHGjVwQjTGSMAvXvbgDnmUm0ST7cGWyFp3xGB5Ys9Ul5nRBIH8Mvivb6-aJNj5vWxU2fHvgeMglr57h4MLvoanUw/s200/mu.pancha.JPG" alt="" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5254776225741311954" border="0" /></a>সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত 'পঞ্চতন্ত্র' বইটি পড়লাম। তাঁর সব কটা বই এখনও আমি যে পড়ে উঠতে পারি নি, সেকথা স্বীকার করতে বিব্রত বোধ করছি। তাঁর 'দেশেবিদেশে', 'চাচাকাহিনী' বইদুটোই শুধু পড়েছি। বিখ্যাত 'শবনম' উপন্যাসটি এখনও পড়তে পারিনি।<br /><br />আসলে বই কেনার অভ্যাসটাই আমাদের মধ্যে এখনও তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। আবার সামর্থ্য থাকলেও বই কেনার আগ্রহ ও সদিচ্ছার অভাবটাও মাঝেমধ্যে প্রকট হয়ে ওঠে। সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত 'বইকেনা' প্রবন্ধটি অনেকেরই পড়া আছে। এই প্রবন্ধটির মূল বক্তব্যও কিন্তু বই পড়া ও বইকেনার অভ্যাসকে নিয়েই। এই বইকেনা প্রবন্ধটি তাঁর <span style="font-weight: bold;">'পঞ্চতন্ত্র' </span>গ্রন্থের অন্তর্ভূক্ত। পঞ্চতন্ত্র বইয়ের বেশিরভাগ রচনা ত্রিশের দশকের সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে রচিত।<br /><br />তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের ছাত্র ও শিক্ষক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষাতত্ত্ব ও ধর্মতত্ত্বে পাণ্ডিত্য ছিল অসাধারণ। একাধিক বিদেশী ভাষা যেমন সংস্কৃত, হিন্দি, আরবি, ফারসি, উর্দু, মারাঠি, গুজরাটি, ইংরেজি, ফরাসি, ইতালিয়ান ও জার্মান ভাষায় তিনি দক্ষ ছিলেন। তাকে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মতত্ত্ব ও তার তুলনামূলক বিচারে এই উপমহাদেশের স্বল্পসংখ্যক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম বলা হয়।<br /><span id="fullpost"><br /><br />তাঁর পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থটি অনেকগুলো প্রবন্ধের একটি সংকলন। গ্রন্থের সূচনায় লেখকের বয়ানে জানা যায়:-<br /><blockquote>এই পুস্তিকার অধিকাংশ লেখা রবিবারের 'বসুমতী' ও সাপ্তাহিক 'দেশ' পত্রিকায় বেরোয়। অনুজপ্রতিম শ্রীমান কানাই সরকার ও সুসাহিত্যিক শ্রীযুক্ত মনোজ বসু কেন যে এগুলো পুস্তিকাকারে প্রকাশ করার জন্য আমাকে বাধ্য করলেন সে কথা সুহৃদয় পাঠকেরা বিবেচনা করে দেখবেন।<br />সৈয়দ মুজতবা আলী, নয়াদিল্লী, আষাঢ়, ১৩৫৯</blockquote>পঞ্চতন্ত্র বইটির সূচিপত্র বেশ সমৃদ্ধ। সবগুলো রচনাকে দুইপর্বে সাজানো হয়েছে।<br /><ul><li>প্রথম পর্ব ও</li><li>দ্বিতীয় পর্ব</li></ul>প্রথম পর্বে প্রবন্ধ রয়েছে মোট ৩৫টি আর দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে ৩৪টি। সৈয়দ মুজতবা আলী তার পাণ্ডিত্যমিশ্রিত রসবোধের জন্য বিখ্যাত। তাঁর সে অসাধারণ সামর্থ্যের পরিচয় প্রতিটি প্রবন্ধেই রয়েছে। কয়েকটি প্রবন্ধ থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরছি।<br /><blockquote>বার্ট্রাণ্ড রাসেল বলেছেন- সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতরে ডুব দেওয়া। যে যত বেশী ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, ভবযন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার বেশী হয়।- বই কেনা</blockquote>কোনটা মহত্ত্বর? জ্ঞানার্জন নাকি ধনার্জন? এ বিষয়ক একটি সমস্যার সমাধান লেখক খুঁজে পেয়েছেন জনৈক আরব পণ্ডিতের লেখাতে।<br /><blockquote>পণ্ডিত লিখেছেন- 'ধনীরা বলে, পয়সা কামানো দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কর্ম কিন্তু জ্ঞানীরা বলেন, না, জ্ঞানার্জন সবচেয়ে শক্ত কাজ। এখন প্রশ্ন, কার দাবিটা ঠিক, ধনীর না জ্ঞানীর? আমি নিজে জ্ঞানে সন্ধানে ফিরি, কাজেই আমার পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া কঠিন। তবে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি, সেইটে আমি বিচক্ষণ জ্ঞানের চক্ষু-গোচর করতে চাই। ধনীর মেহন্নতের ফল হল টাকা। সে ফল যদি কেউ জ্ঞানীর হাতে তুলে দেয়, তবে তিনি সেটা পরমানন্দে কাজে লাগান, এবং শুধু তাই নয়, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, জ্ঞানীরা পয়সা পেলে খরচ করতে পারেন ধনীদের চেয়ে অনেক ভালো পথে, ঢের উত্তম পদ্ধতিতে। পক্ষান্তরে, জ্ঞানচর্চার ফল সঞ্চিত থাকে পুস্তকরাজিতে এবং সে ফল ধনীদের হাতে গায়ে পড়ে তুলে ধরলেও তারা তার ব্যবহার করতে জানে না।- বই পড়তে পারে না।'- বই কেনা</blockquote>আরব পণ্ডিতের বক্তব্য শেষ হয়েছে এই বলে যে 'অতএব সপ্রমাণ হল জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর।'<br />মুজতবা আলী এই গল্পের উপসংহারে বলেছেন -"তাই প্রকৃত মানুষ জ্ঞানের বাহন পুস্তক যোগাড় করার জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করে।'- বই কেনা<br /><span style="font-weight: bold;">'আহারাদি'</span> প্রবন্ধটিতে খাবারের আন্তর্জাতিক রূপ যে কত বৈচিত্র্যময় তার একটি মনোজ্ঞ বর্ণনা পাওয়া যায়। এখান থেকে কয়েকটা খাবারের দেশিবিদেশী নাম জেনে নেই।<br /><ul><li>আমাদের দেশের মাংশের ঝোল এবং প্যারিসের রেস্তোরাগুলোতে পরিবেশিত 'হাঙ্গেরিয়ান গুলাশ' এর মধ্যে মূলগত কোন পার্থক্য নেই।</li><li>'ইতালিয়ান রিসেত্তো' মূলত ভারতীয় পোলাও মাংসের মতই।</li></ul>আহারাদি প্রবন্ধ থেকে একটু বর্ণনা করি।<br />কাইরোতে (কায়রো) খেলেন মিশরী রান্না। চাক্তি চাক্তি মাংস খেতে দিল, মধ্যিখানে ছ্যাঁদা। দাঁতের তলায় ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে বটে, কিন্তু সোওয়াদ খাসা। খাচ্ছেন আর ভাবছেন বস্তুটা কি, কিন্তু কোন হদিস পাচ্ছেন না। হঠাৎ মনে পড়ে যাবে, খেয়েছি বটে আমজাদিয়ায় এই রকম ধারা জিনিস- শিক কাবাব তার নাম। তবে মসলা দেবার বেলায় কঞ্জুসী করেছে বলে ঠিক শিক কাবাবের সুখটা পেলেন না।<br /><br />একই রান্না বিভিন্ন দেশে গিয়ে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন নাম গ্রহণ করেছে। মানুষের রুচি, অভ্যাস ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি প্রভাব এর অন্যতম কারণ। ইতিহাস পাঠ করতে গিয়ে এর সন্ধান মেলে। তুর্কি ও পাঠানরা যখন ভারত জয় করে, তখন ভারতের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের মানুষেরা নিরামিষভোজী ছিল। তুর্কিদের প্রভাবে তারা মাংস খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়। তুর্কিরাও পূর্বে মাংসের সাথে মসলা মেশাতে জানতো না। ভারতীয়দের প্রভাবে তারাও মশলা খাওয়া শুরু করে। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী রান্নার সাথে ভারতীয় মসলার মিশ্রণে যে অসাধারণ রান্নার আবিষ্কার হল, তারই নাম মোগলাই রান্না। মোগলাই রান্নার ঘ্রাণ আস্তে আস্তে সারা ভারতকে ছেয়ে ফেলেছে। এই তুর্কিরা পরে যখন বল্কান অঞ্চল জয় করে হাঙ্গেরি পার হয়ে ভিয়েনাতে গিয়ে হাজির হয়, তখন মোগলাই মাংসের ঝোল পরিবর্তিত হয়ে 'হাঙ্গেরিয়ান গুলাশ' নাম ধারণ করল। মিশর ও তুর্কিদের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে ভেনিসের মানুষ 'মিনসটমীটের' পোলাও বা 'রিসোত্তো' বানাতে শিখে ফেলল। গ্রিস তুরস্কের অধিকারভুক্ত ছিল বলে গ্রিসের রান্নাতেও মশলার যথেষ্ঠ ব্যবহার রয়েছে।<br /><br />ভোজনবিলাসী মানুষ ছিলেন মুজতবা আলী। খাদ্যরসিকদের প্রতি তার যে ভালোবাসা, তা থেকে তিনি মন্তব্য করেছেন:-<br /><blockquote>পৃথিবীতে দ্বিতীয় উচ্চাঙ্গের রান্না হয় প্যারিসে কিন্তু মশলা অতি কম, যদিও রান্না ইংরেজী রান্নার চেয়ে ঢের ঢের বেশী। এককালে তামাম ইয়োরোপে ফ্রান্সের নকল করত, তাই বল্কান গ্রীসেও প্যারিসী রান্না পাবেন। গ্রীস উভয় রান্নার সঙ্গমস্থল। বাকি জীবনটা যদি উত্তম আহারাদি করে কাটাতে চান, তবে আস্তানা গাড়ুন গ্রীসে (দেশটাও বেজায় সস্তা)। লাঞ্চ, ডিনার, সাপার খাবেন ফরাসী মোগলাই এবং ঘরোয়া গ্রীক কায়দায়।</blockquote>নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসকে নিয়ে তার লেখা <span style="font-weight: bold;">নেতাজী</span> প্রবন্ধ থেকে দুটো অংশ উদ্ধৃত করি। সেকালের অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে দেশ স্বাধীন করার লড়াইয়ে হিন্দু-মুসলিম সমস্যাটা বেশ প্রকট ছিল। পরস্পরের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ এত বেশি ছিল যে শেষ পর্যন্ত ধর্মের নামে একটি অখণ্ড দেশ একাধিক ভাগে ভাগ হয়ে গেল। বেশিরভাগ নেতাদের মধ্যেই কোন না কোন ধর্মের প্রতি সহানুভূতি ছিল বা তারা কোন একটি ধর্মাবলম্বী মানুষদের পক্ষে কথা বলতেন। সেই ধর্মের মানুষেরাই শুধু তাকে সমর্থন করত। এর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র।<br /><blockquote>একদিকে যেমন দেখতে পাই, সুভাষচন্দ্র 'আজাদ হিন্দ' নামটি অনায়াসে সর্বজনপ্রিয় করে তুললেন, অন্যদিকে দেখি, কৃতজ্ঞ মুসলমানেরা তাঁকে 'নেতাজী' নাম দিয়ে হৃদয়ে তুলে নিয়েছে- 'কাইদ-ই-আকবর' বা ঐ জাতীয় কোনো দুরূহ আরবী খেতাব তাঁকে দেবার প্রয়োজন তারা বোধ করে নি।</blockquote>হিন্দি-উর্দু ভাষা নিয়ে সে সময়ের রাজনৈতিক নেতারা সবসময় বিচলিত ছিলেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্রের সে জাতীয় কোন সমস্যা ছিল না। মুজতবা আলীর ভাষায়-<br /><blockquote>রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি যে মহাত্মার থাকে, দেশকে সত্যই যিনি প্রাণ-মন সর্বচৈতন্য সর্বানুভূতি দিয়ে ভালবাসেন, সাম্প্রদায়িক কলহের বহু উর্দ্ধে নির্দ্বন্দ্ব পুণ্যলোকে যিনি অহরহ বিরাজ করেন, যে মহাপুরুষ দেশের অখণ্ড সত্যরূপ ঋষির মত দর্শন করেছেন, বাক্যব্রহ্ম তাঁর ওষ্ঠাগ্রে বিরাজ করেন। তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেন, সে-ভাষা সত্যের ভাষা, ন্যায়ের ভাষা, প্রেমের ভাষা। সে-ভাষা শুদ্ধ হিন্দী অপেক্ষাও বিশুদ্ধ হিন্দী, শুদ্ধ উর্দু অপেক্ষাও বিশুদ্ধ উর্দু। সে ভাষা তাঁর নিজস্ব ভাষা।</blockquote>সুভাষচন্দ্র দেশের সমস্যাটিকে এমনভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছেন যে, সাম্প্রদায়িক তুচ্ছতাকে মানুষ মোটেও আমলে নেয়নি।<br /><blockquote>আমার মনে হয়, সুভাষচন্দ্র এমন এক বৃহত্তর জাজ্বল্যমান আদর্শ জনগণের সম্মুখে উপস্থিত করতে পেরেছিলেন, এবং তাঁর চেয়েও বড় কথা, এমন এক সর্বজনগ্রহণীয় বীরজনকাম্য পন্থা দেখাতে পেরেছিলেন যে, কি হিন্দু, কি মুসলমান, কি শিখ সকলেই সাম্প্রদায়িক স্বার্থের কথা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে যোগদান করেছিলেন। আমি যেন চোখের সামনে দেখতে পাই, সুভাষচন্দ্র বলছেন, 'আগুন লেগেছে, চল আগুন নেভাই, এই আমার হাতে জল। তোমরাও জল নিয়ে এসো।' সুভাষচন্দ্র কিন্তু এ কথা বলছেন না, আগুন নেভাতে হলে হিন্দু-মুসলমানকে প্রথমে এক হতে হবে, তারপর আগুন নেভানো হবে।</blockquote>সৈয়দ মুজতবা আলীর <span style="font-weight: bold;">পঞ্চতন্ত্র</span> বইটি প্রকাশ করেছে স্টুডেন্ট ওয়েজ। এর প্রিন্টার্স লাইনে প্রকাশকাল সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য নেই। অন্তত: প্রথম প্রকাশ কাল উল্লেখ করা উচিত ছিল। এখানে লেখা আছে '<span style="font-style: italic;">এস.ওয়েজ দ্বিতীয় সংস্করণ বৈশাখ ১৪১৫ বঙ্গাব্দ'</span>। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল এস. ওয়েজের প্রথম সংস্করণ কত সালে হয়েছিল তা বইয়ের কোথাও খুঁজে পেলাম না।<br /></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-37802317231048483442008-09-17T20:48:00.004+06:002008-09-17T21:24:07.437+06:00বিদ্যাসাগরের সমাজ চিন্তাশিক্ষাবার্তা পত্রিকার আগস্ট ২০০৮ সংখ্যায় বেশ কিছু প্রয়োজনীয় রচনা রয়েছে। আমি প্রয়োজনীয় বলছি এজন্য যে রচনাগুলো গুণগত ও উপাদানগত দিক থেকে বারবার পড়ার মতো ও পড়ে কিছু শেখার মত। প্রধানতম রচনাগুলো হল:<br /><ul><li>বার্ট্রাণ্ড রাসেলের শিক্ষা দর্শন - আনোয়ারুল্লাহ ভুঁইয়া</li><li>আধুনিক শিক্ষা ও ডিরোজিও - ড. সফিউদ্দিন আহম</li><li>বিদ্যাসাগরের সমাজ-চিন্তা - মো. সহীদুর রহমান</li><li>আলোকচিত্রে বঙ্গবন্ধু: ফিরে দেখা - জাহাঙ্গীর সেলিম</li><li>মূল্যবোধ - দীনেশ মণ্ডল</li><li>বাংলা ভাষার গৌরব ও অতুল প্রসাদ সেন - এম এ আজিজ মিয়া</li><li>দু'জন খ্যাতিমান মহিলা দার্শনিক - আব্দুস সালাম</li><li>বালাই, বালাইনাশক, আমাদের পরিবেশ ও জীবন - মফিজুল ইসলাম</li></ul>এই গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান লেখাগুলির মধ্যে আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে <span style="font-weight: bold;">বিদ্যাসাগরের সমাজ-চিন্তা </span>প্রবন্ধটি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন সময়ের চাইতে অনেক বেশি অগ্রসর মানসিকতার।<br /><span id="fullpost"><br />তিনি যে সমাজে ও সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তা ছিল সত্যিকার অর্থেই অন্ধকারাচ্ছন্ন, ক্ষয়ে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া এক সমাজ। সেযুগের কি হিন্দু, কি মুসলমান কারও চিন্তারাজ্যে ভবিষ্যত পৃথিবীর স্বপ্ন ছিল না। সমাজ সম্পর্কে কোন সচেতনতা ছিল না। ব্রিটিশরা এদেশের অনেক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে। কিন্তু তারা আমাদের সাহিত্য- সংস্কৃতিতে যে জোয়ারের সৃষ্টি করেছে, যে নতুন যুগের ঢেউ সৃষ্টি করেছে, তা কালের ইতিহাসে চিরঅক্ষয় হয়ে থাকবে। তাদের শিক্ষার ফলে বাঙালির মননে জেগেছে নতুন স্বপ্ন। তারা বুঝতে পেরেছে আগামী পৃথিবীর স্বরূপ। এই আধুনিকতাকে যারা ধারণ ও লালন করতে পেরেছেন, তাদের পূর্বসুরী হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।<br /><br /><span style="font-weight: bold;">বিদ্যাসাগরের সমাজ-চিন্তা</span>শীর্ষক প্রবন্ধটি নিয়মিতভাবে শিক্ষাবার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। এর লেখক মো. সহীদুর রহমান এর আলোচনায় আমি যাচ্ছিনা। সেই ধৃষ্টতা আমার নেই। আমি শুধু বিদ্যাসাগর সম্পর্কে যে কয়েকটি উদ্ধৃতি প্রবন্ধমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, তা পুনরায় প্রকাশ করছি।<br /><blockquote>দেবী প্রসন্ন রায় চৌধুরী লিখেছেন, "একদিন কথায় কথায় বিদ্যাসাগর মহাশয়, মহারাণী স্বর্ণময়ী ও তারক প্রামাণিকের নাম উল্লেখ করিয়া আমাদিগকে বলিয়াছিলেন, ' এদেশে কেবল এই দুটি মানুষ আছে, আর সব পশু। পশুরাও নিজেদের লইয়া ব্যস্ত, ইহারাও তাই। কত ধনী এ দেশে আছে, কিন্তু একবেলা দরিদ্রকে একমুষ্টি খাইতে দেয়, এমন লোক নাই।' এই কথা বলিতে বলিতে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কণ্ঠ রূদ্ধ হইল, অবিরলধারায় চক্ষের জল পড়িতে লাগিল, আবার রুদ্ধ কণ্ঠে বলিলেন, 'এদেশের গতি কি ফিরিবে? হায়, তাহাদিগকে আমরা পশু তুল্য জ্ঞান করি, মানুষের ন্যায় জ্ঞান করিলে হয়ত আমাদের দ্বারা তাহাদের কিছু উপকার হইত। আপনারা চেষ্টা করুন, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, এদশের দরিদ্রদিগের গতি ফিরিবে না, তাদের মা বাপ নাই।' এইরূপ সহৃদয়তার কথা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট অনেকবার শুনিয়াছি। শুনিয়া বিমোহিত চিত্তে ভাবিয়াছি- বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর, প্রেমের অবতার; - ভবিয়াছি, এই গুনেই তিনি সর্ব্বজন পুজ্য।"- মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা, বিদ্যাসাগর সংখ্যা ১৯৯৭, পৃ: ৩৭৪<br /></blockquote><br />বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তিনি একটি চিঠিতে লিখেছিলেন-<br /><blockquote>I hope... that I shall.. him to go back to India and tell my countrymen that you are not only Vidyasagara but karunasagara also" </blockquote>এই উদ্ধৃতিটি নেয়া হয়েছে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (সম্পাদিত), মধুসূদন-নাট্য গ্রন্থাবলী, ১ম সংস্করণ-১৯৬৯, পৃ:৮৬৪, আবুহেনা মোস্তফা কামাল, সার্ধ-শত বর্ষ পূর্তি স্মারক গ্রন্থ ১৯৭০, পৃ: ২৬১ থেকে।<br /><br />ঈশ্বরচন্দ্র বাংলা খবরের কাগজগুলোর চরিত্র দেখে বিরক্ত হয়ে এক সময় একটি পত্রিকা বের করেছিলেন। এর নাম <span style="font-weight: bold;">'সোমপ্রকাশ'</span>।<br /><blockquote>বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আর এক কীর্তি 'সোমপ্রকাশ'। বিদ্যাসাগর মহাশয় দেখিতেন - যে সকল বাংলা কাগজ ছিল তাহাতে নানা রকম খবর দিত: ভালো খবর থাকিত, মন্দ খবরও থাকিত। লোকের কুৎসা করিলে কাগজের পসার বাড়িত, অনেক সময় কুৎসা করিয়া তাহারা পয়সাও রোজগার করিত। বিদ্যাসাগর মহাশয় দেখিলেন, যদি কোন কাগজে ইংরেজির মতো রাজনীতি চর্চা করা যায়, তাহা হইলে বাংলা খবরের কাগজের চেহারা ফেরে। তাই কয়েকজন মিলিয়া 'সোমপ্রকাশ' বাহির করিলেন; - সোমবারে কাগজ বাহির হইতো বলিয়া নাম হইল 'সোমপ্রকাশ। - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা, বিদ্যাসাগর সংখ্যা, ১৯৯৭, ৩৪১।</blockquote><br /><br />এই প্রসঙ্গে বিনয় ঘোষ লিখেছেন:<br /><blockquote>নিজে সম্পাদক না হয়েও এবং সাংবাদিকের কাজ যথাযথ ভাবে না করেও, বাংলা সাংবাদিকতাকে ক্ষুদ্রতার গণ্ডি থেকে মুক্ত করে বিদ্যাসাগর বৃহত্তর ও সুস্থতর সমাজ-জীবনের দর্পণ স্বরূপ করে তুলেছিলেন। বাংলাদেশে এই কারণে তাকে বলিষ্ঠ ও প্রগতিশীল সামাজিক রাজনৈতিক সাংবাদিকতার অন্যতম প্রবর্তক ও পথপ্রদর্শক বলা যায়। - বিনয় ঘোষ, ১৯৯৩, ৩৩৮,৩৩৯-৪০</blockquote><br /></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-72026817829718360142008-08-27T23:38:00.005+06:002008-10-08T19:33:28.482+06:00নবারুণ পত্রিকার নজরুল সংখ্যা<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjNbkjn5v9_p6x5LAxyoIB5fCoy7fZ_2CeFuZT6PJKPS1cu2cMlHhZpOrIW_-BLhhZ-8VCf1qN8o68Xtmv24-XKPo644SM58b1LMs7SgMdQF10SJ-QF-Z7xFUqQ37qBCm-848iRGK78eLc/s1600-h/nnabarun.JPG"><img style="margin: 0pt 10px 10px 0pt; float: left; cursor: pointer;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjNbkjn5v9_p6x5LAxyoIB5fCoy7fZ_2CeFuZT6PJKPS1cu2cMlHhZpOrIW_-BLhhZ-8VCf1qN8o68Xtmv24-XKPo644SM58b1LMs7SgMdQF10SJ-QF-Z7xFUqQ37qBCm-848iRGK78eLc/s200/nnabarun.JPG" alt="" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5254775604868658018" border="0" /></a>সচিত্র কিশোর মাসিক পত্রিকা <span style="font-weight: bold;">নবারুণ </span>বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা বের করেছে। প্রকাশ কাল নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০০৭, বাংলা অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৪১৪। এই সংখ্যাটির নাম দেয়া হয়েছে <span style="font-weight: bold;">নজরুলের শিশু-কিশোর রচনা</span>।<br /><br />সম্পাদকীয়তে প্রাজ্ঞ সম্পাদক সনৎ কুমার বিশ্বাস বলেছেন:<br /><blockquote>আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে এক দিকপাল। তিনি ছিলেন তারুণ্যের প্রতীক। তাই তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য রচনা করেছেন অসংখ্য ছড়া ও কবিতা। অন্যায় এবং শোষণের বিরুদ্ধেও নজরুলের লেখনী ছিল ধারালো। তিনি পরাধীনতার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর অসংখ্য ছড়া, কবিতা, গল্প, নাটকে আমরা সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের দিকনির্দেশনা পেয়েছি। নজরুল সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডার থেকে শিশু-কিশোর উপযোগী বিশেষ সংখ্যাটি প্রকাশ করা হলো।</blockquote>কাজী নজরুলের বিভিন্নরকম শিশুতোষ রচনা দিয়ে নবারুণের এই সংখ্যাটি সাজানো হয়েছে। কোন কোন কবিতার ইতিহাস বা জন্মকথাও জানানো হয়েছে।<br /><span id="fullpost"><br />সূচী থেকে কিছু উল্লেখ করা ভাল:<br /><ul><li>ছোটদের নজরুল জিজ্ঞাসা- হাসান আনোয়ার</li><li>নজরুলের শিশুতোষ রচনা- ম. মীজানুর রহমান</li><li>খুকী ও কাঠবেরালির ইতিহাস- মুজফ্ফর আহমদ</li><li>কিশোরদের জন্য নজরুলের বিজ্ঞান-ভাবনা- নাসরীন মুস্তাফা</li><li>যেভাবে লেখা হলো নজরুলের 'বিদ্রোহী'- মাহবুবুর রহমান তুহিন</li><li>'লিচু-চোর' কবিতার জন্মকথা- জান্নাতে রোজী</li><li>খেলাপ্রিয় কবি নজরুল- মকবুল মাহফুজ</li></ul>এছাড়া নজরুলের বেশ কিছু গান, শিশুদের ছড়া, কবিতা, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি নবারুণের নজরুল সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে।<br /><br /><span style="font-weight: bold;">'খুকী ও কাঠ্বেরালি'</span> কবিতাটি রচনার ইতিহাস বেশ মজার। এই কবিতাটি কবির "ঝিঙেফুল" কাব্যগ্রন্থে স্থান পেয়েছে। এই কবিতাটির রচনা করা হয়েছে কুমিল্লাতে।<br /><blockquote>একদিন কবি দেখতে পেলের যে শ্রীইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের শিশু কন্যা জটু (শ্রীমতী অঞ্জলি সেন) একা একা এক কাঠবেড়ালির সঙ্গে কথা বলছে। এটা দেখেই কাজী নজরুল 'খুকী ও কাঠ্বেরালি' কবিতাটি লিখে ফেলেন।</blockquote> প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কাঠবেড়ালিকে কথ্যভাষায় 'কাঠ্বেরালি' উচ্চারণে ডাকা হয়।<br /></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-38613896377374335792008-08-11T21:37:00.001+06:002008-08-29T16:43:54.216+06:00ক্ষুদিরামের ফাঁসির শতবর্ষআজ ১১ আগস্ট, ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবি ক্ষুধিরামের ফাঁসির শতবর্ষ পূরণ হল। আজকের প্রথম আলো পত্রিকায় একটা প্রবন্ধ পড়লাম। ভাল লাগল। বারবার পড়ার জন্য সম্পূর্ণ লেখাটি এখানে তুলে দিলাম।<br /><br /><span style="font-weight: bold;"></span><blockquote><span style="font-weight: bold;">ক্ষুদিরামের ফাঁসির শতবর্ষ</span><br />ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের যেসব সত্য কাহিনী লোকমুখে প্রচারিত হতে হতে কিংবদন্তির রূপ নিয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলো ভগত সিং, সুর্যসেন, বিনয়-বাদল-দিনেশ ও ক্ষুদিরামের কাহিনী। এর মধ্যে ক্ষুদিরামের কাহিনী অধিক মাত্রায় লোকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার কারণ সম্ভবত ক্ষুদিরামের বয়স ও দুঃসাহসিকতা।<br />১৮৯০ সালে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনিপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে ক্ষুদিরাম বসু জন্নগ্রহণ করেন। যখন তাঁর বয়স ছয় বছর, তখন তাঁর মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী মৃত্যুবরণ করেন। এবং মাত্র সাত বছর বয়সে তাঁর বাবা ত্রৈলোক্যনাথ বসুও মৃত্যুবরণ করেন। এরপর এই অনাথ ক্ষুদিরামের আশ্রয় জোটে জ্যেষ্ঠ বোনের গৃহে। এই বোন সাধ্যমতো স্েমহ ও মমতা দিয়ে তাঁকে প্রতিপালন করেছেন।<br /><br /><span id="fullpost"><br />প্রাথমিক অবস্থায় গ্রামের স্কুলেই ক্ষুদিরামের পড়ালেখা শুরু হয়। এরপর তমলুকের হ্যামিলটন স্কুল এবং মেদিনিপুর কলেজিয়েট স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। মেধাবী ও দুরন্ত কিশোর ক্ষুদিরাম ১৯০৩ সালে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে পড়ার পাট চুকিয়ে দেন। লেখাপড়ায় অমনোযোগী ক্ষুদিরামের ঝোঁক ছিল দুঃসাহসিক কর্মকান্ডে। আর এলাকার যেকোনো অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং সমবয়সীদের সংঘবদ্ধ করে প্রতিরোধের চেষ্টা করার মধ্যে ছিল ক্ষুদিরামে আনন্দ।<br />১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ইংরেজ সরকার বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয়। যাকে বঙ্গভঙ্গ বলা হয়। ঐক্যবদ্ধ বাংলাকে ইংরেজের পক্ষে একটি বিপজ্জনক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাংলাকে বিভক্ত করে ইংরেজ সরকার। ইংরেজদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয় কলকাতার মানুষ। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে জন্ন নেয় স্বদেশি আন্দোলন। যে আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে এক পঙ্ক্তিতে এসে দাঁড়ায় ছাত্ররা। বিশেষ করে স্কুলের কিশোরেরা। আর এই দুই আন্দোলনের সমর্থনে সক্রিয় অহিংস সংগ্রাম যেমন পরিচালিত হয়, তেমনি সহিংস কর্মকান্ডভিত্তিক গোপন সংগঠনেরও জন্ন হয়।<br />বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন ক্ষুদিরাম বসু। এ বছর ক্ষুদিরাম সত্যেন বসুর নেতৃত্বে গুপ্ত সংগঠনে যোগ দেন। এখানে তাঁর শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা হয়। এখানে পিস্তল চালনার শিক্ষাও হয়। এই গুপ্ত সংগঠনের কর্মসুচির অংশ হিসেবে ক্ষুদিরাম ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় জ্বালিয়ে দেন এবং ইংল্যান্ড থেকে আমদানীকৃত লবণবোঝাই নৌকা ডুবিয়ে দেন। এসব কর্মকান্ডে তাঁর সততা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়। ফলে ধীরে ধীরে গুপ্ত সংগঠনের ভেতরে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।<br />১৯০৬ সালের মার্চ মাসে মেদিনিপুরে আয়োজিত হয় কৃষি ও শিল্পমেলা। এ মেলায় সমবেত মানুষের মধ্যে ইংরেজবিরোধী ইশতেহার বিলি করতেন ক্ষুদিরাম। এখানে ইশতেহার বিলি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম। এই তাঁর প্রথম গ্রেপ্তার হওয়া। তবে বুদ্ধি খাটিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি। এ বছরের এপ্রিল মাসে লবণবোঝাই নৌকা ডুবিয়ে দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন ক্ষুদিরাম। তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। আদালত তাঁকে দোষী হিসেবে দন্ডিত করেন। তবে অল্প বয়স বিবেচনায় তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।<br />১৯০৭ সালে ক্ষুদিরাম হাটগাছায় ডাক বিভাগের থলি লুট করেন। এ ঘটনায় তাঁর অসীম সাহস ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। এ বছরের ৬ ডিসেম্বর ক্ষুদিরাম নারায়ণগড় রেলস্টেশনের কাছে বঙ্গের ছোট লাটের বিশেষ রেলগাড়িতে বোমা হামলা করেন। এ সময় কলকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন কিংসফোর্ড। তিনি বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি ভারতীয়দের ঘৃণা করতেন। সুযোগ পেলেই তিনি ভারতীয়দের দন্ড দিতেন। বস্তুত কিংসফোর্ড এদেশীয়দের কাছে মূর্তিমান ত্রাসে পরিণত হন।<br />গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন ‘যুগান্তর’ ১৯০৮ সালে কিংসফোর্ডকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। কিংসফোর্ডকে হত্যা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসুকে। দুই তরুণ যখন কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে যান, তখন কিংসফোর্ড সেশন জজ হিসেবে বদলি হন মুজাফ্ফরপুরে। ৩০ এপ্রিল প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু স্থানীয় ইউরোপীয় ক্লাবের গেটের কাছে রাতের অন্ধকারে অ্যাম্বুশ করে থাকে। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর কিংসফোর্ডের গাড়ির মতো একটি গাড়ি আসে। তাঁরা ওই গাড়িকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ওই গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না। ছিলেন ইংরেজ এক মহিলা ও তাঁর মেয়ে। তাঁরা বোমার আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। বোমা হামলার পর ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল পালিয়ে যান।<br />ওই রাতে পুলিশ সব স্থানে তল্লাশি করে। অবশেষে ওয়ানি রেলস্টেশনে ক্ষুদিরাম অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ক্ষুদিরাম বোমা হামলার সব দায় নিজের কাঁধে নেন। সহযোগীদের কথা বলেন না। ফলে বোমা হামলা ও দুজনকে হত্যার অপরাধে ক্ষুদিরামের ফাঁসির আদেশ হয়।<br />মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ক্ষুদিরাম বসুকে রাখা হয় মুজাফ্ফরপুর কারাগারে। সেখানে যারা তাঁকে দেখেছে তারা বলেছে, কারাগারে ক্ষুদিরাম খুবই স্বাভাবিক ছিলেন। ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট খুব ভোরে তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্ষুদিরাম বসু অসম্ভব দৃঢ়তার সঙ্গে হেঁটে, হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ান এবং ভয়শুন্যচিত্তে ফাঁসির রশি গলায় পরেন।<br />ক্ষুদিরাম বসুর অসম সাহসিকতার কথা, আত্মত্যাগের কথা সে সময় ব্যাপকভাবে লোকমুখে প্রচারিত হয়। তাঁর কথা শুনে দেশবাসী অনুপ্রাণিত হয়। ইংরেজবিরোধী সংগ্রাম আরও বেগবান হয়। বিপ্লবী তরুণ ক্ষুদিরাম বসুর জীবনকাহিনী ও আত্মদানের গৌরবগাথা নিয়ে নানা রকম সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হচ্ছে গান। তার ফাঁসির প্রায় তিন মাস পর অখ্যাত গীতিকার পরেশচন্দ্র ধর লেখেন বিখ্যাত গান−<br />‘একবার বিদায় দাও মা ঘুরে আসি<br />আমি হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী।<br />আবার অনেক বছর পরে<br />জন্ন নেব ঘরে ঘরে মাগো<br />তখন চিনতে যদি না পারো মা দেখবে গলায় ফাঁসিু’ (মূল পান্ডুলিপি থেকে)।<br />আজ ক্ষুদিরামের ফাঁসির শতবর্ষ। এই শতবর্ষে আমাদের প্রিয় মাতৃভুমির প্রয়োজনে বারবার ক্ষুদিরামের জন্ন হয়েছে। যদি আমাদের মাতৃসম দেশ কখনো বিপন্ন হয়, তবে নিশ্চয়ই অসংখ্য ক্ষুদিরামের জন্ন হবে।<br /><br />রতন সিদ্দিকী</span></blockquote>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-34533904522598513762008-08-06T21:09:00.004+06:002008-10-08T19:31:07.030+06:00নবারুণ<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgLpiNHnicwWPSfQHSvci8n3CeCnD9B95TxKJJEELKYsNjJQ3FxcYmZamMJf5EfnxokcPFviS88gXU_LYU4j6hDhbQPR44Z3G_NPW8V56xzgSonQwBOsTR0kDUtYf3vNNYHjYdNmpHD3tA/s1600-h/rnabarun.JPG"><img style="margin: 0pt 10px 10px 0pt; float: left; cursor: pointer;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgLpiNHnicwWPSfQHSvci8n3CeCnD9B95TxKJJEELKYsNjJQ3FxcYmZamMJf5EfnxokcPFviS88gXU_LYU4j6hDhbQPR44Z3G_NPW8V56xzgSonQwBOsTR0kDUtYf3vNNYHjYdNmpHD3tA/s200/rnabarun.JPG" alt="" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5254774885899620546" border="0" /></a>শৈশবে বিখ্যাত শিশুতোষ পত্রিকা <span style="font-weight: bold;">নবারুণ</span> পড়তাম। বড় হবার পথে নবারুণ পড়া আর হয়ে উঠেনি। কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই নবারুণ পত্রিকাটিকে চোখে পড়ল। খুব উৎসাহভরে হাতে তুলে নিলাম। আগের সেই বিবর্ণ চেহারা আর নেই। এখন চাররঙা প্রচ্ছদে, ভিতরে সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়ে আরও অনেক আকর্ষণীয় করে পত্রিকা বের হচ্ছে।<br /><br />এই পত্রিকার ভাদ্র-কার্তিক ১৪১৪/ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০০৭ সংখ্যাটি ছিল একটি বিশেষ সংখ্যা। সম্পূর্ণ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে করা এই সংখ্যাটি সংগ্রহে রাখার মত, বারবার পড়ার মত। রবীন্দ্রনাথের শিশুতোষ রচনা নিয়ে সাজানো এই সংখ্যাটি রবীন্দ্র আগ্রহীদের খুব উপকারে দেবে।<br /><br />সম্পাদকীয় থেকে উল্লেখ করি:-<br /><blockquote>রবীন্দ্র সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডার থেকে কিছু লেখা নিয়ে <span style="font-weight: bold;">নবারুণ</span> -এর বন্ধুদের জন্য একটি বিশেষ সংখ্যার আয়োজন করেছি। এ সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথের লেখা- ছোটদের জন্য ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক এবং কিছু গানকে সংকলিত করে উপস্থাপন করেছি। যা তোমরা সংগ্রহে রাখতে পারবে।</blockquote><span id="fullpost">সত্যি তাই। এই সংখ্যাটির আকর্ষণীয় সূচীপত্র সংক্ষেপে নিম্নরূপ:<br /><ul><blockquote><li>সম্পাদকীয়</li><li>শিশু-কিশোরদের জন্য রবীন্দ্রনাথের লেখা- শফিউল আলম</li><li>ছোটদের রবীন্দ্র জিজ্ঞাসা - আনোয়ার হাসান বাবু<br /></li><li>রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রথম মুদ্রিত কবিতা, সহজ পাঠ আর 'বালক' পত্রিকা- পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়</li></blockquote></ul>সূচীপত্রে আরও আছে<br /><ul><blockquote><li>রবীন্দ্রনাথের ছড়া ও কবিতা</li><li>রবীন্দ্রনাথের শিশু-কিশোর গান</li><li>ছোটদের জন্য রবীন্দ্রনাথের গল্প</li><li>রবীন্দ্রনাথের শিশু-কিশোর নাটক</li></blockquote></ul>এছাড়া পত্রিকার নিয়মিত বিভাগ তো রয়েছেই।<br /></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-45676692526241985702008-07-04T16:25:00.003+06:002008-07-04T21:38:30.527+06:00অনলাইনে বইমেলা<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhASmbV_JpWv0dD4tIGz3FzTj97DqxOz97Eqg2KWMznvFRKEl7Lk95N8VoCl0hke3V375GHzscG8nY5-Kk2nEQ6gB2N_ME4ZIBSvLZWVD0em1FYJ2W4YPasqzVccvyjx5bht-DQ9OtZ9ME/s320/webf.JPG"><img style="margin: 0pt 10px 10px 0pt; float: left; cursor: pointer; width: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhASmbV_JpWv0dD4tIGz3FzTj97DqxOz97Eqg2KWMznvFRKEl7Lk95N8VoCl0hke3V375GHzscG8nY5-Kk2nEQ6gB2N_ME4ZIBSvLZWVD0em1FYJ2W4YPasqzVccvyjx5bht-DQ9OtZ9ME/s320/webf.JPG" alt="" border="0" /></a><br />বইমেলা শব্দটি শুনলেই মনের ভিতর কেমন একটা শিহরণ বয়ে যায়। নতুন বইয়ের গন্ধ, স্বাদ পাওয়ার জন্য মন উৎসুক হয়ে উঠে।<br /><br />আধুনিক ইন্টারনেটের যুগে বইমেলা এখন অনলাইনেও হচ্ছে। আজ ৪ জুলাই তারিখ থেকে ১ মাসব্যাপী বইমেলা চলবে। সবকটা বই এই একমাসের জন্য ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে। প্রকাশ্য বা লুকানো কোনরকম মূল্য দিতে হবে না। বছরের অন্যান্য সারা সময়ে অবশ্য প্রজেক্ট গুটেনবার্গ সহ আরও অন্যান্য কিছু কিছু <span style="font-weight: bold;">ই বই প্রকাশক</span> ফ্রি বই ডাউনলোড করার সুযোগ দেয়। কিন্তু এই মেলাতে বিশেষ কিছু বই রয়েছে যেগুলো বছরের অন্যান্য সময়ে ফ্রি পাওয়া যায় না।<br /><br />আজকে শুরু হওয়া বইমেলায় বিভিন্ন রকম বিষয়বৈচিত্র সহ কিছু বিশেষ ধরণের বই পাওয়া যাচ্ছে।<br /><ul><li>১০০টা আলাদা ভাষার বই।</li><li>মোবাইল ফোনের উপযোগী বই।</li><li>এডব রিডারের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা।</li><li>সাধারণ টেক্সট ফাইল (*.txt) ফরমেট।</li><li>কিছু বই আছে যেগুলো কম্পিউটারের পড়ার উপযোগী করে তৈরি।</li><li>১৬০,০০০টি নতুন বাণিজ্যিক সংস্করের বই।</li><li>এছাড়াও রয়েছে অডিও বই, ভিডিও বই ইত্যাদি।</li></ul>অনলাইনের এই বইমেলার নাম <span style="font-weight: bold;">ওয়ার্ল্ড ইবুক ফেয়ার (World EBook Fair)</span> বা<span style="font-weight: bold;"> বিশ্ব ইবই মেলা</span>। দুই বৎসর আগে ২০০৬ সালে এই বইমেলা প্রথম শুরু হয়। তখন ১/৩ মিলিয়ন বই নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। ২০০৭ এ ছিল ২/৩ মিলিয়ন বই। আর এবারে রয়েছে ১ মিলিয়নের চাইতে বেশি বই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১০০টারও বেশি <span style="font-weight: bold;">ই বইয়ের লাইব্রেরি</span> ও <span style="font-weight: bold;">ই বুক প্রকাশকদের</span> পূর্ণ সহযোগিতা নিয়ে অনলাইনের এই বইমেলা শুরু হয়েছে।<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjtse_F9Mp1NOc5F-i1KIOL5poj9WeK9EgPtmOozYcgUzZ7MA3FLX045d-DFbzlM68jWpf_zOzTkRb7C5T_p-vrXS178qCIiTjVIazNCgWo7z1lP0-XGpYE5QOfQe_4l4VWfbCjS3jugjc/s1600-h/webfair.JPG"><img style="margin: 0pt 0pt 10px 10px; float: right; cursor: pointer;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjtse_F9Mp1NOc5F-i1KIOL5poj9WeK9EgPtmOozYcgUzZ7MA3FLX045d-DFbzlM68jWpf_zOzTkRb7C5T_p-vrXS178qCIiTjVIazNCgWo7z1lP0-XGpYE5QOfQe_4l4VWfbCjS3jugjc/s200/webfair.JPG" alt="" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5219110543367572418" border="0" /></a><br /><br />জুলাই ০১, ২০০৮ তারিখে বইমেলার প্রস্তুতি বিষয়ক পরিসংখ্যানটি ছিল নিম্নরকম:-<ul><li>প্রোজেক্ট গুটেনবার্গ দিয়েছে ১,০০,০০০টি বই।</li><li>ওয়ার্ল্ড পাবলিক লাইব্রেরি দিয়েছে ৫০০,০০০টি বই।</li><li>ইন্টারনেট আর্কাইভ দিয়েছে ৪৫০,০০০টি বই।</li><li>ই বুকস্ এবাউট এভরিথিং দিয়েছে ১৬০,০০০টি বই।</li><li>মোট বই ১,২১০,০০০টি।</li></ul>আজ বেশ কিছুক্ষণ এই মেলাতে ভ্রমণ করলাম। কয়েকটা ভাল ভাল বই ডাউনলোড করলাম। প্রজেক্ট গুটেনবার্গ থেকে আগেই আমি এরিস্টটল, কনফুসিয়াস, সেক্সপীয়র রচনাসমগ্র, জুল ভার্ণ রচনাসমগ্র, মিলটন সহ দর্শন ও বিজ্ঞানের বেশ কিছু বই ডাউনলোড করেছি। আমি ভাল পাঠক নই। তাই ভাল বইয়ের নাম, ভাল লেখকের নাম খুব একটা জানিনা। তাই হয়ত মেলার বইগুলোর মূল্য বুঝতে পারছি না। কিন্তু তারপরও বইমেলা বলে কথা। মেলায় ঘুরে বেড়ালেও কত বইয়ের নাম জানা হয়ে যায়। জ্ঞানের সাগরের সৈকত দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছি, সেটাই বা কম কিসে? গ্রন্থানুরাগীরা একবার ঢুঁ মেরে দেখে আসতে পারেন।<br /><br />বইমেলার এড্রেস হল <a href="http://worldebookfair.org/">http://worldebookfair.org</a>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-68253628026244916012008-07-02T19:17:00.006+06:002008-08-29T16:45:48.518+06:00আহমদ ছফা সম্পর্কে মফিদুল হকগত ২৭ জুন ২০০৮ তারিখের সমকাল পত্রিকার কালের খেয়াতে আহমদ ছফা সম্পর্কে প্রখ্যাত প্রকাশ মফিদুল হক আলোচনা করেছেন। আহমদ ছফা সম্পর্কে আমরা কেন যেন তেমন কোন আলোচনা করি না। পত্রিকায় বা বিভিন্ন আলোচনা সভায় আহমদ ছফার নাম কম শোনা যায়। এটা এক দিক দিয়ে আবার ভাল। কারণ তাকে বেশি বেশি করে আলোচনা করলে হয়তো অনেক অবান্তর কথারও জন্ম হয়ে যেত। সেদিক থেকে তাকে নিয়ে কম আলোচনা হওয়াকে ভাল বলেছি।<br /><br />কালের খেয়াতে প্রকাশিত মফিদুল হকের লেখাটি আহমদ ছফাকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত অনুভূতি অভিজ্ঞতার ফসল। তিনি আহমদ ছফাকে যেমন দেখেছেন, যেভাবে সম্মান করেছেন, উপকৃত হয়েছেন; তার রাজনৈতিক, সামাজিক জীবনকে যতটা কাছ থেকে দেখেছেন, তার সংক্ষিপ্ত অথচ মনোজ্ঞ বর্ণনা তিনি করেছেন। আমাদের আহমদ ছফা চর্চাকে আরও শাণিত করবে লেখাটি এতে আমার কোন সন্দেহ নেই। আরও বেশি পাঠকের কাছে লেখাটি পৌঁছাক এ আমার আন্তরিক প্রত্যাশা।<br /><br /><span id="fullpost"><br /><div style="text-align: center;"><span style="font-weight: bold;"></span></div><blockquote><div style="text-align: center;"><span style="font-weight: bold;">ব্যতিক্রমের মধ্যে ব্যতিক্রমী</span><br /><span style="font-weight: bold;">মফিদুল হক</span><br /></div><br />আহমদ ছফা, তাঁর কাছের-দূরের, পরিচিত-অপরিচিত, শত্রু-মিত্র, ভক্ত কিংবা সমালোচক সবাই মানবেন, ছিলেন এক ব্যতিত্রক্রমী মানুষ। ইংরেজিতে এদের বলা হয় ম্যাভরিক, বাংলায় ঠিক যুৎসই শব্ধ খুঁজে পাওয়া যাবে না, হতে পারে এ ধরনের শক্ত চরিত্র নরম পলিমাটির দেশ বাংলায় সচরাচর খুঁজে পাওয়া যায় না, আর তাই এমন চরিত্র বোঝানোর মতো শব্দও হাতের কাছে সহজে মেলে না।<br />ইংরেজি-বাংলা অভিধানে ম্যাভরিকের শব্দার্থ নেই, রয়েছে অনেক শব্দ মিলিয়ে এর ব্যাখ্যা। কিন্তু এসব অন্তত এটা পরিষ্কার করে যে, আহমদ ছফা সচরাচর দেখা পাওয়া আর দশটা মানুষের মতো ছিলেন না, কিংবা তিনি বিরলপ্রজ আর সব বঙ্গপ্রতিভার মতোও ছিলেন না, তিনি সত্যিই একেবারে আলাদা, নিশ্চিতভাবেই ম্যাভরিক।<br /><br />শুরুতেই কবুল করে নিতে চাই আমি তাঁর একজন অনুরাগী, যেমন তাঁর রচনার, তেমনি তাঁর জীবনাচারের, কিংবা আরেকটু পোশাকিভাবে বললে তাঁর জীবনচর্যার, অথচ আমার মন-মানসিকতার একেবারে বিপরীত মেরুর মানুষ তিনি। আমি মুখচোরা স্বভাবের, নিজেকে আড়ালে-আবডালে রাখতে পারলে স্বস্তি পাই, তিনি একান্ত মুখরা, সদা মুখরিতই বলা ভালো, নিজেকে প্রবলভাবে প্রকাশে তাঁর যে আপত্তি নেই কেবল তা নয়, বরং আগ্রহই সমধিক। কারো মুখের ওপর কিছু বলা আমাদের স্বভাববিরুদ্ধ, কিন্তু আহমদ ছফা অবলীলায় বলতে পারেন অপ্রিয় সত্য কথা। চিন্তা-চেতনাতেও তাঁর সঙ্গে বিরুদ্ধতাই বেশি খুঁজে পাই। বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় বইয়ের বিশাল ভিত্তি তাঁকে বিচলিত করেছিল, তিনি এর বিরুদ্ধে নানা প্রতিবাদ সংগঠিত করেছেন, বাজারি সাহিত্যের কঠোর বিরুদ্ধাচারণ করেছেন, আর আহমদ ছফার যা স্বভাব, লেখালেখিতে কখনো তিনি গণ্ডিবদ্ধ থাকেননি, সভা-সমাবেশ করেছেন, প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করেছেন, প্রাণভরে গালমন্দ করেছেন যারা এ বিরোধিতায় শরিক হতে অসম্মত তাদের। আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় শিল্প-সাহিত্যের বলয়ে এমনি বিভাজনরেখা শেষ বিচারে চেতনায় এক ধরনের সীমাবদ্ধতা বা ঘেরাটোপ আরোপ করে, যা কোনো জাতির পক্ষে আত্মনিধনের শামিল। আহমদ ছফার সঙ্গে এ প্রশ্ন ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে মিল খুঁজে পাই না, কিন্তু বলতে তো একটুও দ্বিধা থাকে না তিনি আমার বিশেষ সম্মানীয়জনের একজন, আমাদের কালের এমন এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা যে মানুষটি চারপাশের সব নেতিবাচকতার বিরুদ্ধে প্রায় যেন একক প্রতিরোধে নেমেছিলেন এবং পরিপূর্ণভাবে এ সংগ্রামে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, আর সেটা এতই পরিপূর্ণ ছিল যে চারপাশের বাস্তবতা থেকে গভীর মর্মবেদনা তাঁর ভেতরে জন্ম নিয়েছিল, তীব্র ও তিক্ত অনুভূতি এবং সে কারণেই তাঁর লেখা ও কথা হয়ে উঠেছিল বিষবাণ, অথচ তিনি নিজেই যে বিষের যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়ে ছটফট করছেন, সেটা থেকে গেছে আমাদের নজরের বাইরে।<br />জোনাথন সুইফট এবং এডগার অ্যালান পো সম্পর্কে বলা হয়, লেখকেরা সবাই যখন জীবনকে বরণ করেন, সেই স্রোতের বিপরীতে এই দু’জন যেন মানবপ্রজাতির সদস্য হওয়াটাকেই প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ছিল জীবন সম্পর্কে তীব্র তিক্ত বিবমিষা। এমন কথা বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি লেখক সম্পর্কে উচ্চারণ করা যাবে না, চারপাশের জীবনে যা প্রত্যক্ষ করেছেন কিংবা নিজের ব্যক্তিজীবনে যে ধরনের চরম বঞ্চনা ও নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার শরিক হয়েছেন তা একজন সংবেদনশীল শিল্পীসত্তার অধিকারীকে এমন অবস্থানে পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু প্রত্যাখ্যানবাদী এ অবস্থানে শিল্পীসত্তা নিয়ে সংহত থাকাটা অত্যন্ত কঠিন সাধনার বিষয়। তেমনি সাধক একান্তই হাতে গোনা যায়, আহমদ ছফা ছিলেন সেই ঘরানার বিরল এক শিল্পী, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় যিনি ছিলেন নিবেদিত। এমন প্রত্যাখ্যানবাদী আমাদের সমাজে একেবারে যে নেই তা নয়, এঁদের অনেকে আপন বলয়ে স্থিতধী থাকেন, অনেকে নিজের জন্য আলাদা সামাজিক আচার ও জীবন গড়ে নিতে পারেন, যেমন করেছিলেন এসএম সুলতান এবং যাঁকে আপন সত্তার প্রতিপুরুষ হিসেবে পরমভাবে বরণ করে লোকসমাজের সামনে তুলে ধরেছিলেন আহমদ ছফা, মনে হয় যেন নিজ ভাবনার প্রতিরূপকেই বুঝি তিনি এভাবে হাজির করতে পেরেছিলেন আমাদের সামনে।<br />তবে প্রত্যাখ্যানবাদী শিল্পীসত্তা কিংবা জীবনের অবমাননায় ক্রুদ্ধ মানস বহন করার পাশাপাশি আহমদ ছফা আরেক প্রবল আকুতি বহন করেছেন, তিনি ছিলেন একান্তভাবে নির্মাণবাদী, জীবনকে অস্বীকার করলেও মানবসত্তার পরিপূর্ণতার বিকাশ ঘটানোর আকুতি তাঁর মধ্যে ছিল একইরকমভাবে সহজাত ও তীব্র। ফলে প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি বহু ধরনের সামাজিক ও মানবিক বিকাশের কাজে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। প্রত্যাখ্যানবাদী যদি আরো কারো কারো খোঁজ মেলে, একইসঙ্গে এমনভাবে সম্মিলিত সামাজিক বিকাশের উদ্গাতা আর বিশেষ কাউকে পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ। এ দিক দিয়ে আহমদ ছফা নামক মানুষটিকে বলা যায় ব্যতিত্রক্রমের মধ্যে ব্যতিত্রক্রমী।<br />আমরা জানি, আহমদ ছফা ছিলেন অকৃতদার, সংসারবিবাগী মানুষ, ভেসে বেড়ানো বোহেমিয়ানা ছিল তাঁর স্বভাবগত, কিন্তু তিনি যে তীব্রভাবে ছিলেন সংসারপ্রেমী স্থিতিসন্ধানী মানুষ, সেটাও তো এর পাশাপাশি স্মরণ করতে হয়। যিনি অপার ভালোবাসায় চারপাশের মানুষকে আঁকড়ে ধরতে চান, আবার কাছের মানুষের মধ্যে কোনোরকম মানবী দুর্বলতার পরিচয় পেয়ে তীব্র প্রত্যাখ্যানে জ্বলে ওঠেন, যে কারণে তাঁর দুর্নিবার আকর্ষণে বহুজন কাছে এসেছেন, আবার দূরেও সরে গেছেন। কিন্তু ব্যক্তিমানুষের হয়তো বদল ঘটেছে, একজন দূরে গেলেও নতুন করে আরো দশজনকে কাছে টেনেছেন আহমদ ছফা, তাই তাঁকে ঘিরে রাখা মানব-বলয়ে কখনো কোনো ক্ষয় ঘটেনি, বরং কালক্রমে তা অর্জন করেছে আরো ব্যাপ্তি ও সমৃদ্ধি। এটাও লক্ষণীয়, যতই বয়স হয়েছে আহমদ ছফার সমবয়সী বন্ধু-পরিজনের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এবং তিনি ক্রমান্বয়ে ঝুঁকেছেন তরুণতরদের দিকে, শিশুদের দিকে এবং ক্রমান্বয়ে ফুল-পাখি-লতাগুল্মের দিকে, যার অনন্য পরিচয় বিধৃত হয়ে আছে তাঁর ‘পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ গ্রন্থে।<br />আপাতদৃষ্টিতে গৃহবিবাগী আহমদ ছফা অন্তরে বহন করেছেন পরম স্নেহভাব ও ভালোবাসা। এই স্নেহ ও ভালোবাসার কারণে নিকটজনের কাছে তাঁর প্রত্যাশার মাত্রাও ছিল অশেষ। সেই প্রত্যাশা-পূরণে প্রায় কেউই সক্ষম হতে পারেনি, ফলে সবার সঙ্গে সবসময় পথচলা আহমদ ছফার কখনো হয়ে ওঠেনি। ব্যতিক্রম যে দু-একজন ছিল না তা নয়, এমনি এক অনন্য ব্যতিক্রম অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, যিনি আহমদ ছফাকে নিবিড়ভাবে বুঝতে পেরেছিলেন এবং গভীর প্রীতির সম্পর্কে বাঁধতে পেরেছিলেন। আহমদ ছফা মুক্তবুদ্ধির যে চর্চায় আগ্রহী ছিলেন, যেভাবে জীবনকে জ্ঞানসাধনায় উজাড় করে দিতে চেয়েছিলেন সেই অনুভূতি অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে আলোড়িত করেছিল নিঃসন্দেহে এবং তিনি হয়ে উঠেছিলেন ছফার জন্য প্রশ্রয় ও উৎসাহদাতা। এমন নয় যে, আহমদ ছফার সব কাজ তিনি মেনে নিতে পারেন কিন্তু স্নেহসিক্ত হাসি দিয়ে তিনি তো ছফাকে উপভোগ করতে পারতেন, তাঁর সাহচর্যে আনন্দ পেতেন। উভয়ের সম্পর্ক আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক, কিন্তু অন্তঃসলিলা এক ভাববিনিময় সেখানে বহমান ছিল যা উভয়ের জন্য ছিল উপভোগ্য ও আলোকসঞ্চারী। বাংলাদেশের দুটি গ্রন্থ অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা সর্বদা অর্জন করেছে, তার একটি সরদার ফজলুল করিম প্রণিত ‘দর্শনকোষ’ এবং অপরটি আহমদ ছফা অনূদিত গ্যেটের ‘ফাউষ্ট’। এ দুই গ্রন্থেই বহুমাত্রিক তাৎপর্য খুঁজে পেয়েছিলেন অধ্যাপক মহোদয়, প্রথমত উভয় গ্রন্থই মানবের জ্ঞানসাধনার সঙ্গে বাঙালিকে বাংলাভাষায় পরিচিত করে তুলেছে, যেটা ছিল আবদুর রাজ্জাকের সবসময়ের অন্বিষ্ট, সেইসঙ্গে ভাষার দিগন্ত প্রসারে গ্রন্থদ্বয় বড় অবদান রেখেছে। মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞান-সাধনার বিকাশে সর্বজনের অধিকার কায়েমের স্বপ্ন বহন করছিলেন অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এবং সেই স্বপ্নের প্রতীকী উদ্ভাসন তিনি দেখতে পেয়েছিলেন এই দুই গ্রন্থে।<br /><br />অনাত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তা গড়তে আহমদ ছফা সদা ছিলেন উদগ্রীব, কত না পরিবারের তিনি আপনজন হয়ে থেকেছেন, কতজনকেই না নিজের আপনজন করে নিয়েছেন। নিজের বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণায় তিনি কঠোরভাবে সিদ্ধাচারী, কিন্তু বিপরীত চিন্তার মানুষদের আপন করে নিতে তাঁর মধ্যে কোনো দ্বিধা ছিল না। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার পঙক্তি ধার করে বলতে হয়, তাঁর অঙ্গভঙ্গি কেদার রায়ের হলেও অন্তরে এক স্নেহকাতর মানস তিনি বহন করেছেন যা বহিরঙ্গের সঙ্গে একেবারে বেমানান।<br />সারাজীবন ঠাঁই বদল করে চলেছেন আহমদ ছফা, কী পেশা কী আবাস কোনো কিছুতেই স্থিতি খুঁজে পাননি তিনি, অথচ তাঁর এমন কোনো উচ্চ বাসনা ছিল না। বিত্তকে তিনি কখনোই বিশেষ মূল্য দেননি, বিত্ত আহরণের নানারকম সুযোগ তাঁর জীবনে এসেছিল, কখনোই তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি। লিবিয়ার দূতাবাসের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি মুয়াম্মার গাদ্দাফির উচ্চকণ্ঠ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতায় মুগ্ধ হয়ে। তেল-সম্পদের বদৌলতে হঠাৎ-ধনী আরব দেশগুলো তখন মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনুগতজন তৈরিতে দেদার টাকা ঢালছে, পর্দার আড়ালে চলছে আরো নানা খেলা। এ যোগাযোগ আহমদ ছফা নিজ চিন্তাদর্শনের অনুকূল হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন, সেই সুবাদে কিছু লোকের একটা হিল্লে করার ব্যবস্থাও করেছিলেন। তাঁর দিক থেকে এক্ষেত্রে আর কোনোরকম স্বার্থ জড়িত ছিল না, তবে বিষয়বুদ্ধি প্রখর হলে এবং চাইলে এমন যোগাযোগ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আহমদ ছফা, তাঁর জীবনের বহমানতা নিয়ে, এখানেও বেশিদিন স্থিত হননি। জার্মানদের বিশেষ মনোযোগ পেয়েছিলেন তিনি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাও, সেই সূত্রে ‘বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি’র তিনি ছিলেন অলিখিত প্রধান। তাঁর একটি টেলিফোনেও সেখানে অনেক কাজ হয়, অনেকের অনেক ধরনের উপকার করতে এ যোগাযোগকে তিনি অকাতরে ব্যবহার করেছেন। আমিও অযাচিতভাবে তাঁর ভালোবাসায় বরিত হয়েছি এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে বইমেলায় যোগ দিতে আমাকে সহায়তা জোগাতে নিজে আমার অফিসে এসে প্রস্তাব রেখে যান এবং তা কার্যকর হতে বিশেষ সময় লাগেনি। যুৎসই একটা এনজিও দাঁড় করাতে পারলে সুশীল সমাজের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশের শিক্ষিত নাগরিকজনের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে! কিন্তু এ সম্প্রীতির বৃত্তেও আহমদ ছফা বেশিদিন বিচরণ করেননি, অকুণ্ঠচিত্তে সব ঠেলেঠুলে তিনি বের হয়ে এসেছেন তাঁর সেই আত্মভোলা জীবনপথে।<br />আপাতভাবে ভেসে বেড়ানো মনে হলেও আসলে আহমদ ছফা চেয়েছিলেন স্থিত হতে, জ্ঞানচর্চায় নিবেদিত থাকতে এবং সেই চর্চাকে জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সমষ্টির কল্যাণে অবদান রাখতে। অ্যাকটিভিষ্ট মানুষ হিসেবে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হাতে চলবেন পথ, এই ছিল তাঁর আকাঙ্ক্ষা। তাঁর সমস্ত যোগ্যতা সত্ত্বেও এই আকাঙ্ক্ষাপূরণে কোনো সহায়ক ভূমিকা সমাজ পালন করেনি। আমাদের জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠানগুলো এতই বিধিবদ্ধ ও কূপমণ্ডুক হয়ে পড়েছে যে সেখানে আহমদ ছফার মতো ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ অপাঙ্ক্তেয় হয়ে থাকতে হয়েছে, অপ্রাতিষ্ঠানিকতার কোনো স্বীকৃতি সেখানে কখনো জোটেনি।<br />আহমদ ছফার যৌবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এতটা কাঠামোবদ্ধ ছিল না। আহমদ ছফা বিদ্যাচর্চার বলয়ের সদস্য, এই পরিচয় অনেক মূল্য বহন করত। আনুষ্ঠানিকভাবে একটা গবেষণা-বৃত্তি তিনি গ্রহণ করেছিলেন, তারপর বছরের পর বছর থেকেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসে। তাঁর এ অবস্থান নিজের জন্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নবীন শিক্ষকদের জন্য যে ফলপ্রসূ হয়েছে সেটা আমরা অনুমান করতে পারি। আহমদ ছফাও তাঁর এ বিদ্যাপীঠের জীবন উপভোগ করছিলেন এবং স্বাধীন-জ্ঞানচর্চায় নিবেদিত থাকতে অনুকূল পরিবেশ খুঁজে পেয়েছিলেন। কিন্তু ছফার জন্য সেই সুযোগও অস্বীকৃত হয়েছিল, তাঁর জ্ঞান সাধনার কোনো স্বীকৃতিও ছিল না।<br /><br />আহমদ ছফার প্রতি সমাজ কোনো দায়িত্ব পালন করেনি, যদিও সমাজের প্রতি দায় মোচনে ছফা জীবন-উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন। ব্যতিক্রমী সাধকদের সম্মান জানাতে হলে ধরাবাঁধা পথের বাইরে যেতে হয়, যেমন ঘটেছিল ভারতের সুবিখ্যাত জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউর প্রথম সমাবর্তনে অভিনেতা বলরাজ সাহনিকে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর মধ্যে। এ সিদ্ধান্তের অনেক সমালোচনা হয়েছিল, কিন্তু বলরাজ সাহনির অসাধারণ সমাবর্তন ভাষণ সব সমালোচনা স্তব্ধ করে দিয়েছিল। প্রসঙ্গত মনে পড়ে মিশেল ফুকোর পেশাগত জীবনের এক অধ্যায়ের কথা। কলেজ দ্য ফ্রান্স-এ এক বছরের জন্য হিস্টরি অব ফিলসফিক্যাল থটসের চেয়ারে আসীন হয়েছিলেন মিশেল ফুকো। যাঁরা এই সম্মানে অধিষ্ঠিত হবেন তাদের এক বছর কোনো ক্লাস নিতে হবে না, বরং প্রত্যাশা করা হয় তাঁরা কোনো মৌলিক বিষয়ে জ্ঞানচর্চায় নিবিদ্ধ থাকবেন এবং এ গবেষণার বিষয় কয়েকটি সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবেন। বছরে ২৬ ঘণ্টা সেমিনারে লেকচার দেওয়া ছাড়া সম্মানীয় চেয়ারে অধিষ্ঠিত বিদ্বৎজনের আর কোনো দায় নেই। কলেজ দ্য ফ্রান্সে আয়োজিত এমনি সেমিনারে যে-কেউ শ্রোতা হিসেবে অংশ নিতে পারেন, কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতার অবকাশ এখানে নেই। তো ১৯৭৬ সালে মিশেল ফুকো এমনি যে কয়েকটি বক্তৃতা প্রদান করেছিলেন অসাধারণ সেই ভাষ্য পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ পেয়েছে ‘সোসাইটি মাস্ট বি ডিফেন্ডেড’ শিরোনামে। স্বভাবতই মনে হবে, এমনি বক্তৃতাদানের জন্য আমাদের সমাজে আহমদ ছফা ছিলেন একান্ত যোগ্য ব্যক্তি, মৌলিক চিন্তার অধিকারী ছিলেন তিনি, তেমনি ছিলেন মানুষ হিসেবে মৌলিক।<br />তবে এসব মানুষকে আমরা চিনি না, আমাদের কাছে তাঁরা ম্যাভরিক, পোশাকি ভাষায় বলি ব্যতিক্রমী, আমাদের প্রচলিত মাপকাঠির বাইরের এমনি এক মানুষ ছিলেন আহমদ ছফা, তাঁদের জন্য সমাজের দিক থেকে প্রচলভাঙা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল, কিন্তু সমাজ সে কথা কখনো ভাবতে পারেনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য, আহমদ ছফার নয়।</blockquote><br /></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com2tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-16236127947995258312008-06-29T22:46:00.007+06:002008-08-29T16:46:43.641+06:00বিশ্বায়ন সম্পর্কে কার্লোস ফুয়েন্তেসগত ২৪ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে সান দিয়েগোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যানডেভিল অডিটোরিয়ামে 'গ্লোবালাইজেশন: এ নিউ ডিল ফর এ নিউ এজ' বিষয়ে প্রখ্যাত মেক্সিকান লেখক কার্লোস ফুয়েন্তেস একটি বক্তৃতা দিয়েছে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রবন্ধকার ও লেখক রাজু আলাউদ্দিন সেই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সপরিবারে উপস্থিত ছিলেন। কার্লোস ফুয়েন্তেসকে তিনি তার সম্পাদিত 'মেহিকান মনীষা' বইটি উপহার দিয়েছেন। ফুয়েন্তেস এক বর্ণ বুঝতে পারবেন না, তারপরও তার সংগ্রহে একটি বাংলা বই রাজু আলাউদ্দিনএর সৌজন্যে থেকে গেল এটা বাঙালি হিসেবে আমার কাছে একটা আনন্দ ও গর্বের বিষয়।<br /><br />রাজু আলাউদ্দিন এর <span style="font-weight: bold;">'বিশ্বায়ন সম্পর্কে কার্লোস ফুয়েন্তেস'</span> শীর্ষক লেখাটি বস্তুত একটা ভ্রমণ কাহিনী। তবে রচনাশৈলীর গুণে তা নিছক ভ্রমণলগ হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সমকালীন সাহিত্য, ফুয়েন্তেসের সক্রিয় জীবন, রাজনীতি, ভ্রমণ বর্ণনা, সান দিয়েগো ইউনিভার্সিটির বর্ণনা প্রভৃতি বিষয়ে রাজু আলাউদ্দিনের সরস ও বিস্তারিত বর্ণনা একটি নিবন্ধ পাঠের অনুভূতি এনে দেয়। লেখাটি পাঠ করতে করতে মনে হল এর কিছু অংশ বারবার পড়ার মত। অংশটুকু নিচে পুন:প্রকাশ করলাম। রাজু আলাউদ্দিন এর লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে সমকাল এর ২৭ জুন ২০০৮ সংখ্যার <span style="font-weight: bold;">কালের খেয়া</span>তে।<br /><br /><span id="fullpost"><br /><div style="text-align: center;"><span style="font-weight: bold;"></span></div><blockquote><div style="text-align: center;"><span style="font-weight: bold;">বিশ্বায়ন সম্পর্কে কার্লোস ফুয়েন্তেস</span><br /><span style="font-weight: bold;">রাজু আলাউদ্দিন</span><br /></div><br />ফুয়েন্তেসের মতে, ‘বিশ্বায়ন’ ধারণাটি সাম্প্রতিককালের। ২০ শতকের সর্বশেষ ধারণা হিসেবে এর জন্ম হলেও এর বিস্তৃতি আজকের একুশ শতকে। বিশ্বায়ন আসলে কী? ফুয়েন্তেসের মতে, এটি ক্ষমতারই এক কাঠামো (Power System)। অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত দেশগুলোর জন্য এ বিশ্বায়ন নামক দানবীয় ধারণাটি হয়ে উঠতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ, যদি তাকে অনুন্নত দেশের অর্থনীতি বিকাশের অনুকূলে গ্রহণ না করা হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলছেন, মুক্তবাজার এবং প্রতিযোগিতাপ্রবণ করপোরেশনগুলো ছোট এবং মাঝারি আয়তনের শিল্প-কারখানাগুলোকে গিলে খেয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান এবং বেতন সংকট তৈরি করবে। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নে এক বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আখেরে তা কেবল ধনী এবং গরিবের মধ্যে দূরত্বকে ক্রমেই প্রসারিত করবে। আর একথা তো আমরা সবাই জানি যে, বিশ্বায়নের ধারণাটি এসেছে উন্নত দেশগুলোর মাথা থেকে। তারা মানবজাতির মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ না করে যখন বিশ্বায়নের পক্ষে ওকালতি করে তখন সেটা করে নিতান্তই তাদের অর্থনৈতিক বিকাশকে এক দানবীয় রূপ দেওয়ার জন্যই। এর পেছনে আদৌ কোনো সদিচ্ছা আছে কি-না তা নিয়ে গভীর সন্দেহ পোষণ করা যেতে পারে, যদি আমরা ফুয়েন্তেসের দেওয়া এ তথ্যগুলো মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করি : উন্নয়নশীল দেশগুলোর মৌলিক শিক্ষা-চাহিদা পূরণের জন্য ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারই যথেষ্ট, অন্যদিকে কেবল আমেরিকাতেই সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় প্রসাধন সামগ্রীর পেছনে। এটা কী করে মেনে নেওয়া সম্ভব?<br /><br />আজকের পৃথিবীতে, গরিব দেশগুলোর খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং পানি সমস্যা সমাধানের জন্য তের বিলিয়ন মার্কিন ডলারই যথেষ্ট। অন্যদিকে কেবল ইউরোপে সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় আইসক্রিমের পেছনে। এও কি গ্রহণযোগ্য? ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ফেদেরিকো মাইয়র এবং বিশ্বব্যাংকের (সাবেক) পরিচালক জেমস উলফেনসনের পক্ষে ‘এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব, যে পৃথিবী অস্ত্রের পেছনে বছরে আনুমানিক ৮০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারে সে কি-না প্রতিটি শিশুকে স্কুলে শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার জোগাড় করতে পারে না।’ বিশ্বব্যাপী সামরিক খাতে ব্যয়ের মাত্র এক শতাংশ অর্থ দিয়ে পৃথিবীর প্রত্যেক শিশুকে ব্লাকবোর্ডের সামনে দাঁড় করানো সম্ভব।<br /><br />তবে এও সত্য যে, উন্নত দেশগুলোর অপকর্মের খতিয়ান এবং পরিসংখ্যান হাজির করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বিশ্বায়নকে ইতিবাচক করতে হলে আমাদের করণীয় আছে অনেক কিছু। চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তীয় অঞ্চলের দেশগুলোর যদি স্থানীয় সরকার, পাবলিক সেক্টর, প্রশাসন ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে বিশ্বায়ন কোনো সুফল বয়ে আনতে পারবে না। স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি এবং স্থিতিশীল অর্থনীতি বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রবণতাকে ইতিবাচক প্রবণতায় রূপান্তরিত করা সম্ভব।<br /><br />বিল ক্লিনটনের বক্তৃতা থেকে একটি উদ্ধৃতি ফুয়েন্তেস জানিয়েছেন, ১৯৯৩ সালে ক্লিনটন যখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন তখন বিশ্বব্যাপী ওয়েবসাইটের সংখ্যা ছিল মাত্র পঞ্চাশটি। আর আট বছর পর তিনি যখন ক্ষমতা ত্যাগ করেন ততদিনে ওয়েবসাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫০ মিলিয়ন এবং তা ক্রমেই বাড়ছে দ্রুতগতিতে। অতএব প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং কম্পিউটার কি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারবে? সরকার যদি এগুলোকে গণমুখী কর্মকাণ্ডে পরিচালিত করতে পারে তাহলে সম্ভব। মোটামুটি এই-ই ছিল বিশ্বায়ন সম্পর্কে ফুয়েন্তেসের বক্তৃতার সারসংক্ষেপ। বক্তৃতা শেষে শুরু হলো প্রশ্ন-উত্তরের পালা। দর্শক-শ্রোতাদের মধ্য থেকে উৎসাহী সাত-আটজন সাধারণ কিছু প্রশ্নবাণে আক্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন ফুয়েন্তেসকে। বিপুল পাণ্ডিত্য আর প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিয়ে সেসব প্রশ্ন তিনি মোকাবেলা করেছেন সাবলীলতার সঙ্গে।</blockquote><br /></span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-7440054502095821182008-06-29T22:32:00.008+06:002008-08-29T16:49:52.803+06:00শিক্ষক : গুরু থেকে পেশাজীবী২২ জুন ২০০৮ এর সমকাল পত্রিকায় শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বিষয়ে কাজী ফারুক আহমেদ এর একটি প্রয়োজনীয় প্রবন্ধ পড়লাম। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে শিক্ষকতার মান, শিক্ষকদের সমস্যা, সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ প্রবন্ধটিতে রয়েছে। আমার মনে হল লেখাটি বারবার পাঠ করার মতো একটি রচনা। তাই সমকাল পত্রিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকারপূর্বক লেখাটি এখানে প্রকাশ করলাম।<br /><div style="text-align: center;"><span style="font-weight: bold;"></span></div><blockquote><div style="text-align: center;"><span style="font-weight: bold;">শিক্ষক : গুরু থেকে পেশাজীবী</span><br /><br /><span style="font-weight: bold;">প্রাইভেট টিউশনি</span><br /><span style="font-weight: bold;">কাজী ফারুক আহমেদ</span><br /></div><br />শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি নিয়ে আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিরূপ সমালোচনা চলে আসছে। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত যতগুলো শিক্ষা কমিশন হয়েছে, তার প্রায় প্রত্যেকটিতে একই ভাষায় এর বিরোধিতা করা হয়েছে। তারপরও সরকারি-বেসরকারি স্কুলল-কলেজের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ হয়নি। এখানে বলে রাখা ভালো, অনেকেই শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং সেন্টারে ছাত্র ভর্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ছাত্রছাত্রীদের ‘গ্যারান্টি দিয়ে চুক্তিভিত্তিক’ ছকে বাঁধা পাঠদানকে এক করে দেখেন; যদিও এ দুয়ের মধ্যে মিল ও অমিল দুটিই আছে।<br /><br /><span style="font-weight: bold;">কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ১৯৭৪-এ বলা হয় :</span> ‘জীবন ধারণের প্রয়োজন মেটাবার জন্য শিক্ষকদের অনেককে প্রাইভেট টিউশনি করতে হয়। এর ফলে একটা দুষ্টচক্র গড়ে ওঠে এবং নিন্ম বেতনভুক মানুষকে স্বল্প কাজ, এমনকি অসদুপায় এবং পরিণামে জনগণের অশ্রদ্ধা প্রভৃতির দিকে পরিচালিত করে। বলাবাহুল্য, এ অবস্থায় শিক্ষকদের কাছে উন্নতমানের শিক্ষাদান প্রত্যাশা করা কঠিন। ফলে শিক্ষার মান অবনমিত হয় এবং সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জনচক্ষে হেয় হয়ে পড়ে।’<br /><br /><span id="fullpost"><br /><span style="font-weight: bold;">জাতীয় শিক্ষা কমিশন ২০০৩-এর প্রতিবেদনে আছে :</span> ‘শিক্ষকদের কাছে সমাজের চাহিদা অনেক। তবে তাদের বেতনভাতাদি অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত সমযোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের তুলনায় কম। সচ্ছল জীবনযাপনের তাগিদে অনেক শিক্ষক এখন নিজেদের দায়িত্বের প্রতি কম মনোযোগী হয়ে প্রাইভেট টিউশন এবং কোচিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। অনেক অভিভাবক নিজেদের সন্তান-সন্ততির ভালো ফল লাভের উদ্দেশ্যে একাধিক গৃহশিক্ষক নিয়োজিত করছেন। এর ফলে হচ্ছে এই যে, শিক্ষা এখন পণ্যে পরিণত হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে হয়তো কোনো কোনো শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রী এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে... বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে।’<br /><br /><span style="font-weight: bold;">এডুকেশন ওয়াচের ২০০৭-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে :</span> ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় সরকারি কোষাগার থেকে অর্থায়ন উল্পুয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় কম। শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থায়নের অপ্রতুলতা পূরণ হয় অভিভাবকদের অর্থে। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে তা ৫৯ শতাংশ, আর মাধ্যমিক স্তরে ৭১ শতাংশ। গৃহশিক্ষকের পেছনে ব্যয় সর্বোচ্চ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৩ শতাংশ ছাত্রের এবং বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর জন্য গৃহশিক্ষক রাখতে হয়েছে।’<br /><br />আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও আইএলও বিধান মোতাবেক একজন শ্রমজীবী-পেশাজীবীর বেতনভাতা এমন হওয়া উচিত যাতে তাকে বাড়তি বা খণ্ডকালীন পেশা গ্রহণ করতে না হয়। বাংলাদেশে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিতদের বেলায় সরকারের নীতিতে যে এর প্রতিফলন নেই, তা আজ অত্যন্ত স্পষ্ট। বেতনভাতা, মানসম্মান কোনোটাই আকর্ষণীয় না হওয়ায় শিক্ষকদের পেশা ত্যাগ অথবা পেশা পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত সেজন্যই সবচেয়ে বেশি। প্রধানত, যেসব কারণে এবং বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে একজন শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ে এবং অভিভাবকও সেজন্য অর্থ ব্যয় করেন, তা হলো : ১. শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানকালে শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে তাল মেলাতে অপারগতা; ২. নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বা সূচি শিক্ষার্থীর কাছে দুর্বোধ্য ও অবোধগম্য মনে হওয়া; ৩. শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি; ৪. নির্ধারিত বিষয় বা পাঠ্যক্রমে আকর্ষণীয়ভাবে ও দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপনে শিক্ষকের অক্ষমতা; ৫. পরীক্ষা, বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল লাভে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের অতি আগ্রহ।<br />আমাদের দেশে সব বিষয়ের শিক্ষকের প্রাইভেট টিউটর হিসেবে চাহিদা নেই। তাছাড়া শুধু সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকই প্রাইভেট পড়ান না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও পড়ার খরচ জোগাড় করতে প্রাইভেট টিউশনি করে থাকেন। আজকাল ছাত্রীদেরও বাসায় গিয়ে টিউশনি করতে দেখা যায়। বর্তমানে বেকারত্ব ঘোচাতে কম ঝামেলা ও ঝুঁকিমুক্ত প্রাইভেট টিউশনিকে কেউ কেউ পেশা হিসেবেও গ্রহণ করছেন। ঢাকা মহানগর ও বিভাগীয় শহর ছাড়া বেশ কিছু জেলা শহরেও কিছু কিছু বিষয়ে প্রাইভেট টিউটরের কদর আছে। ইংরেজি, অঙ্ক ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একচেটিয়া প্রাধান্য। প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়লে প্র্যাকটিক্যালে ভালো নম্বর পাওয়া যায়- এমন অভিযোগও বেশ পুরনো। কিন্তু বিশেষ করে ঢাকা মহানগরে একশ্রেণীর অভিভাবককে সন্তানদের পালা করে সব বিষয়ের প্রাইভেট টিউটরের কাছে পাঠাতে দেখা যায়। যাদের পয়সা বেশি, তারা বাড়িতেই প্রাইভেট টিউটরের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু যেসব প্রাইভেট টিউটর বাসাবাড়িতে গিয়ে না পড়িয়ে নিজের বাসায় ব্যাচ খুলে প্রাইভেট পড়ান, অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের চাহিদা পূরণে সেখানেই ছুটে যান। প্রাইভেট টিউটরদের আয়-রোজগার বড় বড় শহরে ভালোই। প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ স্কুল-কলেজের বেতন থেকে কয়েকগুণ বেশি তো বটেই! গাজীপুরের কালিয়াকৈরের শিক্ষক সতীশ চন্দ্র সরকার বেসরকারি শিক্ষকদের টিউশনি নিয়ে ১৭ মার্চ দৈনিক সমকালে লিখেছেন : ‘প্রাইভেট টিউশনি শিক্ষকদের কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে- এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমি প্রায় ২০ বছর ধরে শিক্ষকতায় আছি। প্রতিদিন ৬টি বিষয়ে পাঠদান করি। বাসা ভাড়া দিই ৪ হাজার টাকা। বাচ্চা ছেলেটির জন্য গুঁড়ো দুধ কিনতে হয় মাসে ৩ হাজার টাকার। বেতনের ওপর নির্ভর করে কোনোভাবেই চলা সম্ভব নয়। কাজেই শখের বশে নয়, ধনী হওয়া বা উচ্চাশা নিয়েও নয়, শুধু বর্তমান প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রাইভেট টিউশনির দিকে ঝুঁকতে হয়। পার্শ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট টিউশনি নিষিদ্ধ। সেখানে প্রত্যেক শিক্ষক নিয়োগের সময় প্রাইভেট টিউশনি না করার অঙ্গীকারনামায় সই করে থাকেন। কারণ একটাই, পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ভারতীয় মুদ্রায় ন্যূনতম ১৫ হাজার টাকা।<br /><br />পরিবার-পরিজন নিয়ে সম্মানজনকভাবে জীবনযাপনের একটা নিশ্চয়তা পেলে এ দেশেও শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। আইন করে প্রজ্ঞাপন জারির মারফত একটা অসন্তুষ্টি আর অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে না।’<br /><br />দেশ অথবা বিদেশ যেখানেই প্রচলিত থাকুক, শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি শিক্ষকতার মর্যাদার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদের দেশে তা শিক্ষাব্যবস্থা ও পরীক্ষাপদ্ধতির অন্তর্নিহিত বিচ্যুতির বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষাকে মানব উন্নয়নের সোপান বিবেচনায় ও যুগোপযোগীকরণে ব্যর্থতা, অর্থ ও মানবসম্পদের বিশাল অপচয় এবং শিক্ষাদানে নিয়োজিতদের প্রতি উপেক্ষাসূচক দৃষ্টিভঙ্গির করুণ পরিণতি। দেশের স্বার্থেই এ অবস্থার আশু অবসান প্রয়োজন। শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ও গ্রহণই যেখানে কাম্য, সেখানে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষকের নিজ গৃহে পাঠদান অথবা বিত্তশালীর গৃহে গিয়ে ‘জ্ঞান বিতরণ’ কোনোটাই সমর্থনযোগ্য নয়।<br /><br />প্রতিকারের লক্ষ্যে ৭টি প্রস্তাব : শিক্ষকের প্রাইভেট টিউশনি তথা শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান নৈরাজ্যের একটি বিশেষ দিকের অবসানকল্পে জরুরিভাবে নিম্নোক্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় : ১. স্বচ্ছ পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের ইউনেস্কো-আইএলও সুপারিশ মোতাবেক সমাজে শিক্ষকতা পেশার গুরুত্ব ও মর্যাদা তুলে ধরতে সক্ষম এমন বেতনভাতা প্রদান এবং সমযোগ্যতাসম্পন্ন, অপরাপর পেশায় নিয়োজিতদের সঙ্গে তুলনায় শিক্ষকের বেতন অধিকতর সমতাযুক্তভাবে নির্ধারণ; ২. শিক্ষক সংগঠনগুলো ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে শিক্ষকদের জন্য তাদের পেশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ; ৩. পাঠদান পদ্ধতির অব্যাহত উন্নয়ন; ৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রবর্তন, পরীক্ষাপদ্ধতির যুগোপযোগী সংস্কার ও পাবলিক পরীক্ষার ক্রমান্বয়ে বিলোপের উদ্যোগ গ্রহণ; ৫. শিক্ষকদের পাঠদান পর্যবেক্ষণ ও প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক মান উন্নীতকরণের লক্ষ্যে একটি প্রতিষ্ঠানে আকস্মিক একাডেমিক পরিদর্শন; ৬. শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের প্রশিক্ষণের কর্মসূচি গ্রহণ; ৭. শিক্ষকদের গবেষণাকর্মে উৎসাহিত করতে বিশেষ বৃত্তি প্রদান।<br /><br />শিক্ষকতাকে অনেক মহান ব্রত মনে করলেও সময়ের বিবর্তনে আজ তা এক ভিন্নধর্মী পেশা। যেখানে শুধু ত্যাগ নয়, ভোগের স্পৃহাও উপস্থিত। শিক্ষকের সমান যোগ্যতার অধিকারী অন্য পেশার কারো থেকেই অর্থে, মর্যাদায়, পোশাক-পরিচ্ছদে তার (শিক্ষকের) স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ পরিবারের সদস্যরা তাকে পেছনে দেখতে রাজি নন! নিজেরাও কারো কাছ থেকে এক পা পেছনে থাকতে রাজি নন। বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধের যে পরিবর্তন হয়েছে, শিক্ষক বা তার পরিবারও তার বাইরে নয়! যে বিবেচনায় শিক্ষক আর পুরনো দিনের ‘গুরু’ নন, পেশাজীবী। শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি করার বাস্তব কারণগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন করে শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করে প্রাপ্য মর্যাদার যথাযথ স্থানে বসানো সেজন্যই আজ বড় জরুরি। সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধি করা দরকার যে, অনাহার-অর্ধাহারক্লিষ্ট শিক্ষক দিয়ে আর যাই হোক শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। তার মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ না করে শুধু তত্ত্বকথা, উপদেশ-নির্দেশ দিয়ে কোনো কাজ হবে না!<br />principalqfahmed@yahoo.com<br /><br />লেখক : বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও চেয়ারম্যান, ‘মানব-উন্নয়ন উদ্যোগ’</span></blockquote>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-92044795482662269932008-06-27T23:25:00.005+06:002008-08-29T16:52:02.729+06:00সনাতন হিন্দুধর্মে ঈশ্বরতত্ত্ব<div style="text-align: center;"><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjstJg24bgbtoihwjg-bl0j5BYrRddDnJO-gOfilRSBeb-XORq6GDjfNujb9x8NaHvDlSbm7ppNXSieN6XpPquVQZTdxCMp8tHseYJr5bKjdMF5z662eFSFh6xQ5I3-AuaO21C3-d1ZUqE/s1600-h/iswartatya.jpg"><img style="margin: 0pt 10px 10px 0pt; float: left; cursor: pointer;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjstJg24bgbtoihwjg-bl0j5BYrRddDnJO-gOfilRSBeb-XORq6GDjfNujb9x8NaHvDlSbm7ppNXSieN6XpPquVQZTdxCMp8tHseYJr5bKjdMF5z662eFSFh6xQ5I3-AuaO21C3-d1ZUqE/s200/iswartatya.jpg" alt="" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5216812152175678578" border="0" /></a><span style="font-weight: bold;">সনাতন হিন্দুধর্মে ঈশ্বরতত্ত্ব</span><br /><span style="font-weight: bold;">ভবেশ রায়</span><br /></div><br />হিন্দুধর্মে ঈশ্বরের রূপ কেমন? ঈশ্বরকে কিভাবে লাভ করা সম্ভব? ঈশ্বরের উপলব্ধি, ভালবাসা, জীবনে ঈশ্বরের ভূমিক, ঈশ্বরানুভব প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বেশ কিছু প্রবন্ধ আলোচ্য গ্রন্থটির মূল অংশ। লেখক মূলত: একাধিক লেখকের লেখা সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছে। এ কথা 'সম্পাদকের কথা' শীর্ষক অংশে সম্পাদক স্বীকার করেছেন। মূল লেখকেরা অনেক সময় নিজেদের নাম প্রকাশে আগ্রহী ছিলেন না। তাই সম্পাদকও তাদের নাম উল্লেখ করেননি। তিনি লেখাগুলোকে সংকলন করেছেন, সাজিয়েছেন এবং গ্রন্থবদ্ধ রূপ দিয়েছেন। অন্যান্য ধর্মের দৃষ্টিতে বা বিচারে সনাতন ধর্ম যেমনই হোক না কেন, সনাতন ধর্ম যে চেতনা বা উপলব্ধি বা অর্থকে ধারণ করে তা ভিন্নরূপ। সনাতন ধর্ম যে 'ধর্ম' অনুভবকে প্রস্তাব করে তাকে Religion শব্দের সীমানায় খুঁজে পাওয়া কিছুটা দুষ্কর। কারণ সনাতন ধর্মের ইংরেজি প্রতিরূপ Religion নয়। একটি মাত্র শব্দে সনাতন ধর্মকে রূপদান সম্ভব নয়। কারণ সংস্কৃত 'ধর্ম' শব্দটির অর্থ অনেক ব্যাপক। শুধুমাত্র কিছু ধর্মানুষ্ঠান বা নীতিনিয়ম বা শাসনব্যবস্থার দলিল সনাতন ধর্মের উপজীব্য নয়। এখানে ধর্ম অর্থ যা ধারণ করে। কি ধারণ করে? যা মানুষকে ধারণ করে। অন্যান্য ধর্মে যেমন মানুষ নিজে ধর্মগুলোকে ধারণ করে। ধর্মের সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা দায়ভার মানুষের ঘাড়ে বর্তায়, সনাতন ধর্ম তেমন নয়। এখানে মানুষ ধর্মকে নয়, ধর্ম মানুষকে ধারণ করে। সনাতন অর্থ ধ্রুপদী Classic। যা ছিল, যা আছে ও যা থাকবে। মানুষের কি এমন কিছু আছে? হ্যাঁ, আছে। মনুষ্যত্ব।<br /><br /><span id="fullpost"><br /><br />মানুষ কি কখনও বলতে পারবে আজ থেকে আমি পাখি হলাম বা আজ থেকে আমি বাঘের মত শিকার করে খাব। নদী কিংবা বাতাস কি বলতে পারবে যে আজ থেকে আমি আর বয়ে যাব না। যদি বয়ে না যায়, তাহলে বলতে হবে সেই নদী মরে গেছে। আগুনের ধর্ম প্রজ্জ্বলন এবং আলো বিতরণ। আগুন কি তার ধর্ম বিসর্জন দিতে পারবে? না, এটা মোটেও সম্ভব নয়। সনাতন ধর্ম সেরকম। অনেকটা জাতিবোধের মত। দু'কলম ইংরেজি শিখলে বা আমেরিকা/ ইউরোপের মত জীবন যাপন করলেই যেমন ইংরেজ হওয়া যায় না, ইংরেজ হিসেবে জন্মগ্রহণ করতে হয়, অনেকটা তেমন। মানুষ তার মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে যেমন কখনও আগুন, জল, বাতাস, পাখি, কীট, প্রাণীর ধর্ম গ্রহণ করতে পারবেনা, সনাতন ধর্মকেও তেমনি বিসর্জন দেয়া যায় না। অজ্ঞরা হয়তো ধর্মানুষ্ঠান পদ্ধতি পাল্টাতে পারে। সেটা সম্ভব। কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। যারা দুর্গাপূজা করে না তারাও যেমন হিন্দু, ঠিক তেমন যারা শুধু কৃষ্ণভক্ত তারাও হিন্দু। স্থূল অর্থের ধর্মানুষ্ঠান পরিবর্তন করলেই মূল ধর্ম থেকে বিচ্যুত হওয়া সম্ভব নয়। এই সনাতন ধর্মে ঈশ্বরের স্বরূপ কেমন, ভগবানকে কিভাবে বুঝতে হবে ইত্যাদি বিবিধ বিষয় আলোচ্য গ্রন্থটির প্রধান বিবেচ্য।<br /><br />সম্পাদকের কথা থেকে কিছু উদ্ধৃত করি:-<br /><blockquote>"সনাতন ধর্মেই প্রথম একেশ্বরবাদের কথা বলা হয়। ঋক্বেদের প্রথম মণ্ডলে (১/১৬৪/৪৬) বলা হয়েছে -'একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি' অর্থাৎ একই ঈশ্বর বহুরূপে প্রকাশমান। আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছর আগেই হিন্দুধর্মীয় দর্শনে একথা স্বীকার করা হয়েছিল। তখনও বিশ্বের অন্যকোন ধর্মীয় মতবাদের জন্মই হয়নি। যদিও পরবর্তীকালে হিন্দু ধর্মে দেব দেবী উপাসনার আবির্ভাব ঘটেছে। কিন্তু হিন্দুধর্মের দেবদেবীগণ কেউ-ই পূর্ণাঙ্গ শক্তির অধিকারী নন। তাঁরা সকলেই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের একক মহাশক্তি নিরাকার ব্রহ্মেরই বিভিন্ন রূপের ও গুণের এক একটি প্রকাশমাত্র। উপনিষদে এই একক ব্রহ্মের কথা আরও পরিষ্কার ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে। এই উপনিষদও বিশ্বের সকল ধর্মগ্রন্থ ও মতাদর্মের মধ্যে প্রাচীনতম। দেবতা মানুষেরই কল্পনায় সেই পরমব্রহ্ম ঈশ্বরের সাকার উপাসনা মাত্র। একজন সাকার মানুষ কখনও নিরাকার কোনো বস্তুর কথা কল্পনা করতে পারে না। তাই সে তার নিজের মতো করে একেক দেবতা রূপে এক ও অদ্বিতীয় পরমব্রহ্মের শক্তির প্রতীক কল্পনা করে নিয়েছে। এরাই হলেন দেবতা। সাকার উপাসনার পদ্ধতি মাত্র। প্রণাম যেখানেই করা হোক তাতে যদি ভক্তি এবং নিষ্ঠা তাকে তবে পরম ব্রহ্মের নিকট গিয়ে পৌঁছোবেই।</blockquote><br /><span style="font-weight: bold;">সূচীপত্র নিম্নরূপ:-</span><br /><blockquote><ul><li>ভগবান কাকে বলে</li><li>ঈশ্বরতত্ত্ব</li><li>পরমাত্মাকে প্রাপ্তি</li><li>ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস</li><li>শ্রীভগবানের করুণা</li><li>ঈশ্বর ইচ্ছা</li><li>ব্রহ্মতত্ত্ব</li><li>ব্রহ্ম বিচার</li><li>ধর্ম কাকে বলে</li><li>ঈশ্বর এবং ধর্ম</li><li>ঈশ্বর এবং সংসার</li><li>প্রত্যক্ষ ভগবদ্-দর্শনের উপায়</li><li>ভগবানের অবতার</li><li>নিরাকার-সাকার তত্ত্ব</li><li>ভক্তি</li><li>ভক্তির অধিকারী</li><li>আচার ও ভাব তত্ত্ব</li><li>ভক্তির সাধন</li><li>ভক্তিমার্গের আলোচনা</li><li>সাধনা ও সিদ্ধি</li><li>উপাসনা</li><li>আত্মার সন্ধান</li><li>কর্ম-রহস্য</li></ul></blockquote>সম্পাদকের শেষ বাক্যটির সাথে আমি একমত। "আমার বিশ্বাস, সুচিন্তিত এই প্রবন্ধগুলো হিন্দুদর্শনে বিশ্বাসী ও শ্রদ্ধাশীলগণকে মনের অনেক অসামান্য প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবেন"।</span>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-48753202289539009752008-06-13T23:03:00.001+06:002008-06-14T14:54:49.133+06:00নার্গিস আছর খানমের সাথে কিছুক্ষণ<p class="MsoNormal"><b><span style="font-family:AdorshoLipi;">মে ২০০৮ সংখ্যার ফুলকুঁড়ি</span></b><span style="font-family:AdorshoLipi;"> পত্রিকায় বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী সম্পর্কে নিম্নোক্ত লেখাগুলো পড়লাম। লেখক <span style="font-weight: bold;">মাহবুবুল হক</span>। প্রবন্ধের নাম <b>নার্গিস আছর খানমের সাথে কিছুক্ষণ</b>। ১৯৮২ সালের লেখক ইংল্যান্ডে গিয়ে নার্গিস আছর খানমের সাথে দেখা করেছিলেন। লেখাটি ছোটদের জন্য হলেও লেখক কিছু নতুন কথা বলেছেন। আমি এই তথ্যগুলো জানতাম না। এজন্য আমার কাছে বিষয়টা অন্যরকম মনে হয়েছে। বাংলাবাজারে নার্গিস আছর খানমের একটি জায়গা ছিল। সেটা 'খোশরোজ কিতাব মহল' এর মালিক মহীউদ্দিনকে তিনি দান করেছিলেন। ৬০ বৎসর থেকে জায়গাটি দলিল ছাড়াই তিনি ভোগদখল করছিলেন। সেটার দলিল করার জন্য লেখকের ইংল্যান্ডে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েছিল। সেই প্রসঙ্গে নার্গিস খানমের সাথে লেখক দেখা করেছিলেন। তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক কিছু মন্তব্য করেছিলেন। এই মন্তব্যগুলোর মধ্যে আমার সংশয়ের জায়গাগুলো উল্লেখ করছি।</span><span style=";font-family:";" ><o:p></o:p></span></p> <p class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;"><blockquote>ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে বসবাস করতেন আমাদের সকলের প্রিয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী নার্গিস আছর খানম। তাঁর সম্পর্কে অনেক কথা আছে, বড় হলে তোমরা জানতে পারবে। আপাতত: এইটুকু জেনে রাখ স্ত্রী হলেও কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাথে সংসার করতে পারেননি। তাঁরা একত্রে বসবাস করতে পারেননি। এসব অনেক বড় ষড়যন্ত্র! অনেক বড় করুণ কাহিনী! যে কাহিনীর জন্য শুধু নজরুল বা নার্গিস ক্ষতিগ্রস্থ হননি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা সবাই। বাংলার মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো।... আমরা কথা বলছিলাম আর ভাবছিলাম কত ভাল হতো যদি কবি নজরুল নার্গিসের সাথে সংসার করতে পারতেন। কী অদম্য স্মৃতিশক্তি নার্গিসের! নার্গিসের চোখে স্মৃতির সাগর যেন ভেসে উঠছে! নীল নীল অতলান্ত সে সাগর! কতো গান! কতো কবিতা! কতো স্মৃতি! নজরুল এমন করলেন কেন? কেন এই মেধাবী, গুণবতি ও মমতাময়ী নারীকে তিনি উপেক্ষা করলেন? কেন এই স্ফটিকসুন্দর হিরা-জহরতকে ফেলে তিনি অন্য সম্প্রদায়ের আর এক নারীকে গ্রহণ করেছিলেন। নার্গিসের ঐশ্বর্য ও বৈভবে যদি নজরুল ভাগিদার হতে পারতেন, তাহলেও তো নজরুল বেঁচে যেতেন। অভাব ও দারিদ্রের মধ্যে তাঁকে জীবন কাটাতে হতো না! অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এবং সন্তান সন্ততির ভরণ-পোষণের জন্য বাধ্য হয়ে বিজাতীয় সঙ্গীত তাঁকে রচনা করতে হতো না। নার্গিস যা যা বলেছেন, সব কথা এখানে বলা যাবে না, তার আধো আধো কথায় আমরা যা বুঝেছি, তাতে কবিনজরুল নিশ্চিতভাবেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন।</blockquote></span><span style=";font-family:";" ><o:p></o:p></span></p> <p class="MsoNormal"><span style=";font-family:";" ><o:p> </o:p></span><span style="font-family:AdorshoLipi;">এই ষড়যন্ত্র কে করেছিল? কি সেই ষড়যন্ত্র এই সব বিবিধ প্রশ্নের উত্তর লেখাটিতে নেই। সম্ভবত শিশুদের পত্রিকা বলেই তিনি আলোচনার গভীরে যাননি। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উদঘাটিত হওয়া দরকার। না হলে আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামকে বরং অবমাননাই করা হবে। তাঁর জীবন সম্পর্কে প্রতিটি সত্যি ঘটনা প্রকাশ্যে আলোচিত হওয়া উচিত। নজরুল নিজে যেমন কোন কিছুর চোখ রাঙানোতে ভয় পেতেন না। কোন নিষেধাজ্ঞাকে প্রশ্রয় দেন নি, ঠিক তেমনি তার জীবনের অজানা অংশগুলোর উন্মুক্ত আলোচনাতেও কোন সংশয় থাকা উচিত নয়।</span><span style=";font-family:";" ><o:p></o:p></span></p>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-63348745491796647982008-06-12T21:00:00.006+06:002008-10-08T23:09:45.053+06:00সূর্যবাদ<a style="font-weight: bold;" onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgLHHTtohAuO-IohI_Q5ggl1rIUGRwepYFgo8PvBmejQA6vIZKERr-C2iJL7XnI_xBGiPFV9_DspsLMo9btUiBcuWLYZAgw3MBblI-ZrZ7XY7EqymrQGMKHJcHPsW5KtIXHyaoknC9ASP8/s1600-h/suryabad.jpg"><img style="margin: 0pt 10px 10px 0pt; float: left; cursor: pointer;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgLHHTtohAuO-IohI_Q5ggl1rIUGRwepYFgo8PvBmejQA6vIZKERr-C2iJL7XnI_xBGiPFV9_DspsLMo9btUiBcuWLYZAgw3MBblI-ZrZ7XY7EqymrQGMKHJcHPsW5KtIXHyaoknC9ASP8/s200/suryabad.jpg" alt="" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5211413793903961538" border="0" /></a><span style="font-weight: bold;">আতোয়ার রহমান</span> রচিত <span style="font-weight: bold;">সূর্যবাদ</span> বইটি বেশ তথ্যবহুল। সৌরজগতের প্রাণ হল সূর্য। সূর্যকে ঘিরেই জীবনের যত উৎসাহ ও আয়োজন। এই পৃথিবী, মঙ্গলগ্রহ, বৃহস্পতিগ্রহ ইত্যাদি গ্রহ সূর্যের অমোঘ বাধনে আটকা পড়ে গেছে। সূর্যের আলোর স্পর্শেই শুরু হয় দিন, আবার সূর্যের পরিভ্রমণের কারণে নেমে আসে রাত। মানুষের ইতিহাসে সূর্যের এক বিশেষ ভূমিকা আছে। শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীতে প্রাণের সূচনা ও বিকাশে সূর্যের রয়েছে প্রধান সক্রিয়তা। সূর্যের যাবতীয় কার্যক্রম বিজ্ঞানের দ্বারা ব্যাখ্যাত হলেও বিজ্ঞানপূর্ব যুগ থেকে সূর্য ছিল মানুষের আগ্রহের অন্যতম বিষয়। সূর্য কি? সূর্য কেন উদিত হয় বা কেন অস্ত যায়, সন্ধ্যা হলে কোথায় ডুব দেয় ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ে মানুষ অনেক আগে থেকেই আগ্রহী ছিল। বিশেষত: মানুষ শিকারী জীবন ত্যাগ করে যখন কৃষিজীবি জীবন যাপন শুরু করল, তখন থেকে সূর্য সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ ও উৎসাহের শুরু হল। উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করে একমাত্র সূর্যের আলোয়। তাই সূর্যের উপর নির্ভর করে কৃষিজীবি সভ্যতার খাদ্যের যোগান। সেজন্য বিশ্বের সভ্যতাগুলো এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সূর্য সম্পর্কে নানারকম মতবাদ ও মনোভঙ্গীর সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় সভ্যতা, চৈনিক সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, গ্রীক সভ্যতা, আজটেক-ইনকা সভ্যতা ইত্যাদি সভ্যতায় সূর্যের ভূমিকা ও চলমানতা নিয়ে নানারকম বক্তব্য আছে। বস্তুত সূর্য সম্পর্কে মানুষ এত বেশি আগ্রহী যে সূর্যকে ঘিরে স্বতন্ত্র ধর্মাচরণের সৃষ্টি হয়ে গেছে।<br /><br /><br />এই সব নানারকম ও নানামুখী ধর্ম ও দর্শন নিয়ে আতোয়ার রহমানের বইয়ের যত আয়োজন। তাঁর গ্রন্থের সূচীপত্র সংক্ষেপে নিম্নরূপ:-<br /><br />১. প্রণতোহস্মি দিবাকরম- বিভিন্ন স্থানে সূর্যদেবতার আবির্ভাব, জীবন-জীবিকার নিয়ন্ত্রক; সূর্যদেবতার প্রথম দেশ: মানুষ ও সূর্যদেবতা<br /><br />২. ইউরোপে সূর্যপূজো- অ্যাপোলো; পশুপালক সমাজ ও সূর্যদেবতা; অ্যাপোলোর রোমযাত্রা; হেলিয়োস; সূর্যের রথ: স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সূর্যপুজো; স্টোনহেঞ্জ, যুক্তরাজ্য<br /><br />৩. উত্তর আমেরিকা: নরভুক সূর্যদেব- টেয়োটিওয়াকান সূর্যদেব; আজটেক সূর্যপুজো; আজটেক পুরাণে সূর্য; টেজকাটলিপোকা; সূর্যদেব টোনাটিয়ু; নরবলি; বিভিন্ন সংস্কৃতির সংঘাত-সংমিশ্রণ<br /><br />৪. মধ্য আমেরিকার ইন্টিপুজো- মায়া-সমাজে সূর্য; ইঙ্কা সূর্যদেব ইন্টি; ব্যক্তিগত জীবনে ইন্টি<br /><br />৫. রাজধর্ম সূর্যবাদ: মিশর-মিশরের বিভিন্ন সূর্যদেব; রা-র জাতীয়তা; রা-র প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী; আমন পুরাণ; আমনের বিদেশ জয়; আটেনের আবির্ভাব: পৃথিবীর প্রথম একেশ্বরবাদ; রাজপ্রাসাদের সূর্যদেব; বাজমুণ্ড রহস্য; টোটেমসংহতি; গুবরেধারী সূর্যদেব খেপরি; হেলিয়োপলিসে রা; থীবিসে রা; সিরিয়ায় রা; সূর্যদেবতার প্রাধান্য; মিশরীয় সংস্কৃতিতে সূর্যবাদ; রাজধর্ম সূর্যবাদ; মিশরীয় সূর্যবাদ ও গ্রিস<br /><br />৬. এশিয়ার নানা সূর্য- সুমেরীয় দেবলোক; মারদুকের আদিকথা; মারদুকপুরাণ; ব্যবিলনীয় সূর্যদেব; ব্যাবিলনে মহামিনার ও মারদুক; আসিরীয় সূর্যবাদ; সিরিয়া ও মধ্য-এশিয়ায় সূর্যপুজো; সূর্যপুজক ইরান; পাকিস্তানে সূর্যবাদ; ভারতের সূর্যকথা; ভবিষ্যপুরাণের সাক্ষ্য; ভারতে সূর্যবাদ আমদানি; ভারতীয় দেবলোকে সূর্যের অবস্থান; মনুর শাসন; ঋগ্বেদের সূর্যদেব; সূর্যদেবতা মিত্র; পূষা; আদিত্যগণ; ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে আদিত্য; রথারোহী সূর্যদেব; সূর্যের বিশ্ব পরিভ্রমণ; ভারতীয় সূর্যদেবের মূর্তি; ব্যক্তিগত জীবনে ভারতীয় সূর্যদেব; ভারতে সূর্যমন্দির; রাজকূলে সূর্যদেব; বহুবিচিত্র সূর্যদেব; দৃশ্যমান সূর্যের ফুজো; বিভিন্ন সূর্যব্রত; নেপাল: সূর্যবাদী স্থাপত্য; বাংলাদেশে সূর্যপুজো; বাংলাদেশের বিভিন্ন সূর্যব্রত; অগ্নিভয় নিবারণের ব্রত; সন্তানকামনার ব্রত; ঘর-বর ও সুখ-সমৃদ্ধি কামনার ব্রত; উপজাতীয় সূর্যপুরো; একটি অর্বাচীন সূর্যবাদ; ঈমানউদ্দিন ক্বারী; 'আদি মুসাই মুসলমানি শরিয়ত'; ঈমানী সূর্যবাদে জীবনাচরণ; উপাসনাবিধি; মরণচাঁদ মুনশী; ভক্তিমূলক গান; ভক্তিগীতির নমুনা; ঈমান-তরিকার গুরুত্ব বিচার; থাইল্যান্ডে সূর্যদেব; সিলমোহরে সূর্যপ্রতীক; ইন্দোনেশিয়ার সূর্যপুজো; মহাচীনে সূর্যবাদ; বহুবিচিত্র সূর্যধারণা; ব্যতিক্রমি সূর্যদেব; দাদু সূর্যদেব; ই-র বাণক্ষেপ; শ্রমিকের সংকল্প; নয় সূর্যের কাহিনী; সূর্যোদয়ের দেশে; সূর্যদেবী আমাতেরাসা; সামোয়ার নরভুক<br /><br />৭. ছদ্মবেশী সূর্যবাদ- অক্ষয়কুমারের মত; মিত্রবাদ; মিত্রবাদীর সাধনা; রোমে মিত্রবাদ; জরথুস্ত্রবাদ; স্রায়োশাপুরাণ<br /><br />৮. অভিজাত ধর্মে অনুপ্রবেশ- বৌদ্ধ ধর্মে সূর্যবাদ; খ্রিস্টধর্মে সূর্যবাদের প্রভাব<br /><br />৯. সূর্যবাদের দান-অপদান- কৃষি ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে সূর্যবাদ; স্থাপত্যে সূর্যবাদ; ভাস্কর্যে সূর্যবাদ; অন্যান্য শিল্পে প্রভাব; শান্তিবাদী একেশ্বর; সূর্যবাদ ও যুদ্ধ; সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে নরবলি; সূর্যবাদ ও শ্রেণীবৈষম্য; সূর্যবাদ ও শোষণ; মোহন্তদের কুকীর্তি; মোহন্ত ফেরাও; সূর্যদেবের নারীভোগ<br /><br />১০. একালের সূর্যবাদ- বাংলা সাহিত্যে নতুন সূর্যবাদ; আশার প্রতীকসুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-59578653431772668282008-05-24T21:16:00.005+06:002008-05-24T21:36:05.268+06:00মিশরে তামিল ব্রাহ্মী লিপির সন্ধান লাভ<div style="text-align: center;"><b><span style="font-family:AdorshoLipi;">মিশরে তামিল ব্রাহ্মী লিপির সন্ধান লাভ</span></b><span style=""></span><br /><span style=""></span></div><p class="MsoNormal"><span style=""> </span><span style="color: rgb(204, 0, 0);font-family:AdorshoLipi;" lang="HI">হরেকৃষ্ণ সমাচার নিউজ হিসেবে মে ২০০৮ সংখ্যায় এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।</span><span style=""><o:p></o:p></span></p> <p class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;"></span></p><blockquote style="font-style: italic;"><span style="font-family:AdorshoLipi;">মিশরে</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">সম্প্রতি এক খননকার্য চলার সময় খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকের তৈরি একটি পাত্রে</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">ভগ্নাবশেষ আবিষ্কৃত হয় যাতে প্রাচীন তামিল ব্রাহ্মী লিপি উৎকীর্ণ ছিল</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">।</span><span style="" lang="HI"> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">লন্ডনে অবস্থিত ব্রিটিশ মিউজিয়ামের মৃৎপাত্র বিশেষজ্ঞ ড: রবার্তো টম্বার</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">এর মতে এই পাত্রটি নির্মিত হয়েছিল ভারতে</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">। </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">তামিল লিপি বিশেষজ্ঞ ইরাবতম</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">মহাদেবন- এর মতে পাত্রটির গায়ে উৎকীর্ণ লিপিটি খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">প্রাচীন তামিল ব্রাহ্মী লিপি</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">। </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">প্রায় ৩০ বছর পূর্বে এই স্থানে পরিচালিত খনন</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">কার্যে এরূপ আরও দুটি নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">। </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">উপরন্তু ১৯৯৫ সালে</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">মিশরের লোহিত সাগরের তীরবর্তী রোমান উপনিবেশ বেরেনিক শহরেও এরূপ নিদর্শনের</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">। </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">এই সমস্ত আবিষ্কার</span><span style="">, </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">এটিই প্রমাণ করে যে হাজার হাজার</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">বছর আগে থেকেই ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে রোমান ঐতিহ্যের বিনিময় ঘটেছিল</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">।</span></blockquote><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;"></span><span style=""><o:p></o:p></span><p></p> <p class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;">খবরটি</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">আকর্ষণীয় ও ইতিহাস পাঠে নতুন করে উৎসাহী করে তোলে</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">। </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">প্রাচীন ভারতের সাথে</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">বহির্বিশ্বের বিভিন্নভাবে যোগাযোগ ছিল এটা নতুন কোন তথ্য নয়</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">।</span><span style="" lang="HI"> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">প্রত্নতাত্ত্বিক বা ইতিহাস সচেতন পাঠকমাত্রই একথা জানেন</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">। </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">আমার জানামতে এর</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">আগে ইটালীর হারকিউলিয়াম ও পম্পেই নগরীতে প্রাপ্ত বিভিন্ন লাশ পরীক্ষা করে</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">দেখা গেছে কারও কারও হাতে ভারতীয় দেবদেবীর প্রতিমা ছিল</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">। </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">বিশেষত পরিচিত</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">একটি প্রতিমা হল লক্ষ্মী</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">। </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">একজন নারী যিনি ভিসুভিয়াসের ছাই ও লাভার নিচে</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">চাপা পরে মারা গেছেন তার হাতে বুকে ধরা অবস্থায় একটি লক্ষ্মীর মূর্তি ছিল</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">।</span><span style="" lang="HI"> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">তিনি লক্ষ্মীপূজা করতেন কি না তা নির্দিষ্ট করে জানা যায় নি</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">। </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">তবে ঐ</span><span style=""> </span><span style="font-family:AdorshoLipi;">লক্ষ্মীমূর্তিটি যে তার কাছে মূল্যবান ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই</span><span lang="HI" style="font-family:AdorshoLipi;">।</span><span style=""><o:p></o:p></span></p>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8054611798603050133.post-6502856807206424242008-05-20T22:33:00.003+06:002008-05-24T21:37:51.434+06:00আমার জীবন<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiyLBw_uYdw5KXg9ByaTlZIUievyupfrdYe5cuIzQQxMy4nyAN52BYq39OFJC1sYK8wGXZdEug_dpfUEIXrroPUaLeai51of_jE56xOI53dpcsXb3w9H7mTdWC2Bidqqf8xNhc-BEjARlc/s1600-h/mrksgl.jpg"><img style="margin: 0px auto 10px; display: block; text-align: center; cursor: pointer;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiyLBw_uYdw5KXg9ByaTlZIUievyupfrdYe5cuIzQQxMy4nyAN52BYq39OFJC1sYK8wGXZdEug_dpfUEIXrroPUaLeai51of_jE56xOI53dpcsXb3w9H7mTdWC2Bidqqf8xNhc-BEjARlc/s200/mrksgl.jpg" alt="" id="BLOGGER_PHOTO_ID_5202499408646478306" border="0" /></a> <p style="text-align: center;" class="MsoNormal"><span style="font-weight: bold;font-family:AdorshoLipi;" >আমার জীবন</span><span style=""><o:p></o:p></span></p><div style="text-align: center;"> </div><p style="text-align: center;" class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;">মূল: মার্ক শাগাল</span><span style=""><o:p></o:p></span></p><div style="text-align: center;"> </div><p style="text-align: center;" class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;">ভাষান্তর: অদিতি ফাল্গুনী</span><span style=""><o:p></o:p></span></p> <p class="MsoNormal"><span style=""><o:p> </o:p></span></p> <p class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;">অনুবাদকের বর্ণনায় বইটির পরিচিতি কিছুটা তুলে ধরা যাক। বইয়ের ফ্লাপ থেকে আলোচনাটি উল্লেখ করছি।<br /></span></p><p class="MsoNormal"><span style="font-style: italic;font-family:AdorshoLipi;" ><blockquote>"বিংশ শতাব্দীর অন্যতম মহান এই চিত্রকর রাশিয়ার ছোট্ট মফস্বল শহর উইটবক্সে (উচ্চারণভেদে ভিটবক্স) জন্মেছিলেন ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে। ঘিঞ্জি ও নিরানন্দ ইহুদি ঘেটোতে। ১৯০৬ সাল হতে ১৯১০ সাল অবধি সেন্টপিটার্সবুর্গে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্কন বিদ্যার হাতেখড়ি ও ক্রমবিকাশমানতা। এই চার বছরের শেষ দুই বছর আবার তিনি কাটিয়েছেন পিটার্সবুর্গে বিখ্যাত বাক্সটের স্কুলে। তবু প্রথামাফিক অংকনের নিশ্চিত প্রতিষ্ঠা ছেড়ে ঝুঁকলেন তাঁর নিজস্ব নিরীক্ষার পথে। ১৯১১ সালে প্যারিসে এসে অর্ফিক কিউবিজমকে প্রকরণ ও গুয়াশকে প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিলেন। ১৯১১ থেকে ১৯১৪ সাল অবধি একশরও বেশি গ্যুয়াশে আঁকেন তিনি। শৈশবস্মৃতি, ইহুদি ধর্মীয়কৃত্য কি গ্রাম দেশের সার্কাস সব কিছু মিলেমিশে এক ভিন্নধর্মী কবিতা। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় রাশিয়া ফিরে বিয়ে করেন কৈশোরের প্রেমিকা বেলাকে। বলশেভিক বিপ্লবের পরও বেশি কিছুকাল পর্যন্ত রাশিয়ায় থাকেন।</blockquote></span><span style=""><o:p></o:p></span></p> <p class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;"></span></p><blockquote style="font-style: italic;"><p class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;">১৯১৯ সালের বিপ্লবোত্তর মস্কো শহরে শাগালের জীবনের এক গভীর অনিশ্চিত সময়ে তিনি তার আত্মজীবনী রচনা শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে বার্লিনে ফিরে অজস্র ছবি আঁকেন ও আত্মজীবনীর সাথে জুড়ে দেন। ফলাফল দাঁড়ায় পাঠককে বিমোহিত করে দেয়া এক সাহিত্যিক দৃশ্যকাব্য যা শাগালের প্রস্তুতিকালীন বছরগুলোরও একটি দলিল। দলিল তার জীবনে রেখাপাত করা সেইসব শৈল্পিক প্রভাবের, যা তার জীবনের মহত্তম মাস্টারপিসসমূহ অঙ্কনে সাহায্য করেছে। স্বভাবসিদ্ধ কৌতুক এবং ওজস্বীতায় তিনি রাশিয়ার এক মফস্বল শহর উইটবক্সে পার করা তাঁর শৈশবের কথা জানিয়েছেন। জানিয়েছেন তাঁর প্রথম তারুণ্যের এডভেঞ্চারসমূহ, হবু স্ত্রী বেলার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ এবং অত:পর রাশিয়া থেকে প্যারিসে এসে বোহেমিয়ান শিল্পীগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। এখানেই তিনি খুঁজে পান পূর্ণতা ও স্বীকৃতি। ১৯১৪ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হলো, শাগাল তার পরিবারসুদ্ধ রাশিয়ায় ফিরলেন, এবং অক্টোবর বিপ্লবের পরে উইটবক্স শহরের 'চারুকলা' বা 'ফাইন আর্টের' কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু শাগালের নব্য ফরাসি রীতি শিল্পকলা কর্তৃপক্ষের কাছে দুর্বোধ্য ও অস্বস্তিকর হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে। ফ্রান্সে ফেরার সিদ্ধান্ত দিয়ে শাগালের এই আত্মজীবনী শেষ হয়। সেখানেই বাকি জীবন কাটান পরিবারসুদ্ধ।</span><span style=""><o:p></o:p></span></p> <p class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;">"না জারের রাশিয়া, না সোভিয়েত রাশিয়া কেউ আমাকে চায় না"- এমতো অভিমানবাক্যে শেষ হয়েছে তার আত্মজীবনী। সত্যিকারের শিল্পী বা লেখকদের এমনতরোই কপাল। কেউ তাদের চায় না।"</span></p></blockquote><p class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;"></span><span style=""><o:p></o:p></span></p> <p class="MsoNormal"><span style="font-family:AdorshoLipi;">মার্ক শাগলের এই আত্মজীবনীটি প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য, প্রকাশকাল: ২০০১, প্রচ্ছদ এঁকেছেন সৈয়দ ইকবাল। </span><span style="">ISBN 984 770 074 8<o:p></o:p></span></p>সুশান্ত বর্মনhttp://www.blogger.com/profile/02304984470756506973noreply@blogger.com2